হজযাত্রায়ও দলীয়করণঃ বাদ রইল কী!

দিনবদলের সরকার সর্বত্র ব্যক্তিবদলে মেতে উঠেছে। উদ্দেশ্য পরিষ্কার। দলীয় লোকজনকে সুযোগ-সুবিধা দেয়া। সচিবালয় থেকে শুরু করে সারাদেশে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবখানেই সরকারি দলের লোকেরা আসর জাঁকিয়ে বসেছে। এর ফলাফল যাই হোক তা নিয়ে আপাতত ক্ষমতাসীনদের মাথাব্যথা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ফলে দলীয়করণ বাঁধভাঙা বানের পানির মতো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।

পবিত্র হজ গমনেচ্ছুরাও রেহাই পাচ্ছে না এর হাত থেকে। এখন হাজীদের গাইড নিয়োগেও দলীয় অনুমোদন চাওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ওলামা লীগের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন কাউকে নিয়োগ দেয়া সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন। গতকালের আমার দেশ এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। প্রতি বছরের মতো এবারও হজ গাইড হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রকৃত আলেম, মাদ্রাসার শিক্ষক এবং মসজিদের ইমাম, খতিব ও মুয়াজ্জিনদের কাছ থেকে দরখাস্ত চাওয়া হয়। জমা পড়া দরখাস্ত বাছাই করে প্রতি ৪৫ জন হজযাত্রীর জন্য একজন হিসেবে প্রায় ২০০ প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেয়া হয়। তাদের খরচ বাবদ প্রতি হজযাত্রীর কাছ থেকে অতিরিক্ত চার হাজার টাকা করে নেয়া হয়। হজ গাইডদের চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দেয়ার সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চাহিদামত প্রত্যেককে ওলামা লীগের সনদ সংগ্রহে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীর রমনা এলাকার একটি মসজিদের জনৈক মুয়াজ্জিন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসবের সত্যতা স্বীকার করেছেন। স্থানীয় ওলামা লীগ নেতারা সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধায় হজ পালনের কথা উল্লেখ করে তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এসময় হজের জন্য প্রত্যেক হাজীর আড়াই লাখ টাকা খরচের কথাও তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। এ সবকিছুর সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততার কথাও জানা গেছে। আওয়ামী মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরই ইসলামিক ফাউন্ডেশনে তৎপর দালাল ও টাউটদের মধ্যে ওলামা লীগের উপস্থিতি জোরদার হয়ে ওঠে। দলীয় ক্ষমতার জোরে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে তারা উঠেপড়ে লাগে। হাজীদের কেন্দ্র করে এ ধরনের বিভিন্ন জটিলতার কারণেই এবার হজ মৌসুম শুরু হতে চললেও সময়মতো হজ ফ্লাইটের সিডিউল ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন কারণে প্রায় ২০ হাজার হজযাত্রী চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। সৌদি আরবে হাজীদের বাড়ি ভাড়ার বিষয়টি এখন পর্যন্তও নিশ্চিত হয়নি। এসব কিছুকে ঘিরে সৃষ্ট ঘোলা পরিস্থিতিতে মাছ শিকারে লিপ্ত হয়েছে সুযোগসন্ধানীরা। এরাই অবাধে দলীয় পরিচয়ে মুফতে ফায়দা লুটছে। সর্বোচ্চ মহলের সমর্থন না থাকলে এরা কীভাবে এতটা সাহসী হয়ে ওঠে, সে প্রশ্ন মোটেই অবান্তর নয়। এভাবে সরকারের সবখানেই যদি দলীয় লোকেরা সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে তবে কোথায়ও নিয়ম-নীতির বালাই থাকবে না। এতে কিছু লোকের দিনবদলে গতিসঞ্চার হলেও দেশের বারোটা বাজতে খুব যে দেরি হবে না, সেটা জনগণের দৃষ্টিতে ক্রমেই পরিষ্কার হয়ে উঠছে। সরকারিভাবে পবিত্র হজ পালনের ক্ষেত্রেও যখন সংশ্লিষ্টরা দলীয়করণমুক্ত থাকতে পারছে না তখন অন্যান্য ক্ষেত্রে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা চোখ-কান খোলা রাখলেই আঁচ করা যায়। এর পরিণতি কী, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

No comments

Powered by Blogger.