প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ-দক্ষতা ও গুণগত মান বিবেচ্য

সামগ্রিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। শতভাগ শিক্ষিত করার সরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলেও অগ্রাধিকার দিতে হবে প্রাথমিক শিক্ষাকে। বাস্তবতা হচ্ছে, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের প্রয়োজনে যেটুকু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, তা নেওয়া হয়নি। ফলে শিক্ষার উন্নয়নের গতি মন্থর হয়ে পড়েছে।


আশার কথা, সেই শূন্যতা পূরণের জন্য বেসরকারি উদ্যোগ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। চিরাচরিত প্রথায় স্থানীয় বিদ্যোৎসাহীরা নিজ উদ্যোগে এবং নিজ অর্থায়নে স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষা সম্প্রসারণে অগ্রণী হয়েছেন। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও অনেক। তাঁরা বছরের পর বছর পিছিয়ে পড়া সমাজের অবহেলিত শিশুদের শিক্ষাদান করে দেশ গড়ার অনন্য উদাহরণ তৈরি করে চলেছেন। সেখানে কালেভদ্রে সরকারি সহযোগিতা থাকলেও তা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না। তার পরও দেশে ২৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে গ্রামাঞ্চলে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লক্ষাধিক শিক্ষক একটি আশায় শিক্ষাদান করে আসছেন, কোনো না কোনো সময় সরকার সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে। কিন্তু তাঁদের সেই আশা পূরণ হয়নি। তাঁরা দুই দশককাল ধরে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন, যাতে শিক্ষকদের চাকরি সরকারি করা হয়। বর্তমান সরকার তাঁদের চাকরি জাতীয়করণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা আগামী জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। নিঃসন্দেহে সরকারের এ উদ্যোগ শিক্ষা খাতে অগ্রগতি বয়ে আনবে। আজ সাক্ষরতা দিবসে তাই সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রত্যাশা করছি।
শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি পূরণ হলে কি শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে? নিবন্ধিত এসব প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান এখানে সংগত কারণেই বিচার্য। তাই জাতীয়করণের আগে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শিক্ষকদের যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রশ্নটি সামনে আনতে হবে। নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমনও আছে, যেখানে হয়তো কোনো শিক্ষার্থীই নেই। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান শূন্য ফলাফল নিয়েও বছরের পর বছর টিকে আছে। ফলে জাতীয়করণের প্রাক্কালে দেখতে হবে, এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন সরকারি কোনো অর্থসুবিধা না পায়। তাদের নিরাশ না করে এবং তাদের চিহ্নিত করে অফিস নির্দেশের মাধ্যমে সময় বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। তাহলে আন্দোলনকারীদের মধ্যে সাময়িক অসন্তোষ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
বেসরকারিভাবে এসব প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির পেছনে মূলত স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের পৃষ্ঠপোষকতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করে থাকে। যেহেতু ব্যক্তি ও স্থানীয় উদ্যোগে এসব প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়েছে, তাই সরকারি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে সেখানে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। যে কারণে শিক্ষকদের বড় একটি অংশই শিক্ষাদানে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালনে সমর্থ নন। সুতরাং এ মুহূর্তে যদি ঢালাও জাতীয়করণ হয়, তাহলে সেসব প্রতিষ্ঠান সরকারের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে- এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। তাই এ মুহূর্তে দিকনির্দেশনা তৈরি হওয়া উচিত, যাতে ঢালাওভাবে অদক্ষ কোনো শিক্ষক এসব প্রতিষ্ঠানে না থাকেন। জাতীয়করণের প্রাক্কালে সেসব দিক খেয়াল করতে হবে, যাতে সরকারের প্রশংসনীয় এই উদ্যোগ ধুলায় মিশে না যায়।

No comments

Powered by Blogger.