কিন্ডারগার্টেনসহ স্বীকৃত সব স্কুলই পাবে বিনামূল্যের বই- এক সপ্তাহে শতভাগ বই পেঁৗছেনি ৬০ ভাগ স্কুলে

সরকারের যে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কেবল পাঠদানের স্বীকৃতি থাকলে দেয়া হবে বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যবই। কিন্ডারগার্টেনসহ যে কোন শিৰা প্রতিষ্ঠান জেলা ও উপজেলা শিৰা অফিস, বিভাগীয় শিৰা অধিদফতর এমনকি সিটি র্কেপারেশনের স্বীকৃতিপত্র থাকলেও পাবে বিনামূল্যের পাঠ্যবই।


বই পাবে সরকারী শিৰাক্রম অনুসরণ করা সকল কিন্ডারগার্টেন। মাধ্যমিকের ইংরেজী মাধ্যমের সকল বইও দেয়া হবে বিনামূল্যে। বৃহস্পতিবার শিৰা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। তবে, এই সিদ্ধানত্মের পরেও স্বীকৃতি না থাকায় প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন। এদিকে মোট বই প্রায় ৮০ শতাংশ পেঁৗছলেও এক সপ্তাহেও সকল বিষয়ের শতভাগ বই পেঁৗছেনি দেশের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ের প্রতি শ্রেণীর শিশুরা পেয়েছে ৩ থেকে ৪টি বিষয়ের বই। সাধারণ মাধ্যমিকের অবস্থা সনত্মোষজনক হলেও দাখিলের ৩৯টি বইয়ের মধ্যে শিৰার্থীরা হাতে পেয়েছে মাত্র নয় বই।
এর আগে ৰমতা গ্রহণের কিছুদিন পরই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সকল পর্যায়ে বিনামূল্যে শতভাগ পাঠ্যবই বিতরণের ঘোষণা দেয় মহাজোট সরকার। আর এ লৰ্যেই এনসিটিবির তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন সত্মরের ২ কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজার ৫২৯ শিক্ষার্থীর জন্য মোট ১৮ কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৭ কপি পাঠ্যবই ছাপানো ও বিতরনের কাজ চলছে। এর মধ্যে প্রাথমিক সত্মরের ৭ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার ৯০৭ কপি, মাধ্যমিক সত্মরের ৭ কোটি ৬২ লাখ ৬৮ হাজার ১০৯ কপি, এবতেদায়ী সত্মরের ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার ২৩১ কপি, দাখিলের ১ কোটি ৪৭ লাখ ২১ হাজার ৬৬৩ কপি, কারিগরি সত্মরের ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৪৩৭কপি পাঠ্যবই ছাপার কথা রয়েছে। ইংরেজী মাধ্যমের জন্য আছে আরও ৫ লাখ বই। সরকারের পরিকল্পনার পথ ধরে গত ৩০ ডিসেম্বর বুধবার সকালে সচিবালয়ে ১১ শিৰার্থীর হাতে বই তুলে দিয়ে দেশব্যাপৗ বিনামূল্যের বই বিতরণের যুগানত্মকারী কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের পৰ থেকে সেদিন ঘোষণা দেয়া হয়, সকল জেলা ও উপজেলা শিৰা অফিসে সকল বই পেঁৗছে গেছে। আগামী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সকল শিৰার্থীর হাতে বই পেঁৗছে যাবে। তবে, বিতরণ প্রক্রিয়ার এক সপ্তাহের মাথায় এসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ মাধ্যমিক, এবতেদায়ী সত্মরের ৯০ শতাংশের মতো বই বিতরণ করা হলেও পিছিয়ে আছে প্রাথমিক, দাখিলের কাজ। রাজধানীসহ সারাদেশের স্কুলগুলোতে প্রাথমিকের বই পেঁৗছেছে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ। কেন্দ্র থেকে শুরম্ন করে জেলা-উপজেলা শিৰা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রায় প্রতি শ্রেণীতে এক থেকে দুটি বিষয়ের বই তারা এখনও পাননি। ফলে এসব বই শিৰার্থীরা হাতে পায়নি। এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সকল সত্মরের কিছু কিছু বিষয়ের বই বাকি আছে। অনেক উপজেলায় পেঁৗছলেও হয়ত দুর্গম এলাকার কারণে স্কুলে পাঠানো সমস্যা হচ্ছে। তবে দেশের অধিকাংশ সাধারণ মাধ্যমিক স্কুলেই চলে গেছে ৫২টি বইয়ের (সকল শ্রেণী মিলে) সবই। কিছু কিছু স্কুলে মোট ৪ থেকে ৫টি বিষয়ের বই বাকি আছে।
দাখিল সত্মরের বই কিছুটা পিছিয়ে আছে। এই সত্মরের ৩৯টি বইয়ের মধ্যে স্কুলে পেঁৗছেছে ৬ থেকে ৭টি বই। ঢাকা জেলা শিৰা অফিসেই এই পর্যনত্ম ৩৯টির মধ্যে ৯টি বই পেঁৗছেছে। ফলে দাখিলের কোন শ্রেণীর শিৰার্থীরাই সকল বিষয়ের বই হাতে পায়নি। সরকারের সংশিস্নষ্ট সকলেরই দাবি, যে সামান্য কাজ বাকি আছে তা শেষ হয়ে যাবে অতি দ্রম্নত। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কয়েকটি স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, মাধ্যমিক সত্মরের অধিকাংশ বই আসলেও প্রাথমিকের মোট বইয়ের ৮০ শতাংশের বেশি বই পায়নি স্কুলগুলো। থানা শিৰা অফিসেও এখানও পুরো বই আসেনি। আজিমপুর গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজের ২ তারিখে শিৰামন্ত্রী বই বিতরণ উদ্বোধন করলেও বৃহস্পতিবার পর্যনত্ম প্রাথমিকের সকল শ্রেণীর শিৰার্থীরা পেয়েছে ২ থেকে ৩টি বিষয়ের বই। শিৰকরা জানিয়েছেন, মাধ্যমিকের অধিকাংশ বই বিতরণ হয়ে গেছে। কিন্তু পুরো বই না পাওয়ায় প্রাথমিকের শিশুদের সকল বই দিতে পরিনি আমরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় খোঁজ নিয়ে পাঠ্যবই বিতরণে মোটামুটি একই চিত্র পাওয়া গেছে।
এদিকে সারাদেশের তুলনায় রাজধানীতে প্রাথমিকের বই বিতরণ কাজ অনেক দূর পিছিয়ে আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার পরেও পরিস্থিতি অনেক ভাল বলছেন শিৰক ও শিৰা কর্মকর্তারা। সরকারী স্কলের মধ্যে বেশি শিৰার্থী যে স্কুলে সেই মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিকের ৯০ শাতাংশের মতো বই পেয়েছে। প্রাথমিকের বই সে তুলনায় অনেক কম। ভিকারম্নননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, গভঃ ল্যাবরেটরী স্কুল, তেজগাঁও হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ রাজধানীর স্বনামধন্য স্কুলে বিতরণের চিত্র ভাল হলেও সাধারণ মানের ছোট ছোট স্কুলে প্রাথমিকের সকল শ্রেণীতেই ১ থেকে ২টি করে বিষয় বাকি আছে। ঢাকা জেলা শিৰা অফিসার রম্নহুল আমীন খান বৃহস্পতিবার দুপুরে জানিয়েছেন, জেলায় মাধ্যমিকের ৯০ শতাংশেরও বেশি বই চলে গেছে স্কুলগুলোতে। দাখিলের ৩৯টি বইয়ের মধ্যে ৯টি আমরা পেয়েছি। তিনি বলেন, প্রথম দিন হিসেব করলে হয়ত সকলে বই পায়নি। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ইতিহাসের যে কোন সময়ের তুলনায় ভাল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত দেশের সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলই বিনামূল্যের বই পাবে।
জাতীয় শিৰাক্রম ও পাঠ্যপুসত্মক বোর্ডসহ বিভিন্ন শিৰা অফিসে বিষয়টি জানার জন্য খোঁজ নিচ্ছেন অনেক মানুষ। অনেকে বই নিতে আসলেও পাচ্ছেন না সরকারী রেজিস্ট্রিভুক্ত প্রতিষ্ঠান্ নয় বলে। আর এ তালিকার অধিকাংশই কিন্ডারগার্টেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বইয়ের দা্িবতে মানব বন্দনও করেছে বেশকিছু শিৰার্থী ও অভিভাবক। তবে এদের প্রায় কোনটিরই নেই সরকারী স্বীকৃতি। নেই পাঠদানের অনুমতিও। পুরো বিষয়টির সুন্দর সমাধানের আশায় বৃহস্পতিবার শিৰামন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়, পাঠদানের স্বীকৃতি পাওয়া অথবা সরকারী শিৰাক্রম অনুযায়ী চলে কিন্ডারগার্টেনসহ দেশের ্এমন সকল প্রতিষ্ঠানকেই বই দেয়া হবে। প্রাথমিক ও গণশিৰা মন্ত্রণালয়ের সচিব আলম মোহাম্মদ শহীদ খান সকলকে আশ্বসত্ম করে বলেন, সরকারী শিৰাক্রম অনুসরণ করে দেশের এমন কোন কিন্ডারগার্টেন বইয়ের আওতার বাইরে থাকবে না। আমরা আশাকরি আগামী ১৫ তারিখের মধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠানের সকল শিশুর হাতে বই দিতে পারব। তিনি বলেন, লৰ্য পূরণে ইতোমধ্যেই আমরা সকল প্রাথমিক শিৰা অফিসে নির্দেশ পাঠিয়েছি যে, তারা যেন এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করে বইয়ের চাহিদা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

No comments

Powered by Blogger.