এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে- ফরমালিন ও ক্যানসার

জিনগত কারণের বাইরে মানবদেহে ক্যানসার সৃষ্টির যেসব কারণ বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করেছেন, সেসবের মধ্যে ফরমালিন এক নম্বর। বাংলাদেশে মাছ সংরক্ষণে ফরমালিনের ব্যাপক ব্যবহার বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে। এ দেশে ক্যানসার-আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির পেছনে ফরমালিনের একক অবদানের মাত্রা কী,


তা নির্দিষ্টভাবে নির্ণয় করা কঠিন। কিন্তু অবদানটা যে বিরাট, তা বোঝা বেশ সহজ। ৩ পিপিএম মাত্রার ফরমালিনই যেখানে মানবদেহের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর, সেখানে বাংলাদেশের মাছের বাজারে দেদার কেনাবেচা চলছে সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৭ পিপিএম ফরমালিনযুক্ত মাছ।
ফরমালিনের ক্ষতিকর প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান নয় বলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি গুরুত্ব পায় না। কিন্তু নীরবে ও অদৃশ্যভাবে গোটা জাতির স্বাস্থ্য বড় হুমকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে—এই সচেতনতা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আছে। তাঁরা বারবার বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। সংবাদমাধ্যমেও মাঝেমধ্যে লেখালেখি হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এ ক্ষেত্রে একধরনের নির্বিকার মনোভাব লক্ষ করা যায়। মনে হয়, যেন এ বিষয়ে কারোর কিছু করার নেই। কিন্তু অবশ্যই অনেক কিছু করার আছে এবং করা উচিত।
ফরমালিন আমদানি করা হয় বিদেশ থেকে; শিল্পে ও গবেষণাকাজে ব্যবহারের জন্য, মাছ ও ফল সংরক্ষণের জন্য নয়। এই ভয়ানক আত্মঘাতী ব্যবসায়িক তৎপরতার রাশ টানতে এখনই প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।
প্রথমত, খোলাবাজারে ফরমালিন বিক্রি বন্ধ করতে হবে। সেটা করার উপায় ফরমালিন আমদানির ওপর কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা। শিল্প ও গবেষণা ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের জন্য ফরমালিন আমদানি নিষিদ্ধ করতে হবে। ফরমালিনসহ ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ আমদানির দায়িত্ব সরকারি সংস্থা টিসিবিকে দেওয়া হলে, এবং টিসিবি কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করতে পারলে সমস্যাটির অনেকটাই সমাধান হয়ে যায়। দেশের ভেতরে ফরমালিন বিপণন টিসিবির মাধ্যমে হলে এই ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ওপর নজরদারির সুযোগ বাড়তে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.