বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি by সৈয়দ সোহরাব

অন্যান্য বছর এ সময় শীত খুব একটা অনুভূত হয় না। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ উল্টো। শীতের দাপটে কাবু হয়ে গেছে মানুষ। শীতবস্ত্রও রৰা করতে পারছে না নগরবাসীকে হাড়কাঁপুনি থেকে। এতে বোঝা যাচ্ছে প্রকৃতই শীতকাল চলছে এখন। এ ছাড়া বাংলা সালের হিসাবেও পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল।


পৌষ তো প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, আর কয়েক দিন পরই শুরম্ন হচ্ছে মাঘ মাস। আর এদেশে একটা কথা প্রচলন আচ্ছে 'মাঘের শীতে বাঘের কানও খাড়া হয়ে যায়।'এবার শীতের যা দাপট আসন্ন মাঘ মাসে তেমনটি ঘটলেও অবাক হওয়ার তেমন কিছু নেই। রাজধানীর বাসিন্দাদের এখন প্রায় সর্বৰণই পরে থাকতে হয় শীতবস্ত্র। দিনের বেলা সূযের্র আলো কমবেশি দেখা গেলেও তাতে কুয়াশার যে রাজত্ব চলছে সেটা স্পষ্ট অনুভূত হয়। দুপুরের পরই অনুভূত হতে থাকে শীতের মাত্রা। বিকেল হলেই কুয়াশা আবার দখল করে নেয় পুরো নগরী। বাড়তে থাকে শীতের প্রকোপ। সন্ধ্যার পরই কাঁপুনি ধরে যায় নগরবাসীর। আর রাতে তো কথাই নেই। শীতবস্ত্র থাকা সত্ত্বেও অনেকে আবার ভারি শীতবস্ত্র কেনার জন্য ছুটছেন মার্কেট বা ফুটপাথের দোকানে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য বেশি বেশি শীতবস্ত্র কিনছেন অভিভাবকরা। রাতের শীত নিবারণের জন্য এবার কম্বল কেনার প্রবণতাও বেশি লৰ্য করা গেছে মানুষের মধ্যে। রাজধানী ঢাকাতে এখনও শোনা যায়নি, তবে সারাদেশে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে একাধিক মানুষ এই শীতে। এতেই বোঝা যায় শীত এবার কতটা কাবু করেছে সকলকে।
তবে আবহমানকাল থেকে আমাদের এখানে আনন্দ উৎসবের মৌসুম হিসেবে খ্যাত এই শীতকাল। এই সময় নতুন ঘর বাঁধার স্বপ্নে বিভোর থাকে তরম্নণ-তরম্নণীরা, হয়ে থাকে বিয়েশাদির অনুষ্ঠান। নগরীজুড়ে নানা ধরনের মেলাও হয়ে থাকে এ সময়। যেমন,এখন চলছে বাণিজ্যমেলা। নতুন বছরের প্রথম দু'দিন (১ ও ২ জানুয়ারি) হয়ে গেল পৌষমেলা। বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে (১১ থেকে ২৫ ডিসেম্বর) হলো ঢাকা আনত্মর্জাতিক বইমেলা। পয়লা ফেব্রম্নয়ারি থেকে শুরম্ন হচ্ছে বাঙালীর প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। এছাড়া পিঠাপুলির নানা উৎসব এবং গান-বাজনার আয়োজন তো প্রায় প্রতিদিনই থাকছে। গ্রামগঞ্জেও যাত্রাপালা, জারি-সারিসহ নানা লোকগানের উৎসব হচ্ছে হরহামেশাই। অবশ্য এখন নগরীতেও যাত্রাপালা হচ্ছে। রাজধানীর মহাখালীতে চলছে মাসব্যাপী পালা।
অন্যান্যবারের চেয়ে এবার বাণিজ্যমেলার জাঁকজমকটা একটু বেশিই বলে মনে হচ্ছে। এবার স্টলের সংখ্যাও অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি। দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো হয়েছে স্টলগুলো, রয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। দেশী-বিদেশী সব স্টলেই বাহারি পণ্যের সমাহার। দিন দিন বাড়ছে ক্রেতাসমাগম। মাসব্যাপী মেলাটি গত শুক্রবার শুরম্ন হলেও, আজ শুক্রবারকেই মেলার প্রথম শুক্রবার হিসেবে বিবেচনা করা হচেছ। তাই ব্যবসায়ীরা আশা করছেন প্রথম সপ্তাহে আজই সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হবে। আর বিক্রি তো হবেই।
ইদানীং রাজধানীতে প্রবল গ্যাস সঙ্কট চলছে। রান্নাবান্নায় অসুবিধা হচ্ছে নগরবাসিন্দাদের। দুপুরে তো অনেক এলাকাতে চুলোই জ্বলে না। আর যে সব এলাকায় জ্বলে সেটাও অনেকটা কুপির মতো মিটমিট করে। বাসাবো, মাদারটেক, গোড়ান, মুগদা, খিলগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, মিরপুর, আজমপুর,
উত্তরা, গুলশান, বনানী, ধানম-িসহ রাজধানীর সব এলাকা থেকেই গৃহিণীরা অভিযোগ করছেন গ্যাস সঙ্কটের। কোন কোন এলাকায গৃহিণীরা মিটিমিটি করে জ্বলা গ্যাস চুলার উপরে লাকড়ি দিয়ে রান্নাবান্নার কাজ করছেন। এতে যে কোন সময়ই ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। এছাড়া বিদু্যত সঙ্কট তো আছেই। এই কনকনে শীতের মাঝেও নগরীতে মাঝেমধ্যে দেয়া হচ্ছে লোডশেডিং। বৃহস্পতিবার এই গ্যাস ও বিদু্যতের সঙ্কটের কারণে এয়ারপোর্ট রোডে (বলাকার সামনে) সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা সড়ক অবরোধ করে রাখে দীর্ঘৰণ। এতে নগরীর সবচেয়ে ব্যসত্মতম সড়কটিতে লেগে যায দীর্ঘ যানজট। পরে পুলিশের সহায়তায় সরিয়ে নেয়া হয় অবরোধকারীদের।

No comments

Powered by Blogger.