সাবের ভাইয়ের স্মরণে by খোরশেদ আলম

সাবের ভাই চলেই গেলেন। তাঁর মৃতু্যর খবর আমি ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন উপল েআয়োজিত মহামান্য রাষ্ট্রপতির বঙ্গভবনের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে গিয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে প্রথম শুনতে পাই। সংবাদটি পাই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ের অন্যতম ডেপুটি মার্শাল ল এ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রাক্তন নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এমডিরাল
(অব.) এমএইচ খানের মুখ থেকে বঙ্গভবনের চত্বরে। তিনিই প্রথম জানালেন জনাব সাবের রেজা করিম সেইদিনই পূর্বাহ্নে তার নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে ... রাজেউন)। ভাবি মিসেস এমএইচ খান, যাকে অনেকদিন থেকেই চিনি, পাশেই ছিলেন। অনেক দিন পরে দেখা হলেও তিনি আমাকে চিনলেন এবং গভীর দুঃখ প্রকাশ করলেন।
অনুষ্ঠানে শেষ হওয়ার পর আমাকে গাড়ির জন্যে অপো করতে হয় বঙ্গভবনের সামনে প্রায় দেড়টি ঘণ্টা। এটি সবার বেলায়ই প্রযোজ্য এবং সকলে একে স্বাভাবিকভাবেই নেন। কিন্তু এই বয়সে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা শুধু কষ্টকর ও বিরক্তিকরই নয়, অসহ্যও বটে। হাঁটুতে ব্যথা ধরে, কোমরে ব্যথা হয়, কোথাও বসার জায়গা নেই। পরিচিত পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে কোন রকমে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে করতে এবং মাঝে মধ্যে একটু এদিক সেদিক হেঁটে শরীরচর্চা করে সময় কাটাচ্ছিলাম। একজন প্রস্তাব করলেন ভবিষ্যতে কয়েকজন একত্র হয়ে মাইক্রোবাসে করে এলে বঙ্গভবনের দুয়ারে গাড়ির ভিড় কম হবে এবং এত দীর্ঘ সময় অপো করতে হবে না। ঢাকা শহরে বর্তমান যানজট সম্বন্ধেও এমন প্রস্তাব কেউ করলে, তাকে অবাস্তব প্রস্তাব বলা চলবে না। দেড় ঘণ্টা পর যখন গাড়ীটি পেলাম, তখন তাতে চড়তেই কষ্ট হচ্ছিল। গাড়ী চালক আমার দিকটায় এসে আমাকে সাহায্য করে গাড়িতে উঠাল। ততণে শীতের সন্ধ্যায়ও আমার পরনের সু্যয়েটার খুলেছি ও শেষ পর্যন্ত গায়ের কোটও খুলে হাত ভাজ করে বহন করছিলাম।
ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীত গাওয়া হয়ে গেল এই জন্য যে, এই বিধ্বস্ত অবস্থায় প্রায় আটটায় যখন ঘরে ফিরি, তখন দাঁড়িয়ে বা বসে থাকার আর উপায় ছিল না। দ্বিতীয় তলায় উঠে কাপড় বদলিয়ে সটান বিছানায় শুয়ে পড়ি এবং ততণে ড্রাইভারকেও বিদায় দেওয়া হয়ে গেছে। আমার স্ত্রীকে কোনরকমে সাবের ভাইয়ের মৃতু্যর খবরটি দেই। কারণ আমরা উভয় পরিবার বহুদিন থেকেই গভীরভাবে পরিচিত চাকরিজীবন থেকেই এবং পরে দেখা হতো প্রায় প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানে ঢাকা লেডিজ কাবের হল ঘরে। যুবা বয়সে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতাম অতি প্রতু্যষে বটমূলের অনুষ্ঠান উপভোগ করে। এখন আর সেখানে যাওয়া হয় না, অনেক কারণের মধ্যে ভীষণ ভিড়ের জন্য বহুদূর গাড়ি রেখে হেঁটে যেতে হয় বলে। তাই আমাদের দুই পরিবারের দেখা হতো দু একবার ছাড়া প্রায় প্রতি বছরেই নববর্ষের অনুষ্ঠানে। ভাই ও ভাবি কি আদর করে আমাদের সম্ভাষণ করতেন, মায়া করতেন ও কথা বলতেন তা জীবনের বাকি দিনগুলোতে স্মরণে থাকবে।
আমার সাবের ভাইয়ের মারা যাওয়ার ঘটনাটির বিস্তারিত জানার অত্যন্ত ইচ্ছা হলো, কিন্তু ড্রাইভারকে ছেড়ে দেয়াতে ধানমণ্ডিতে তার বাড়িতে যাওয়ার কোন উপায় ছিল না। মনে হলো টেলিফোন যন্ত্রটির মাধ্যমে তো খবর নেয়া যায়, সম্ভবপর হলে ভাবির সঙ্গেও কথা বলা হবে। টেলিফোন করলাম, এক ভদ্র মহিলা ধরলেন। তিনি নিজেকে ভাবির কিংবা সাবের ভাইয়ের আত্মীয় বলে পরিচয় দিলেন আর বললেন ভাবিকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে কথা বলা যাবে না, তবে সাবের ভাইয়ের ভোট ভাই রাশিদুল হাসান আছে। তিনি তার সঙ্গে কথা বলতে বললেন। রাশিদুল হাসান বীরু ১৯৬২ সালের সিএসপি সাবের ভাইয়ের ছোট ভাই। সে টেলিফোন ধরল আর জানালো সেদিনই অতি সকালে সাবের ভাই নিজের বাড়িতে নিজের বিছানায় ভাবির পাশে থেকে প্রায় তার অল্যেই ইহকাল থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। কেমন অপূর্ব মরণ! সাবের ভাইয়ের মরদেহ বারডেমে রাখা হয়েছে। তার একমাত্র ছেলে শাহ ও মেয়ে শাহজিয়ার আমেরিকা থেকে আসা পর্যন্ত তারা অপো করবেন। ছেলেটি সম্ভবত পরের দিনই সকালে আসার টিকেট পেয়েছে, মেয়েটির তখনও টিকেটের ব্যবস্থা হয়নি। ওরা এলেই সব প্রোগ্রাম ঠিক করা হবে। তার পরের দিন শুক্রবার, পারলে বাদ জুমা জানাজা পড়ানোর ইচ্ছে তাদের আছে। আমি জানালাম, ভাবিকে দেখার জন্য সেই রাতেই আমাদের আসার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু গাড়ি না থাকাতে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সকালে ড্রাইভার এলেই আমি সাবের ভাইয়ের বাসায় যাবো ভাবির সঙ্গে দেখা করার জন্য।
পরের দিন সকালে অফিসে যাওয়ার পথে (আমি এখনও একটি অফিসে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য যাই) সাবের ভাইয়ের বাসায় এই প্রথম গিয়ে উঠলাম। এর আগে কয়ে বার সাবের ভাই তার বাসায় যেতে বলেছেন এবং বাড়িতে যাওয়ার দিকনির্দেশ অত্যন্ত নিখুঁতভাবে দিয়েছেন। কিন্তু কোনদিন তার বর্তমানে তার বাসায় যাওয়া হয়ে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত গেলাম ঠিকই যখন তিনি আর বাসায় নেই। ভাবি আরও অনেক মহিলা দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে বিছানায় নিথর বসে ছিলেন। চিরাচরিতভাবে তিনি তার হাত তুলে সালাম দিলেন। আমি কোনরূপ দ্বিধা না করে তার হাত ধরে নীরবে সান্ত্বনা দেওয়ার ও সমবেদনা জানানোর চেষ্টা করলাম। সেখানেই জানলাম শাহ সেদিনই সন্ধ্যায় এবং তার কিছু পরেই শাহজিয়া ঢাকা এসে পেঁৗছবে। সেটি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত। তাই পরের দিন শুক্রবার বাদ জুমা ধানমণ্ডির ৭নং রোডের মসজিদে সাবের ভাইয়ের জানাজা পড়ে বনানী গোরস্থানে দাফন করা হবে। আমি সাবের ভাইয়ের শেষকৃত্যের প্রসঙ্গটিতে প্রথমেই চলে এসেছি তার ও ভাবির সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের পরিচয়ের প্রসঙ্গ থেকে। আসলে সেটাই আমার আসল স্মৃতিচারণ।
সাবের ভাই ও ভাবির মতো আন্তরিতায় পরিপূর্ণ দ্বিতীয় মানুষ আমি ও আমার স্ত্রী আর দেখিনি বললে অতু্যক্তি হবে না। সেতারা ভাবি আমার স্ত্রীকে তুমি বলেই প্রথম দিন থেকেই সম্বোধন করতেন। সাবের রেজা করিম ভাই ছিলেন ১৯৫২ সালের সিএসপি। আর আমি ১৯৫৭ সালের অর্থাৎ তিনি আমার পাঁচ বছরের সিনিয়র ছিলেন। পরবতর্ীকালে ১৯৬৬ সালে আমি যখন পাবনার ডিসি হই তখন ূর্মণর্ ম ওলডডণ্র্রমর্র এর ফাইল খুলে সাবের ভাইয়ের নোটটিও দেখি। তিনিও এক সময় পাবনার ডিসি ছিলেন। সাবের ভাইয়ের তিনজন পরে আমি ছিলাম পাবনার ডিসি। তখন তাদের সঙ্গে দেখা হয়নি, কিন্তু সাবের ভাইয়ের নোট মারফত তার সঙ্গে পরিচিত হই। তারপর সাবের ভাইয়েরা যখন রাওয়ালপিন্ডিতে কেন্দ্রীয় সরকারে পোস্টেড, আমি প্রায় সেই সময় ১৯৬৪ সালে পিন্ডিতে পোস্টিং পাই। আমাদের বিয়ের বয়স তখন মাত্র তিন বছর এবং একমাত্র সন্তান সেতুর বয়স দুই বছরেরও কম। আমরা বাঙালীদের মধ্যে কনিষ্ঠতম উমলযফণ ছিলাম বলে তৎকালে পিন্ডিতে অবস্থিত সিনিয়র বাঙালী সিএসপি সহকমর্ীদের সবাই অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হয়ে পড়ি। পিন্ডিতে অবস্থানরত অফিসারদের মধ্যে ছিলেন ১৯৪৯ সালের সিএসপি মরহুম শফিউল আজম ও মরহুম মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, ১৯৬২ সালের মরহুম ওয়াজেদ আলী খান ও সদ্যপ্রয়াত সাবের ভাই, আমরা এবং আমারই ব্যাচের মরহুম খলিলুর রহমান। সেখানে কোন বাঙালী অফিসারের বাড়িতে যে কোন অনুষ্ঠান হলে আমরা নিশ্চিতভাবে আমন্ত্রিত হতাম। সাবের ভাইদের বাসায়ও আমাদের অনেকবার তাদের আতিথ্য গ্রহণ করতে হয়। পরবতর্ীকালে যখনই সাবের ভাই ও ভাবির সঙ্গে দেখা হতো, আমরা পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করতাম।
লেখাটি অনেক দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। আর মাত্র দুটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে স্মৃতিচারণটি শেষ করব। ১৯৭৫ সালের কথা। তখন আমি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ের েেত্র বিভিন্নমুখী প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য তৎকালে অর্ভণথরর্টণঢ ৗলরটফ ঊণশণফমযবণর্ভ রেমথরটব (অৗঊ)ে একটি সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং দেশব্যাপী তা বিস্তৃত হয়েছে। এর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য অর্থ সাহায্য প্রয়োজন। অনেকদিন ধরে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রণীত হয় ৗলরটফ ঊণশণফমযবণর্ভ (ৗঊ) প্রোগ্রাম। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সেটি আলোচনা করার জন্য আমার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়াশিংটনে পাঠান। অন্য দুজন সদস্য ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শামসুল ইসলাম এবং আইআরডিপি এর উপ-প্রধান আনোয়ারুজ্জামান খান।
আমরা সবাই একটি হোটেলে উঠি। সাবের ভাই তখন ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ এ্যাম্বেসিতে ইকনমিক মিনিস্টার। জনাব এম আর সিদ্দিকী রাষ্ট্রদূত। সাবের ভাই খবর পেয়েই সোজা হোটেলে এসে কোন কথা বলতে না দিয়ে আমার মালপত্র তার গাড়িতে উড়িয়ে আমাকে সোজা নিয়ে যান তাদের বাসায়। ভাবিও মহাখুশি। আমি পুরো সময়টাই তাদের ওখানেই থাকি। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে সাবের ভাই ও ভাবির বাইরে কোথাও নিয়ন্ত্রণ ছিল। ভারি বলে গেলেন আপনার যখন খুশি খেয়ে শুয়ে পড়বেন। সব ঠিক করে রাখা আছে। আর শাহ ও শাহজিয়া তো রয়েছেই, ওরা তখন ছোট্টটি। আমি একটু সকাল সকাল খেয়ে শুয়ে পড়লাম, পরদিন বিশ্বব্যাংক টিমের সঙ্গে আলোচনা ছিল বলে। কিছুণ পরেই আমার ঘরের দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা। কি ব্যাপার? উঠে পড়লাম। দেখি শাহজিয়া দাঁড়ানো। সে প্রায় হাঁপিয়ে বলল, আঙ্কেল, বুঝতে পারছিনা কি ব্যাপার। লন্ডন, কানাডা, দিলি্ল, দুনিয়ার প্রায় সব দেশ থেকেই টেলিফোন আসছে আর টেলিফোনকারীরা আব্বুকে চাচ্ছেন। এতটুকু বলার সঙ্গে সঙ্গে আবার টেলিফোন বেজে উঠল। আমি উঠালাম, অপরপ্রান্ত থেকে আওয়াজ এলো, আমি ফারুক বলছি অটওয়া থেকে ফারুক আহমদ চৌধুরী। আমি বললাম, আমি খোরশেদ আলম বলছি। আমি আর কিছু জিজ্ঞাস করার আগেই সে বলল, টেলিভিশন খোল, খবর দেখ। আমি টেলিফোন হাতে রেখেই শাহজিয়াকে বললাম, টেলিভিশন অন কর। সে করল, দেখি ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নিহত হওয়ার সংবাদটি বিশেষ বুলেটিন হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে, ছবি ও দেখাচ্ছে। আমি তো হতবাক, খবর দেখার চেয়ে কান্নায় উত্থলে পড়লাম বেশি। যে মানুষটির অনুপ্রেরণায় ল ল মানুষ প্রাণ দিয়ে, মা-বোনেরা ইজ্জত দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে, তাকে সেই দেশেরই মানুষ, এমনি নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে? দুনিয়ার লোক যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল, এখনও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের দিকে হাত বাড়িয়ে রেখেছে, তারা আমাদের সম্পর্কে কি ভাববে।
কিছুণ পর সাবের ভাই ও ভাবি ফিরে এলেন। তারা পার্টিতে কিছুই শোনেননি। আমি সঙ্গে সঙ্গে জানালাম এবং তারাও টিভিতে খবরটি দেখতে লাগলেন। এখনও আজকের দিনের ঈরণটপধভথ ূণষ্র এর মতো করে কিছুণ পর পর খবরটি প্রচার করা হচ্ছিল। তারাও বিমূঢ় হয়ে গেলেন এবং কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। আমরা খাবার টেবিলে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে লাগলাম সবাই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলাম আর ভাবলাম, দেশ ও জাতির একি মহালজ্জাব বহির্বিশ্বে। ভাবি মাঝে মাঝে এক কাপ করে চা দিতে লাগলেন। প্রায় রাত তিনটার দিকে সাবের ভাই বললেন, তুমি শুতে যাও, তোমার কাল নেগোশিয়েসন আছে। আমি বললাম, কাল তো আলোচনা করাই যাবে না। আমাদের এ্যাম্বেসিতে এসে রাষ্ট্রদূতসহ সবার পরামর্শ নিতে হবে। বর্তমান পরিবর্তিত অবস্থার প্রেেিত আমাদের আলোচনা করা সমীচীন এবং আইনসম্মত হবে কি না। আমরা নতুন সরকারের কাঠামো জানি না এবং বর্তমান প্রস্তাবে নতুন সরকারের পুনঃঅনুমোদন লাগবে কি না তাও প্রশ্নসাপে। পরের দিন আমরা আলোচনা স্থগিত করার প্রস্তাব করলাম। তারা স্বভাবতই মেনে নিল এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করল।
পরে রাষ্ট্রদূতসহ সব কর্মকর্তার পরামর্শে আমরা আলোচনায় গেলাম যেহেতু প্রস্তাবটি পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পে সাহায্য প্রাপ্তির জন্যে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে দীর্ঘকাল আলোচনার মাধ্যমেই প্রণয়ন করা হয়েছে। নতুন সরকার তা নাকচ করে দিবেন না মর্মে আমরা একমত হলাম। প্রায় দিন দশেক সাবের ভাই ও ভাবির ওখানে থেকে এবং তাদের আতিথেয়তায় সিক্ত হয়ে দেশে ফিরে এলাম।
আর দ্বিতীয় প্রসঙ্গটি হচ্ছে, এর অনেক পরে। সরকারী চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করার পর আমি ১৯৯২ সালে যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ লাভ করি, তখন সাবের ভাই আমাকে অভিনন্দন জানাতে আমার বনানীর বর্তমান বাসায় এসে উপস্থিত । আরও অনেকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন, কেউ কেউ চিঠি দিয়ে, কিন্তু কেউই এইভাবে বাসায় এসে অভিনন্দন জানাননি। আমি একজন আবেগপ্রবণ মানুষ। আমি তার গভীর ভালবাসায় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম এবং তিনি আমার নতুন কাজে সফলতার জন্য দোয়া করেছিলেন।
সেই আমার অতিপ্রিয় এক আপনজন এভাবে কোন আগাম নোটিশ না দিয়ে চলে গেলেন ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন এবং ভাবি ও তার পরিবারের সকলকে এ অপূরণীয় তি সহ্য করার মতা দিন। আল্লাহর কাছে এই দোয়া চাইছি। আল্লাহ তাদের সহায় হোন। আমিন।
লেখক : সাবেক গবর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

No comments

Powered by Blogger.