টেকনাফ বন্দরে নষ্ট হচ্ছে ৫০ কোটি টাকার পণ্য- ৮ দিন অচলাবস্থার পর ৩ দিনের জন্য স্থগিত, ডেলিভারির অপেৰায় আরও ৩০ কোটি টাকার মাল

কঙ্বাজার টেকনাফ স্থলবন্দরে সংঘটিত ঘটনার সুরাহা হয়নি এখনও। এক সপ্তাহ ধরে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক ব্যবসায়ীদের মাঝে চলছে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ, ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সমাবেশ। কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক ও সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীর কারণে সত্যিকারের ব্যবসায়ীদের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।


নাফ নদী ও বন্দরে পচে গলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মাছ, আদাসহ বিভিন্ন প্রকারের আমদানি পণ্য। ঘটনার সুরাহা না হওয়ায় সরকার এক সপ্তাহে অনত্মত ২ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। স্থলবন্দরে বার বার ধর্মঘট, পণ্য চুরি, আটক, হামলা-মামলা ও বন্দরে অচলাবস্থা দেখে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরাও নিরাশ হয়ে পড়েছে। বন্দর কতর্ৃপক্ষ ও শুল্ক কর্মকর্তাগণ নিয়মিত অফিসে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু সপ্তাহ ধরে কোন পণ্য ডেলিভারি বা ছাড়পত্রে সই করতে পারেননি তারা। কাগজ-কলম হাতে নিয়ে কাস্টমস্ কর্মকর্তারা সকাল থেকে বিকাল পর্যনত্ম শুধু অফিস পাহারা দিয়ে চলছেন। মালামাল ডেলিভারি নিতে আসা আগ্রহী ব্যবসায়ীদের বন্দরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ধর্মঘটী কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী ও উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক। নাফ নদীতে নোঙ্গর করা জাহাজে ও বন্দরে পড়ে রয়েছে খালাস এবং ডেলিভারির অপেক্ষায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার পণ্য। সরেজমিনে ঘুরে সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ স্বাক্ষরে ১৯৯৫ সালে সীমানত্ম বাণিজ্য চালু হওয়ার পর প্রতিমাসে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে আসছে স্থলবন্দর থেকে। কমান্ডো স্টাইলে সন্ত্রাসী হামলা, অফিস ভাংচুর ও ম্যানেজারকে গুরম্নতর আহত করার ঘটনায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে টেকনাফ স্থলবন্দর। সন্ত্রাসীদের ভয়ে তটস্থ বন্দরের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যায় আবদার ও দাবি রক্ষা না করায় ইনচার্জের ওপর অমানবিক হামলার প্রতিবাদে ক্ষোভ পরিলক্ষিত হয়েছে সংশিস্নষ্ট কর্মচারীদের মাঝে। সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বন্দর সংরক্ষিত এলাকা। সংঘটিত ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও টেকনাফ থানা পুলিশ এ পর্যনত্ম কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ঘটনার পর থেকে বন্দর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অসাধুদের ক্ষমতার দাপট, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা বন্দরে যাওয়া-আসা করছেন না মোটেও। টেকনাফ স্থলবন্দরে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ৮ দিন ধরে। ফলে রাজস্ব আদায়ে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী অন্যায়ভাবে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পণ্য ডেলিভারি নিতে প্রভাব খাটাতে চায় হরহামেশা। কাস্টমস্ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্যাঙ্ ফাঁকি দেয়া মালামাল ডেলিভারি বা ছাড়পত্র দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শুরম্ন হয় অভিযোগ, ধর্মঘট ও অপসারণসহ বিভিন্ন দাবি ও প্রসত্মাব। তারই ধারাবাহিকতায় ৩১ ডিসেম্বর রাতে ট্যাঙ্ ফাঁকি দিয়ে শুঁটকি ডেলিভারি নিতে চাইলে বাধা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শুঁটকি ভর্তি ২টি গাড়ি দাপট দেখিয়ে বন্দর থেকে বের করে নিতে হামলা চালায় কথিত ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীরা। দলবদ্ধভাবে ৩১ ডিসেম্বর রাতে সন্ত্রাসীরা গাড়ি ভর্তি শুঁটকি ট্যাঙ্বিহীন নিতে না পেরে কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালিয়েছে বন্দরে। স্থলবন্দর কার্যালয় ভাংচুরসহ জিম্মি করে রাখা হয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে। বেদম মারধর করা হয়েছে বন্দর ইনচার্জ জসিম উদ্দিনকে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও বিডিআর জোয়ানরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আমদানি পণ্য ও সরকারী সম্পদের নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করে। স্থলবন্দরে পুলিশ সর্বক্ষণিক টহল দান ও অবস্থান নেয়। পরদিন হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিরম্নদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় টেকনাফ থানায়। আসামিরা এলাকার ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে সাহস পাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানায়, বন্দরে হামলা ও ম্যানেজারকে মারধর করার অপরাধে মামলা দায়ের করার পর আসামীরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। অন্যায় আবদার রক্ষা করতে না পারলে বন্দর ছেড়ে চলে যেতেও তারা হুমকি দেয়া অব্যাহত রেখেছে বলে বন্দর সূত্রে জানিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বন্দরের এহেন নাজুক পরিস্থিতি দেখে বারবার সমাধানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পণ্য ডেলিভারী নিতে অপতৎপরতা চালিয়ে ব্যর্থ অসাধু ব্যবসায়ীরা বন্দরের কর্মকর্তাদের বিরম্নদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বন্দরের প্রধান ফটকে গত বুধবার সকালে অবস্থান ধর্মঘট করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। ধর্মঘটকারীদের নেতা ও আমদানি-রপ্তানিকারক আবদুল আমিন জানান- বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়িকভাবে তাদের হয়রানি করে চলছে প্রতিনিয়ত। তারা ঐ সব হয়রানি বন্ধ করতে ১৫ দফা দাবী সম্বলিত আবেদন পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দপ্তরে। তাদের দাবি হচ্ছে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার, ম্যানেজার জসিম উদ্দিনের অপসারণসহ ১৫ দফা দাবি মেনে নিতে হবে। না হলে বন্দরে লাগাতার ধর্মঘট চলবে বলে তারা হুঁসিয়ারী উচ্চারণ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.