চারুশিল্পঢাকা আর্ট সেন্টার- শিল্পে জীবনকথা by মোবাশ্বির আলম মজুমদার
দর্শককে অভিভূত করা নয়, তাঁদের মনে চিন্তা ও বিবেচনা জাগিয়ে তোলাই সম্ভবত এ প্রদর্শনীর লক্ষ্য। ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা আর্ট সেন্টারে শুরু হয়েছে ১০ জন সমকালীন শিল্পীর দলীয় প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘কনটেমপ্লেটিং দ্য কনটেম্পরারি’।
মোট ৩৩টি শিল্পকর্মের মাধ্যম হলো ছাপচিত্র, ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিক, কাঠ-কাপড়-তুলা-কাগজের মণ্ড দিয়ে তৈরি স্থাপনাশিল্প ও আলোকচিত্র। সামাজিক বিপর্যয়, নগরজীবনে যন্ত্রদানবের মৃত্যুর হাতছানি এবং ব্যক্তিগত জীবনযাপনের নানা রূপ বিষয় হিসেবে এসেছে শিল্পকর্মগুলোয়।
বাংলাদেশের শিল্পীদের কাজে ইউরোপীয় চিত্রকলার প্রভাব পড়তে শুরু করে ষাটের দশক থেকে। এবং গত শতকের শেষ ভাগে আমাদের শিল্পকলায় জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়ের সঙ্গে যোগ হয় মাধ্যমের নিরীক্ষা। এই প্রদর্শনীর ছবিগুলোয় শিল্পনির্মাণ মুখ্য নয়, শিল্পের বক্তব্যই প্রধান হয়ে উঠেছে। যেমন, প্রদর্শনীর তাশিকুর রহমানের ছয়টি আলোকচিত্র সামাজিক অস্থিরতার প্রতীকী প্রকাশ। ছবিগুলোর শিরোনাম ‘ফ্যাটালিস্টিক টেন্ডেন্সি’। মানুষের দেহ নিথর হয়ে বাথটাবে পড়ে আছে। অন্য ছবিতে চাঁদের আবছা আলোয় মানুষের উপস্থিতি। অন্য একটি আলোকচিত্রে বেসিনের গা বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, এক কোণে একটি রক্তাক্ত ছুরি। ছয়টি আলোকচিত্রেরই মূল বিষয় প্রতিনিয়ত সমাজে ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনাবলির ছায়া। রহিমা আফরোজ চারটি ক্যানভাসে মিশ্র মাধ্যমে এঁকেছেন ‘কম্পোজিশন’। দেয়ালে ঝোলানো দৈনন্দিন ব্যবহার্য দ্রব্যের উপস্থিতি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনকে মনে করিয়ে দেয়। চারটি ক্যানভাসের জমিন সাদা-কালো বুনট আর রেখায় গড়া। নাসিমা হক স্থাপনাশিল্প তৈরি করেছেন কাপড়, তুলা, কাঠ ও সুতা দিয়ে। শিরোনাম ‘ফাউন্ড অবজেক্ট’। তাঁর শিল্পকর্ম নিয়ে শিল্পীর ভাবনা এ রকম: ‘আমরা বাস করছি এমন এক সময়ে, যখন অসীম ভোগের স্বাধীনতাকে আমরা নৈতিক, আদর্শগত ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার সমার্থক বা বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছি। যে জীবনের ভেতর বাস করছি, সেখানে এই অস্বস্তি এখন সর্বক্ষণের সঙ্গী। অর্থহীন উৎপাদন, সীমাহীন ভোগ, অসুস্থ দেহ, মন এবং আরও উৎপাদন, আরও ভোগ, আরও অসুস্থতা—এ ভাবনা নিয়েই অগ্রসর হচ্ছি।’ জাভেদ জলিল তিনটি ক্যানভাসে এঁকেছেন ‘ওয়ার্ল্ড আন্ডার দি অক্টোপাস’, ‘সুইট সেনসেশন অ্যান্ড দ্য কাউচ অব লাভ’ ও ‘ইননোসেন্ট উইথ দ্য হাংরি টাইড’ ছবিগুলো। ক্যানভাসের সব স্থানে বিষয়ের আধিপত্যে দৃষ্টিনন্দন নির্মাণের পরিবর্তে ছবি হয়ে উঠেছে বক্তব্যনির্ভর নির্মাণ। মো. আতিকুল ইসলামের ‘মুভিং লাইন’ শিরোনামের স্থাপনাশিল্পকর্মটি গ্যালারির মেঝেজুড়ে। ফাঁপা গোলাকৃতির সামনের অংশ পাইপের আকৃতি। এটি রেখা হয়ে ঘুরতে থাকে যেকোনো দিকে। ‘লাইফ’ শিরোনামের কাজে মাটির হাঁড়ির আকৃতির ওপর চড়েছে আরেকটি হাঁড়ি। তিন স্তরের হাঁড়ির উলম্ব আকৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কলসি। জীবনযাপনের সঙ্গে যুক্ত দ্রব্যাদির আকৃতির মাধ্যমে চলমান জীবনকে উপস্থাপন করেছেন শিল্পী। জাফরিন গুলশানের ছয়টি কাজের মধ্যে ‘আউরা’ কাজটিতে মানুষের দেহ স্পষ্ট হয়েছে। এচিং ও অ্যাকুয়াটিন্ট মাধ্যমের ছাপচিত্রে অর্ধবৃত্তাকার জমিনে শায়িতা রমণী; ছবির উপরিভাগে সেপিয়া গ্রিন ভেদ করে দেখা যাচ্ছে এক ফালি চাঁদ আর একটি পুরুষের মুখ। আজমীর হোসেনের চারটি চিত্রকর্মে জলরং ও মিশ্র মাধ্যমে যুক্ত করেছেন ঘড়ির বৃত্ত। জলরঙের ওয়াশে দরজার আকৃতি তৈরি হয়েছে। ছবিগুলোর শিরোনাম ‘ডোর’। হারুন অর রশিদ গ্যালারির ছাদ থেকে মেঝে পর্যন্ত দুটি ফ্রেমহীন ক্যানভাস ঝুলিয়েছেন। কালো রেখায় মানুষের ফিগার এঁকেছেন। ফিগারগুলোর ওপর দিয়ে চলাচল করেছে ভারী ও হালকা যানবাহন। ক্যানভাসের গায়ে ছাপ পড়া চাকার দাগকে প্রধান করেছেন। ছবি দুটির শিরোনাম ‘ইম্প্রেশন অব টায়ারস’। শিল্পী মনে করেন, ‘যান্ত্রিক উৎকর্ষতা আমাদের জীবনে গতি এনেছে, কিন্তু আমাদের স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। নিরাপত্তা ও সম্ভাবনাকেও আমরা হারাচ্ছি। স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রতিটি সড়কই যেন আমাদের মৃত্যুর দিকে ডাকছে। আমরা বাস করছি অদ্ভুত নগর সংস্কৃতিতে।’
প্রদর্শনীটি শেষ হবে ৯ সেপ্টেম্বর। এতে অংশ নেওয়া শিল্পীরা হলেন: নাসিমা হক, মো. আতিকুল ইসলাম, জাফরিন গুলশান, জাভেদ জলিল, রহিমা আফরোজ, তাশিকুর রহমান, সৈয়দ আসিফ আহমেদ, আজমীর হোসেন, ফাহমিদা ইসলাম ও মো. হারুন অর রশীদ।
বাংলাদেশের শিল্পীদের কাজে ইউরোপীয় চিত্রকলার প্রভাব পড়তে শুরু করে ষাটের দশক থেকে। এবং গত শতকের শেষ ভাগে আমাদের শিল্পকলায় জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়ের সঙ্গে যোগ হয় মাধ্যমের নিরীক্ষা। এই প্রদর্শনীর ছবিগুলোয় শিল্পনির্মাণ মুখ্য নয়, শিল্পের বক্তব্যই প্রধান হয়ে উঠেছে। যেমন, প্রদর্শনীর তাশিকুর রহমানের ছয়টি আলোকচিত্র সামাজিক অস্থিরতার প্রতীকী প্রকাশ। ছবিগুলোর শিরোনাম ‘ফ্যাটালিস্টিক টেন্ডেন্সি’। মানুষের দেহ নিথর হয়ে বাথটাবে পড়ে আছে। অন্য ছবিতে চাঁদের আবছা আলোয় মানুষের উপস্থিতি। অন্য একটি আলোকচিত্রে বেসিনের গা বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, এক কোণে একটি রক্তাক্ত ছুরি। ছয়টি আলোকচিত্রেরই মূল বিষয় প্রতিনিয়ত সমাজে ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনাবলির ছায়া। রহিমা আফরোজ চারটি ক্যানভাসে মিশ্র মাধ্যমে এঁকেছেন ‘কম্পোজিশন’। দেয়ালে ঝোলানো দৈনন্দিন ব্যবহার্য দ্রব্যের উপস্থিতি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনকে মনে করিয়ে দেয়। চারটি ক্যানভাসের জমিন সাদা-কালো বুনট আর রেখায় গড়া। নাসিমা হক স্থাপনাশিল্প তৈরি করেছেন কাপড়, তুলা, কাঠ ও সুতা দিয়ে। শিরোনাম ‘ফাউন্ড অবজেক্ট’। তাঁর শিল্পকর্ম নিয়ে শিল্পীর ভাবনা এ রকম: ‘আমরা বাস করছি এমন এক সময়ে, যখন অসীম ভোগের স্বাধীনতাকে আমরা নৈতিক, আদর্শগত ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার সমার্থক বা বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছি। যে জীবনের ভেতর বাস করছি, সেখানে এই অস্বস্তি এখন সর্বক্ষণের সঙ্গী। অর্থহীন উৎপাদন, সীমাহীন ভোগ, অসুস্থ দেহ, মন এবং আরও উৎপাদন, আরও ভোগ, আরও অসুস্থতা—এ ভাবনা নিয়েই অগ্রসর হচ্ছি।’ জাভেদ জলিল তিনটি ক্যানভাসে এঁকেছেন ‘ওয়ার্ল্ড আন্ডার দি অক্টোপাস’, ‘সুইট সেনসেশন অ্যান্ড দ্য কাউচ অব লাভ’ ও ‘ইননোসেন্ট উইথ দ্য হাংরি টাইড’ ছবিগুলো। ক্যানভাসের সব স্থানে বিষয়ের আধিপত্যে দৃষ্টিনন্দন নির্মাণের পরিবর্তে ছবি হয়ে উঠেছে বক্তব্যনির্ভর নির্মাণ। মো. আতিকুল ইসলামের ‘মুভিং লাইন’ শিরোনামের স্থাপনাশিল্পকর্মটি গ্যালারির মেঝেজুড়ে। ফাঁপা গোলাকৃতির সামনের অংশ পাইপের আকৃতি। এটি রেখা হয়ে ঘুরতে থাকে যেকোনো দিকে। ‘লাইফ’ শিরোনামের কাজে মাটির হাঁড়ির আকৃতির ওপর চড়েছে আরেকটি হাঁড়ি। তিন স্তরের হাঁড়ির উলম্ব আকৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কলসি। জীবনযাপনের সঙ্গে যুক্ত দ্রব্যাদির আকৃতির মাধ্যমে চলমান জীবনকে উপস্থাপন করেছেন শিল্পী। জাফরিন গুলশানের ছয়টি কাজের মধ্যে ‘আউরা’ কাজটিতে মানুষের দেহ স্পষ্ট হয়েছে। এচিং ও অ্যাকুয়াটিন্ট মাধ্যমের ছাপচিত্রে অর্ধবৃত্তাকার জমিনে শায়িতা রমণী; ছবির উপরিভাগে সেপিয়া গ্রিন ভেদ করে দেখা যাচ্ছে এক ফালি চাঁদ আর একটি পুরুষের মুখ। আজমীর হোসেনের চারটি চিত্রকর্মে জলরং ও মিশ্র মাধ্যমে যুক্ত করেছেন ঘড়ির বৃত্ত। জলরঙের ওয়াশে দরজার আকৃতি তৈরি হয়েছে। ছবিগুলোর শিরোনাম ‘ডোর’। হারুন অর রশিদ গ্যালারির ছাদ থেকে মেঝে পর্যন্ত দুটি ফ্রেমহীন ক্যানভাস ঝুলিয়েছেন। কালো রেখায় মানুষের ফিগার এঁকেছেন। ফিগারগুলোর ওপর দিয়ে চলাচল করেছে ভারী ও হালকা যানবাহন। ক্যানভাসের গায়ে ছাপ পড়া চাকার দাগকে প্রধান করেছেন। ছবি দুটির শিরোনাম ‘ইম্প্রেশন অব টায়ারস’। শিল্পী মনে করেন, ‘যান্ত্রিক উৎকর্ষতা আমাদের জীবনে গতি এনেছে, কিন্তু আমাদের স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। নিরাপত্তা ও সম্ভাবনাকেও আমরা হারাচ্ছি। স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রতিটি সড়কই যেন আমাদের মৃত্যুর দিকে ডাকছে। আমরা বাস করছি অদ্ভুত নগর সংস্কৃতিতে।’
প্রদর্শনীটি শেষ হবে ৯ সেপ্টেম্বর। এতে অংশ নেওয়া শিল্পীরা হলেন: নাসিমা হক, মো. আতিকুল ইসলাম, জাফরিন গুলশান, জাভেদ জলিল, রহিমা আফরোজ, তাশিকুর রহমান, সৈয়দ আসিফ আহমেদ, আজমীর হোসেন, ফাহমিদা ইসলাম ও মো. হারুন অর রশীদ।
No comments