নিরৰরমুক্ত হতে যাচ্ছে বারখাদা by এম এ রকিব

কুষ্টিয়ার একটি ইউনিয়নে ইয়ুথ এন্ডিংয়ের উদ্যোগে গণশিা কার্যক্রম সফলভাবে এগিয়ে চলেছে। জেলা সদর উপজেলার এই ইউনিয়নটির নাম 'বারখাদা'। আর এ কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার'র স্বেচ্ছাসেবকরা।


গণশিা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিররতামুক্ত গ্রাম গড়ার প্রতিশ্রম্নতি নিয়ে ২০০৮ সালের মার্চ থেকে এই ইউনিয়নে শুরম্ন হয় গণশিা কার্যক্রম, যা স্বেচ্ছাসেবক ভিত্তিতে বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত উদ্যমী এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে নিরর শিশুসহ নারী-পুরম্নষকে সারজ্ঞান সম্পন্ন করে তোলা হচ্ছে। ৯টি গ্রাম নিয়ে গঠিত ইউনিয়নে উলেস্নখযোগ্য সাফল্য এসেছে মিনাপাড়া ও জুগিয়া_ এ দু'টি গ্রামে। গ্রাম দু'টির এ পর্যনত্ম আড়াই শ' নিরর নারী-পুরম্নষকে অরজ্ঞানসম্পন্ন করা হয়েছে। বারখাদা ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা ৩৮,৫৭৪ জন। এর মধ্যে ১৯,৯০০ জন পুরম্নষ এবং ১৮,৬৭৪ জন নারী। এখানে শিা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১টি, ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২টি বেসরকারি প্রাথমিক, ৮টি মাদ্রাসাসহ বেশ কিছু কিন্ডার গার্টেন। বারখাদার অধিকাংশ মানুষেরই পেশা কৃষিকাজ।
সরেজমিন খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, ২০০৮ সালে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের অনুপ্রেরণায় সৃষ্ট 'ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার'র উদ্যোগে বারখাদা ইউনিয়নকে নিররমুক্ত করার প্রতিশ্রম্নতি নিয়ে কাজ শুরম্ন করা হয়। এলাকার নিরর ও ঝরেপড়া শিশু এবং বয়স্ক নারী-পুরম্নষদের বিনা খরচে অরজ্ঞানসম্পন্ন করে তোলার জন্য শুরম্ন হয় এই গণশিা কার্যক্রম। এ কর্যক্রমকে এগিয়ে নিতে বারখাদা ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবী মনোভাবাপন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গঠন করা হয় ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গারের বারখাদা ইউনিয়ন ইউনিট। তারা গ্রামে গ্রামে প্রচারণার মাধ্যমে শিার প্রয়োজনীয়তা এবং নিররতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে থাকে। এসব প্রচার কার্যক্রমের মধ্যে ছিল গণশিা বিষয়ক নাটক, উঠান বৈঠক, গণশিা বিষয়ক স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময়। সেসময় এ ইউনিয়নে নিররতা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, যৌতুক, বাল্যবিবাহ, শিশুমৃতু্য, পারিবারিক নির্যাতন, গর্ভবতী মায়ের মৃতু্যর মতো ঝুঁকিপূর্ণ সমস্যাগুলো ছিল প্রকট। ফলে ইউনিয়নের সার্বিক সমস্যার ইতিবাচক পরিবর্তনের তাগিদ থেকেই ইউনিয়নবাসী দি হাঙ্গার প্রজেক্টের উজ্জীবক প্রশিণ গ্রহণ করতে থাকে। ব্যতিক্রমী এ আয়োজনে ব্যাপক সাড়া পড়ে। ওই বছরেই দি হাঙ্গার প্রজেক্ট কুষ্টিয়া জেলা সমন্বয়কারী ১০১৭তম এবং ১১৯৮তম ব্যাচের উজ্জীবকদের সহায়তায় ইউনিয়নের মিনাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় ১৩৭৫তম ব্যাচের উজ্জীবক প্রশিণের। প্রশিণটি ইউনিয়নের উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলশ্রম্নতিতে উন্নয়নের পটভূমিকায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে আয়োজন করা হয় আরও দু'টি উজ্জীবক প্রশিণের। এর একটি অনুষ্ঠিত হয় মিনাপাড়া গ্রামে এবং অপরটি জুগিয়া কৃষি উদ্যান কেন্দ্রে।
দি হাঙ্গার প্রজেক্টে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলা সমন্বয়কারী সবুর খান জানান, শিার প্রয়োজনীয়তা ও গুরম্নত্ব বোঝাতে প্রথমদিকে ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার'র স্বেচ্ছাসেবকরা এখানে নাটকের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণা শুরম্ন করে। এসব স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রী। আগ্রহী শিাথর্ীরা তাদের কাছ থেকে ১০ টাকা মূল্যে বই কিনে জীবনের প্রথম পাঠ শুরম্ন করে। অংশগ্রহণকারী শিাথর্ীদের মধ্যে পুরম্নষদের চেয়ে নারী সদস্যদের সংখ্যাই বেশি। তিনি জানান, গণশিা আন্দোলনের প্রবক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনিসুর রহমানের অনুপ্রেরণায় দেশব্যাপী এই কার্যক্রম চালু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এখানে গণশিা কার্যক্রম শুরম্ন করা হয়েছে। বারখাদা ছাড়াও কুষ্টিয়ার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে তাদের এ কার্যক্রম চালু রয়েছে। তবে এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য সাফল্য এসেছে মিনাপাড়া ও জুগিয়া গ্রামে। গ্রাম দু'টির মধ্যে মিনাপাড়ার ছয়টি কেন্দ্রে মোট ১৪০ জনকে এবং জুগিয়ার চারটি কেন্দ্রে মোট ৯২ জনকে নিররমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এরা এখন নিজের নাম-ঠিকানা লিখতে ও বই পড়তে পারে। ইয়ুথ লিডার কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অর্থনীতি প্রথম বর্ষের ছাত্র মাহমুদ হাসান জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে দু'জন থেকে চার জন শিক (স্বেচ্ছাসেবক) পর্যায়ক্রমে নিরর মানুষকে শিা প্রদান করে আসছেন। এ শিা কোর্স সম্পন্ন করতে তাদের ৪৫ দিন থেকে ২ মাস সময় লেগে যায়। এরপর কোর্সে অংশগ্রহণকারীরা সহজ ভাষায় লিখতে পড়তে পারে। ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার বারখাদা ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবক মাহমুদ হাসান, রাকিবুল ইসলাম, রেজেকা খাতুন, শিলন, মোঃ সুজন ইসলাম, নাহিদ, ঝরনা, বুবলি, মৌসুমী আক্তার ও মুর্শিদার নেতৃত্বে এ গণশিা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। তারা জানায়, সমাজের পিছিয়ে পড়া ছিন্নমূল শিশুসহ বয়স্ক নারী-পুরম্নষদের নিররমুক্ত করতে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তারা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই শিা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়েছে। বারখাদা ইউনিয়নে ৩টি ইয়ুথ ইউনিট রয়েছে। এর একটি মিনাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ইউনিট, বারখাদা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ইউনিট এবং বারখাদা ইউনিয়ন ইউনিট।

No comments

Powered by Blogger.