‘টাকা ও স্বর্ণের জন্য মা-মেয়েকে হত্যা’

নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি বাসায় মা ও মেয়েকে গলা কেটে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ওমর ফারুক (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে তাঁকে কুমিল্লার সীমান্তবর্তী গোলাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।


ওমর ফারুক বলেছে, টাকা ও স্বর্ণালংকারের জন্য হিরু মালিক নামের এক ব্যক্তিসহ তাঁরা দুজন মা ও মেয়েকে হত্যা করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ আগস্ট শহরের পাইকপাড়ার একটি ফ্ল্যাট থেকে মা মাবিয়া বেগম (৪২) ও মেয়ে সাদিয়ার (১২) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সাদিয়া শহরের মাসদাইর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।
পুলিশ জানায়, ওমর ফারুকের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত ছোরা, শিল (মসলা বাটার পুতা) ও নিহত মাবিয়া বেগমের ব্যবহূত মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে। ওমর ফারুকের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মোহনপুর গ্রামে। তিনি পেশায় ব্যক্তিগত গাড়ির চালক।
এর আগে র‌্যাব-১১ আবদুস সালাম নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে দাবি করেছিল যে তিনি মা-মেয়ে হত্যার পরিকল্পনাকারী। এ প্রসঙ্গে পুলিশের দাবি, সালাম ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। ওমর ফারুক ও হিরু মালিকই মা ও মেয়েকে হত্যা করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার শহরের চাঁদমারী এলাকায় পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওমর ফারুক সাংবাদিকদের কাছে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন। এ সময় পুলিশ সুপার শেখ নাজমুল আলমসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ওমর ফারুক সাংবাদিকদের জানান, শ্বশুরবাড়িতে যাতায়াতের সূত্র ধরে মাইজভান্ডারি গানের শিল্পী হিরু মালিকের (৩০) সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও বন্ধুত্ব। আর মাবিয়া বেগম গান লিখতেন। এ সূত্র ধরেই হিরু মালিকের সঙ্গে মাবিয়ার পরিচয়। হত্যাকাণ্ডের দুদিন আগে হিরু তাঁকে জানান, নারায়ণগঞ্জে মাবিয়া নামের এক গীতিকার আছেন। তাঁর স্বামী বিদেশে থাকেন। তাঁর বাড়িতে আট-নয় লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার আছে। তাঁকে হত্যা করে তাঁরা ওই টাকা ও স্বর্ণালংকার ভাগাভাগি করে নেবেন।
ওমর ফারুক জানান, ১৩ আগস্ট রাত আটটার দিকে তাঁরা দুজন মাবিয়ার বাসায় যান। এ সময় হিরু মাবিয়াকে বলেন, তাঁর এক বন্ধুর কাছে বড় অঙ্কের টাকা আছে, তাই সে হোটেলে থাকতে ভয় পাচ্ছে। এ কারণে তাঁর বাসায় রাত কাটাতে চায়। মাবিয়া এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে তাঁদের বাড়িতে থাকতে দেন। পরে রাতের খাবার শেষে তাঁরা জুসের সঙ্গে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে মাবিয়াকে খাইয়ে দেয়। গভীর রাতে একপর্যায়ে হিরু মাবিয়ার মাথায় শিল দিয়ে আঘাত করেন এবং দুটি পা রশি দিয়ে বেঁধে ফেলেন। এর পর হিরু মাথা চেপে ধরে ও তিনি নিজে ফল কাটার ছোরা দিয়ে গলা কেটে মাবিয়াকে হত্যা করেন। বেঁচে থাকলে বিপদ হতে পারে ভেবে তাঁরা মেয়ে সাদিয়াকেও হত্যা করেন।
ওমর ফারুক জানান, এরপর তাঁরা ঘরে থাকা তিন হাজার টাকা, দুটি স্বর্ণের চেইন, একটি ল্যাপটপ ও মুঠোফোন নিয়ে যান।
পুলিশ সুপার শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘মুঠোফোন ট্র্যাকিং করে খুনি ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর খুনি হিরুকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

No comments

Powered by Blogger.