বাংলাদেশের জন্য ৰতিকর কিছু করবে না ভারত দীপু মনি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে তিসত্মার পানি বণ্টন নিয়ে কোন চুক্তি সই হবে না। বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন। তবে দু'দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে চুক্তির বিষয়ে আরও অগ্রগতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।


তপ্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরের প্রসঙ্গ টেনে দীপু মনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ দমন, টিপাইমুখ বাঁধ, যৌথ নদীর পানি বণ্টন, রেল যোগাযোগ, অবাধ বাণিজ্য এলাকা প্রতিষ্ঠা, সীমানত্ম হাট, জ্বালানি ও বিদু্যত নিরাপত্তা, সীমানত্ম সন্ত্রাস মোকাবেলা, সীমানত্মে গোলাগুলি বন্ধ করা, দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা, অবকাঠামোগত সহায়তা, সমুদ্রসীমা নির্ধারণসহ দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা হবে।
মঙ্গলবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে তিসত্মার পানি বণ্টন চুক্তি চূড়ানত্ম না করা গেলেও ভবিষ্যতে এ বিষয়ে চুক্তির বিষয়ে দু'দেশ একমত হয়। বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।
টিপাইমুখ বাঁধ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ভারতের উচ্চপর্যায় বাংলাদেশকে আশ্বসত্ম করেছে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন কিছু ভারত করবে না। তিনি বলেন, ভারতের ওই কথার ওপর আস্থা না রাখার কোন কারণ নেই। এ সময় সাংবাদিকরা 'ফারাক্কা বাঁধ' নির্মাণের সময়কালে ভারতের প্রতিশ্রম্নতি ও তা ভঙ্গের বিষয়টি দৃষ্টানত্মস্বরূপ তুলে ধরলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আনত্মর্জাতিক আইন অনুযায়ী এক রাষ্ট্র ওপর রাষ্ট্রের ওপর সাধারণত এভাবে আস্থা রাখে। তিসত্মা চুক্তি সম্পর্কে দীপু মনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বহমান যৌথ নদীগুলোর পানি বণ্টনের বিষয়ে গত পাঁচ-ছয় বছর ভারতের সঙ্গে কোন আলোচনা হয়নি। এটি নিয়ে আলোচনা শুরম্ন হয়েছে। এটিকে ইতিবাচক হিসেবে উলেস্নখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে আরও বেশি সমন্বয়, সম্পর্কের উন্নয়ন ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মঙ্গলজনক হবে। এদিকে ভারতের ভিসা পেতে গিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগানত্মি এবং সহজে ভিসা না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি নিয়ে ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে ইতোমধ্যে তার কথা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১০ জানুয়ারি রাতে চার দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন। ভারত সফরের সময় তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। ইতোমধ্যে দু'দেশের শীর্ষ নেতার বৈঠককে ঘিরে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল ও ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান সোনিয়া গান্ধীসহ বেশ কয়েক শীর্ষ নেতার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। এ সব বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপাৰিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচী তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে দীপু মনি বলেন, ১০ জানুয়ারি রাতে একটি বিশেষ ফ্লাইটে দিলস্নী যাবেন। দিলস্নীর ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা সেরে তিনি সরাসরি যাবেন মৌর্য শেরাটন হোটেলে। পর দিন সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ভারতে তাঁর আনুষ্ঠানিক কার্যসূচী শুরম্ন হবে। সেখানে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রী রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। একই দিন শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণা, রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সাৰাত করবেন। বিকেলে তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের সঙ্গে দেখা করবেন। দুপুরে ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফআইসিসিআই) ও কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই) আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় হায়দরাবাদ হাউসে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসবেন।
১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ভারতের ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং উপরাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ হামিদ আনসারির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর হোটেলে দেখা করবেন। বিকেলে এক অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে ইন্দিরা গান্ধী শানত্মি পুরস্কার তুলে দেবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী দিলস্নীতে বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।
সফরের শেষ দিন ১৩ জানুয়ারি তিনি একটি বিশেষ ফ্লাইটে রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর যাবেন। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে আজমীর শরীফে খাজা মইনুদ্দীন চিশতি (রহ)-এর মাজার জিয়ারত করবেন। মাজার জিয়ারতের পর তিনি জয়পুর হয়ে সরাসরি দেশে ফিরে আসবেন।

No comments

Powered by Blogger.