হাকালুকি ও তার পাখি

পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। হাকালুকি হাওড়ে খনন কাজ চালিয়ে এর গভীরতা ফিরিয়ে আনতে হবে। এসব দাবি উঠে এসেছে সোমবার মৌলভীবাজারে অনুষ্ঠিত এক সভায় বক্তাদের তরফ থেকে। পত্রিকান্তরে বুধবার প্রকাশিত এক খবরে জানা গেল, পরিবেশ অধিদফতরের উদ্যোগে সোমবার মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন ক


েউপকূলীয় ও জলাভূমির জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের সভায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, জলজ উদ্ভিদ আর জীববৈচিত্র্যে ভরপুর হাকালুকি হাওড়। কিন্তু কিছু অবিবেচক মানুষের কর্মকাণ্ডে বৃহত্তম হাওড়টি ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে যা আজ পরিবেশসহ সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসাবে চিহ্নিত। প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক অতিথি পাখি আসে হাকালুকিতে। পরিবেশ রার স্বার্থে সেসব পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। ঐ সভায় সংশ্লিষ্ট এলাকার বিলের লিজ বাতিল এবং খনন কাজের মাধ্যমে সেখানকার গভীরতা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরা হয়। ঐ অনুষ্ঠানের সভাপতি সেখানকার জেলা প্রশাসক পাখি শিকারিকে ধরিয়ে দিলে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলেও উলি্লখিত খবরে জানা গেল।
হাকালুকি অনেকবার পত্রপত্রিকার খবর হয়েছে। বলা হয়, এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাওড়। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণী। হাকালুকিসহ এ ধরনের হাওড় এবং ছোট-বড় সকল জলাশয় বা জলের আধার শুধু সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজনের জন্যই নয়, সারাদেশের মানুষের জন্য অমূল্য সম্পদস্বরূপ। আমাদের অনেক জলাশয়, ছোট নদী, খাল-বিল হারিয়ে গেছে। এগুলো হারিয়ে যাওয়ার অর্থ মাছসহ সব ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে হারিয়ে যাওয়া। দেশের বহু নদী-খাল দূষিতও হয়ে পড়েছে আবর্জনা তথা বর্জ্যের কারণে তবে দেশে এখন এ ব্যাপারে সচেতনতা বেড়েছে। নদী খনন, দূষণমুক্ত করা ইত্যাদি বিষয়েও বর্তমান সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, সেসব ব্যাপারে কাজও কিছু কিছু শুরু হয়েছে। আমরা মনে করি দেশের সব নদীকে বাঁচাতে হবে, রা করতে হবে সকল হাওড়, বিল তথা জলাশয়কে।
হাকালুকিতে প্রতিবছর শীতের মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখি আসে। দেশের অন্যান্য এলাকাতেও অনেক অতিথি পাখি আসে। অতিথি পাখি মারা নিষিদ্ধ হলেও অতীতে বহুবার দেখা গেছে অতিথি পাখি এলেই বিভিন্ন এলাকায় এক শ্রেণীর শিকারি তৎপর হয়ে ওঠে। কেউ বন্দুক দিয়ে, কেউ ফাঁদ পেতে পাখি ধরে। আবার কেউ কেউ বিষ দিয়ে পাখি মারে_ এমন খবরও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বেশ কিছু দিন আগে এই হাকালুকিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
শুকনো এলাকায়, মরু এলাকায় অতিথি পাখি আসে না। ওরা আসে জলাভূমিতে। জলাভূমিগুলো রা করতে হবে। প্রয়োজনে জল যাতে অনেক বেশি ধরে সেজন্য খনন করার উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে অতিথি পাখি শিখার বন্ধ করতে হবে। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক অতিথি পাখি শিকারিদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণার প্রশংসনীয় এই উদ্যোগে আশা করা যায় হাকালুকির অতিথি পাখিরা এবার নিরাপদে সেখানে শীতযাপন করতে পারবে। তবে এ ধরনের পুরস্কারই পাখি রার একমাত্র পথ নয়। এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার সকল কতর্ৃপকে এসব ব্যাপারে কড়া নজর দিতে হবে এবং সামগ্রিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সর্বপর্যায়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রার গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.