বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যদি না হতো by সুভাষ সিংহ রায়

এটা একটা বড় প্রশ্ন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যদি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করতেন তাহলে কি অবস্থা দাঁড়াত। এভাবে হয়ত অনেকেই আমরা ভাবি না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দেশে না ফিরে আসলে গোটা বিশ্ব বাংলাদেশকে এভাবে স্বীকৃত দিত না। কেমন ছিল সেদিন অর্থাৎ ১০ জানুয়ারির দিনটা।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির বিকেল বেলা ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানযোগে বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দর জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। বিমান থেকে বঙ্গবন্ধু দেখলেন গোটা ঢাকা শহরের সব মানুষ যেন বিমানবন্দরকে ঘিরে আছে। একজন বিদেশী সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর পাশেই বসা ছিলেন। হঠাৎ করে তিনি দেখলেন বঙ্গবন্ধু ডুকরে কেঁদে উঠলেন। তখন সেই সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, 'আপনার তো আনন্দের দিন। আপনি কাঁদছেন কেন? বঙ্গবন্ধু কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, এত যে মানুষ আমার অপোয়। আমি ওদের খাওয়াব কি? পাকিস্তানীরা তো সব ধ্বংস করে গেছে।' জাতির পিতা না হলে ওই মুহূর্তে এ রকম কথা বলা যায় না। বঙ্গবন্ধুর উদ্বেগ ছিল খুব স্বাভাবিক। রাস্তা নেই, ব্রিজ নেই, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কোন টাকা নেই। ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারির সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ১০ হাজার ৩৩৬ মিলিয়ন ডলার মজুদ আছে। হয়ত এই খবর অনেকের কাছে নেই_কিভাবে শুরু হয়েছিল আমাদের রাষ্ট্রীয় কোষাগার। কানাডা সরকার তখন বঙ্গবন্ধুকে আড়াই মিলিয়ন ডলারের স্বর্ণের একটা উপহার দেয়। সেটাই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে শুরু করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যদি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করতেন তাহলে কি অবস্থা হতো আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি? ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারির সেই বিকেলে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে খোলা ট্রাকে করে বঙ্গবন্ধু তখনকার রেসকোর্স ময়দানের দিকে এগোতে থাকেন। সেখানে অপোয় ছিল বিশাল এক জনসমুদ্র। এইটুকু পথ তাঁকে পাড়ি দিতে হয় আড়াই ঘণ্টায়। এখানে তিনি জাতির উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। তিনি বলেছিলেন, 'গত ৭ মার্চ আমি এই রেসকোর্সে বলেছিলাম 'দুর্গ গড়ে তোল।' আজ আবার বলছি 'আপনারা একতা বজায় রাখুন'। আমি বলেছিলাম, 'বাংলাদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো।' বাংলাদেশ আজ মুক্ত, স্বাধীন। একজন বাঙালী বেঁচে থাকতেও এই স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না। বাংলাদেশ ইতিহাসে স্বাধীন দেশরূপেই বেঁচে থাকবে। বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে পারে এমন কোন শক্তি নেই।" যেই রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাঙালী জাতিকে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছিলেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারিতে খুব স্পষ্ট করে বলেছিলেন, "আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, নেতা হিসেবে নয়, আপনাদের ভাই হিসেবে বলছি_আমাদের সাধারণ মানুষ যদি আশ্রয় না পায়, যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে_পূর্ণ হবে না। আমাদের তাই এখন অনেক কাজ করতে হবে। তোমরা, আমার ভাইয়েরা, গেরিলা হয়েছিলে দেশমাতার মুক্তির জন্য। তোমরা রক্ত দিয়েছ। তোমাদের রক্ত বৃথা যাবে না।" জাতির পিতা বলেই তিনি দেশের মাটিতে পা রেখেই বলতে পেরেছিলেন বাঙালী জাতির আত্মগরিমার কথা। "গত ৯ মাসে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাংলাকে বিরান করেছে। বাংলার লাখো মানুষের আজ খাবার নাই, অসংখ্য লোক গৃহহারা। এদের জন্য মানবতার খাতিরে আমরা সাহায্য চাই। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের প্রতি আমি সাহায্যের আবেদন জানাই। বিশ্বের সকল মুক্ত রাষ্ট্রকে অনুরোধ করছি_বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিন। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে মানুষ করোনি।' 'কবিগুরুর এই আপেকে আমরা মোচন করেছি। বাঙালী জাতি প্রমাণ করে দিয়েছে যে, তারা মানুষ, তারা প্রাণ দিতে জানে। এমন কাজ তারা এবার করেছে যার নজির ইতিহাসে নেই।' অথচ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাঁকে সপরিবারে রক্ত দিতে হলো। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে এদেশের মানুষ শুধু ইতিহাস দখলের ইতিহাস দেখেছে। দীর্ঘ সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে যে বাংলাদেশের জন্ম হয় তাঁর হত্যাকাণ্ডে জাতিগত সব অর্জন ভূলুণ্ঠিত হয়ে গেল। তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের মতো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জায়গায় দাঁড়িয়ে যেত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সনৎ কুমার এক প্রবন্ধে লিখেছিলেন, "বীরের মতো মৃতু্যবরণ করেছেন বঙ্গবন্ধু। যিশুখ্রীস্টের মতো। মহাত্মা গান্ধীর মতো। ঘাতক হরণ করতে পারেনি তাঁর আত্মমর্যাদা। হরণ করতে পারেনি তাঁর বাঙালী সত্তার পূর্ণতা। সৈন্য বর্মে বেষ্টিত কোন দুর্গ যদি হতো তাঁর বাসস্থল, তবে রা পেতেন হয়ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, কিন্তু জীবিত থাকতেন না বঙ্গবন্ধু, যাঁর সারা জীবনের আপোসহীন অহঙ্কারী কর্মে এই বাণী বার বার উচ্চারিত হয়েছে 'আমি তোমাদেরই লোক'। পতনে উত্থানে এই বাংলাদেশে জীবিত থাকবেন বঙ্গবন্ধু আগামী শতকেও। একদা গোখলে বলেছিলেন, 'বাংলা আজ যা চিন্তা করে, সারা ভারত চিন্তা করে তা আগামীকাল।' ত লাঞ্ছিত এই বাংলাদেশে দাঁড়িয়েও অযৌক্তিক নয় আজ সে কথার পুনরাবৃত্তি। সাধারণ মানুষের কল্যাণে চাইলে ঔপনিবেশিক দংশনদুষ্ট অর্থনৈতিক সামাজিক ব্যবস্থার পরির্তনের চেষ্টা ছাড়া এই উপমহাদেশে অন্য কোন পথ খোলা নেই। মানুষ এ কথা যত বেশি বুঝবে, ততই স্মরণ করবে বঙ্গবন্ধুকে। কারণ তিনি সবার অগ্রপথিক।" বঙ্গবন্ধু অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাবান জাতিতে পরিণত করতে পেরেছিলেন। জাতির মুক্তির জন্য সংগ্রামে তিনিই অধিনায়ক। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির পর অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে তিনি ছিলেন এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি দেশে ফিরে না আসলে অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার কেউ ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু স্বদেশে এসেছিলেন বলেই ভারতীয় সৈন্য অতি দ্রুত সময়ে প্রত্যাবর্তন করেছিল। পৃথিবীর কোন দেশের স্বাধীনতার পর এত কম সময়ে মিত্র শক্তি সহজে দেশ ছাড়ে না।
বঙ্গবন্ধুর উদারতার জন্য অনেকে আজও কথা বলতে পারেন। লেখাপড়া জানা লোকদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর বিশেষ দুর্বলতা ছিল। কোন কোন েেত্র মাত্রাতিরিক্ত স্নেহ ভালবাসা পেয়েছেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এদের মধ্যে অন্যতম। ব্যারিস্টার সাহেবের এক গ্রন্থের নাম 'বাংলাদেশ : শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল।' এই গ্রন্থের কিছুটা অংশ এই পরিসরে উদ্ধৃত করা যেতে পারে। "১৯৭৪ সালের দুর্ভিাবস্থা এবং অসংখ্য প্রাণহানির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার, পরিকল্পনা কমিশন এবং সরকারের অন্যান্য এজেন্সি থেকে যে সমস্ত যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছিল সেগুলো যতই তথ্যনির্ভর হোক না কেন, বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে সংঘটিত দুর্ভিরে ফলে অসংখ্য প্রাণহানিকে কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটা সত্য যে, ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৪ সাল অবধি বাংলাদেশের বুকে একের পর এক বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রলয়লীলা সংঘটিত হচ্ছিল। এ ছাড়া নয় মাসব্যাপী সশস্ত্র যুদ্ধ, যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসাবস্থা, সারা বিশ্বে খাদ্য সঙ্কট, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি, চালের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এগুলো সবই দুর্ভিরে এক একটি কারণ। কিন্তু এগুলোই বাংলাদেশে অসংখ্য প্রাণহরণকারী দুর্ভিরে জন্য এককভাবে দায়ী ছিল না।" বঙ্গবন্ধুর মৃতু্যর পর এ ব্যারিস্টার সাহেবরা বাঙালী জাতিকে অনেক তত্ত্বকথা শুনিয়েছেন। নিজেদের আখের গুছিয়েছেন, নিলর্জ্জভাবে রাজনীতির ডিগবাজি দেখিয়েছেন। এরা সময় সুযোগ পেলে বঙ্গবন্ধুর বিষোদগার করেছেন। আজকের রাজনীতির এই নীতিহীনতার জন্য এই ব্যারিস্টার অনেকখানি দায়ী। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের কার্যকারিতা বিলম্বিত করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন বলেই মওদুদ আহমদরা দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এই ব্যারিস্টার ভদ্রলোক নাকি কিছুদিন বঙ্গবন্ধুর গাড়িও চালিয়েছেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের মাত্র একদিন আগেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাাতপ্রার্থীদের নামের তালিকা দেখলে দেখা যায়, ১৩ আগস্টে তিনি দেখা করেছেন। এই মওদুদ আহমদরা স্বৈরাচারী রাজনীতির কুশীলব হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর অনেক বক্তৃতার কথা সবাই জানেন কিন্তু তাঁর নিজের লেখা প্রবন্ধ দেখার সুযোগ খুব কম লোকের হয়েছে। দুই বছর আগে 'এই মাটি এই দেশ' নামে বই প্রকাশিত হয়েছিল। এই বইতে বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা পাঁচটি প্রবন্ধ সঙ্কলিত হয়েছে। এই পাঁচটি প্রবন্ধের মধ্যে একটি লেখা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে নিয়ে। প্রবন্ধের শিরোনাম 'নেতাকে যেমন দেখিয়াছি'। এই প্রবন্ধের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করছি। "দেশ বিভাগের পর কলকাতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনপর্্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত থাকার সময় জনাব সোহরাওয়ার্দী গান্ধীজীর সঙ্গে বেলিয়াঘাটার একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে অবস্থান করিতেন। তখনও কলকাতার মুসলিম-নিধন যজ্ঞ পুরোদমে চলিতেছিল।্ একদিন প্রায় বিশ সহস্র লোকের এক দল জনতা তাঁহাকে হত্যা করিতে আসিল। কিন্তু ভয় পাওয়ার পাত্র তিনি নন। তাই, তিনিও বুক ফুলাইয়া তাহাদের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইলেন এবং তাহাদিগকে সম্মোধন করিয়া বলিলেন, "তোমরা যদি আমাকে হত্যা করিতে চাও, তবে এখনই কর। কিন্তু তৎপূর্বে আমাকে এই প্রতিশ্রুতি দিতে হইবে যে, আমার পরে তোমরা আর কোনও মুসলমানকে হত্যা করিবে না।" সোরগোল শুনিয়া গান্ধীজী বাহির হইয়া আসিয়া জনাব সোহরাওয়ার্দীর পাশে দাঁড়াইলেন এবং উন্মত্ত জনতাকে ল্য করে বলিলেন, "তোমরা যদি শহীদকে খুন করিতে চাও, তাহা হইলে আমাকে খুন কর। " এ কথা জনতার ওপর জাদুমন্ত্রের ন্যায় কাজ করল এবং তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে গেল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাত্মা গান্ধীর অহিংস রাজনীতির একনিষ্ঠ অনুরাগী ছিলেন। তাঁর নিজের লেখা পাঁচটি প্রবন্ধের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। এই মহামানুষটা দেশে প্রত্যাবর্তন না করলে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশের অবস্থা হতো ভয়াবহ। গোটা পৃথিবী এইভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াত না। দীর্ঘ মানুষটির দিকে সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকত। পৃথিবীর যেখানেই গেছেন সরকারপ্রধান কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানরা মুগ্ধ হয়েছেন। এমনকি যারা কখনও বাংলাদেশকে স্বীকৃত দিতে চায়নি তারাও অভিভূত হয়ে স্বীকৃত দিয়েছে। কেননা বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি ছিল খুবই স্বচ্ছ ও স্পষ্ট। তিনি বলতেন, 'আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবেশী ভারত, চীন, রাশিয়া, ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা ও বর্মাসহ সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। কোন বিরোধ দেখা দিলে শান্তিপূর্ণভাবে তার সমাধান হবে।' এইভাবে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন। আজকে পৃথিবীতে ধনী রাষ্ট্র ও দরিদ্র রাষ্ট্র বৈষম্যের বিরুদ্ধে অনেক বিশ্বনেতা সোচ্চার হয়েছেন। কিন্তু চার দশক আগে বঙ্গবন্ধু সেই কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন। এখন অনেকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের কথা বলছেন। কিন্তু সেই সময় বঙ্গবন্ধুর মতো করে অনেকে ভাবেননি। তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন, "আমি বৃহৎ শক্তিবর্গের প্রতি অস্ত্র প্রতিযোগিতা হ্রাস করে সে অর্থ দিয়ে দরিদ্র দেশের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। বর্তমানে অস্ত্র প্রতিয়োগিতায় ব্যয় করা বিপুল অর্থের এক-দশমাংশও যদি জনগণের জন্য খরচ করা হয় তবে পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য মুছে যাবে এবং তাতে বৃহৎ ব্যক্তিবর্গের মর্যাদাই বৃদ্ধি পাবে।" সিংহপুরুষ শেখ মুজিব দেশে ফিরে এসে দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে যায়। এটা অবশ্যই গবেষণার বিষয় বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কেউ একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নেতা হিসেবে শর্তহীন বহিসর্াহায্যের কথা বলতে পারতেন কিনা ? তাঁর দৃঢ়কণ্ঠের সেই আত্মপ্রত্যয়ী উচ্চারণ সমগ্র বাঙালী জাতিকে সব সময় পথ দেখাবে। 'দেশ গড়ার কাজে কেউ সাহায্য করতে চাইলে তা আমরা গ্রহণ করব। কিন্তু সে সাহায্য অবশ্যই হতে হবে নিষ্কণ্টক ও শর্তহীন। আমরা জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সব জাতির সমমর্যাদার নীতিতে আস্থাশীল। আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কেউ হস্তপে করবেন না, এটাই আমাদের কামনা।'
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
্রলশট্র্রধভথদমআথবটধফ.ডমব

No comments

Powered by Blogger.