উন্নত সার্ভিসের নামে বিমানের ঐতিহ্যবাহী লোগো পরিবর্তন- বিমানের তুঘলকি সিদ্ধানত্ম by ফিরোজ মান্না

বিমানের লোগো বদলে যাচ্ছে। বলাকা ঠিক রেখে লোগোর রংসহ বেশকিছু পরিবর্তন আনা হবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৩৮ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম লোগো ও রং পরিবর্তন হচ্ছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিক আলম মেহেদী জনকণ্ঠকে জানান,


সময়ের সঙ্গে মিল রেখে বিমানের রং ও লোগোতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোগো বা নামের পরিবর্তন হয়েছে। এটা করা দোষের কিছু নয়। বিমান পরিচালনা পর্ষদ কয়েক মাস আগে এ সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। এদিকে ব্রিটিশের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট বিভাগের সঙ্গে বাংলাদেশ সিভিল এ্যাভিয়েশনের বৃহস্পতিবার একটি চুক্তি স্বাৰর হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে এয়ারপোর্টের নিরাপত্তা এবং লন্ডনে বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি পেয়েছে। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সরাসরি লন্ডন ফ্লাইটও চালু হবে।
বিমানের এমডি এয়ার কমোডর (অব) জাকিউল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সভায় বিমানের লোগো ও রঙের কিছুটা পরিবর্তন আনার সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। বিমানকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য এই সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়। আকর্ষণ বাড়লে সার্ভিসও ভাল হবে। এদিকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে লিজে নেয়া বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ ঢাকায় আসবে। বাকি দু'টি উড়োজাহাজ আসবে এ মাসের শেষের দিকে। উড়োজাহাজগুলো আসার পর বন্ধ রম্নট চালু করা হবে। এয়ারলাইন্স বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পটুয়া কামরম্নল হাসানের করা লোগো বদল করলেই কি বিমানের সার্ভিস ভাল হবে? বিমান পরিচালনা বোর্ডের এটা একটা তুঘলকি সিদ্ধানত্ম। আগে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বিমানের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হবে। নাম আর লোগো বদল করে কোন লাভ হবে না।
আধুনিক প্রজম্মের উড়োজাহাজ ছাড়া বিমান ব্যবসায় পিছিয়ে পড়ছে। পুরনো উড়োজাহাজ দিয়ে ব্যবসা সফল হচ্ছে না। অন্যান্য এয়ারলাইন্স নতুন প্রজম্মের উড়োজাহাজ দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে লাভবান হলেও বিমানকে লোকসান গুনতে হয়। বর্তমানে বিমান বহরে ৮টি উড়োজাহাজ সচল রয়েছে। এরমধ্যে ৪টি ডিসি-১০, দু'টি এয়ারবাস ও দু'টি এফ-২৮।
বিমান সূত্র জানিয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজের মনোগ্রাম বা লোগো পরিবর্তন করা হচ্ছে। এছাড়া উড়োজাহাজের গায়ে ইংরেজীতে 'বাংলাদেশ' ও বাংলায় 'বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স' লেখা থাকবে। গোটা উড়োজাহাজ থাকবে সাধা রঙের। উড়োজাহাজের পিছনের দিকে লোগোর রঙে লালের সঙ্গে সবুজ রং ব্যবহার করা হবে। এয়ারলাইন্স বিশেষজ্ঞরা বলেন, লোগো ও রং পরিবর্তন করে কোন লাভ হবে না। আগে পরিবর্তন করতে হবে ম্যানেজমেন্ট। ম্যানেজমেন্টে বসে আছে সব অযোগ্য, অদৰ লোকজন। যারা এয়ারলাইন্স ব্যবসার তেমন কিছুই জানেন না। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিমানকে লাভজনক করার জন্য পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি (পিএলসি) করা হয়। এতে বিমান সার্ভিসের কোন উন্নতি হয়নি। বাড়েনি সেবার মান। বিমানও লাভজনক হয়নি। তবে পিএলসি করে বিমানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা স্বাধীন ও ৰমতাবান হয়েছেন। তাদের কারো কাছে এখন আর জবাবদিহি করতে হয় না। নিজেদের ইচ্ছেমতো যা খুশি তাই করতে পারেন। বিমান পরিচালনায় অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ না হলে প্রতিষ্ঠানটি কোনদিনও লাভজনক হবে না। ম্যানেজমেন্ট ঠিক না করে লোগো বদলের কোন দরকার নেই। তাছাড়া পটুয়া কামরম্নল হাসানের অাঁকা লোগোটি একটি ঐতিহ্য বহন করছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠা হয়। সেই সময়ের লোগোটি ইতিহাসের অংশ হয়ে রয়েছে। এটা পরিবর্তন করা হলে ঐতিহ্যকে মুছে ফেলা হবে। লোগো পরিবর্তন করলেই কি বিমানের উন্নতি হবে। তা তো হবে না। তাহলে কেন লোগোর পরিবর্তন করতে হবে। এমন প্রশ্ন তুলেছেন এয়ারলাইন্স বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিক আলম মেহেদী বলেন, ব্রিটিশ ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছিল। দু'দিন আলোচনার পর তারা সিভিল এ্যাভিয়েশনের সঙ্গে একটি এমওইউ স্বাৰর করেছে। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলো এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে ৩১টি ফ্লাইটের ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ পাওয়া যাবে। আগে ছিল ১৭টি ফ্লাইটের ফ্রিকোয়েন্সি। এছাড়া ইউকে থেকে সপ্তাহে ৫টি ফ্লাইট মধ্যপ্রাচ্য হয়ে দেশে যাতায়াত করত (ফ্রি পথ ফ্রীডম ট্রাফিক)। এখন এই সুবিধা পাওয়া যাবে সপ্তাহে ১০টি ফ্লাইটে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার ৰেত্রেও ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট বিভাগ সিভিল এ্যাভিয়েশন যৌথভাবে কাজ করবে। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সরাসরি লন্ডন ফ্লাইট চালু করা হবে। এই চুক্তির ফলে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলে বিমান সচিব দাবি করেন।

No comments

Powered by Blogger.