কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা- দুই নেতার দ্বন্দ্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে অস্থিরতা by গাজীউল হক

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা দুই নেতার অনুসারী হয়ে কাজ করছেন। ওই দুই নেতা হলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক সাংসদ আমিন উর রশিদ এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল হক।


দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কুমিল্লায় বিএনপি দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলন হয়। এতে বেগম রাবেয়া চৌধুরীকে সভাপতি, আমিন উর রশিদকে সাধারণ সম্পাদক ও মোস্তাক মিয়াকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। তাঁরা প্রত্যেকেই আমিন উর রশিদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মনিরুল হকের অনুসারীরা কেউই শীর্ষ তিনটি পদে না থাকায় কোন্দল আরও বেড়ে যায়। এর পর থেকে তাঁরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছেন। দলটির অঙ্গসংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলেও বিভক্তি ছড়িয়ে পড়ে। ওই সম্মেলনের পাঁচ দিন পর ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি কেন্দ্র থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে মনিরুল হকের অনুসারীদের সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, সমবায় সম্পাদক ও সদস্যপদে রাখা হয়। এর মধ্যে মো. মনিরুল হককে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
এদিকে ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে দুই পক্ষের অস্ত্রবাজি ও ককটেল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট যুবদলের কমিটি গঠন করা হয়। এতে আমিরুজ্জামান সভাপতি, আশিকুর রহমান মাহমুদ সাধারণ সম্পাদক ও মাঈনউদ্দিন সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাঁরা সবাই আমিন উর রশিদের অনুসারী। প্রায় দুই বছরেও ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি।
গত বছরের আগস্ট মাসে মেয়র মনিরুল হকের অনুসারী মোজাহিদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও আমিন উর রশিদের অনুসারী আবদুল্লাহ আল মোমেনকে সদস্যসচিব করে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৮১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিও এখন পর্যন্ত অপূর্ণাঙ্গ।
দলীয় সূত্র আরও জানায়, ২০১০ সালের ২৭ জুলাই দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের নয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার সময় বলা হয়, একই বছরের ১১ আগস্টের মধ্যে ৮১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। কিন্তু দুই বছর পার হলেও ওই কমিটি গঠন করা হয়নি। এ কারণে সংগঠনের পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সংগঠনও হয়ে পড়ছে নিয়ন্ত্রণহীন।
ছাত্রদলের একাধিক নেতা-কর্মী জানান, দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে বিএনপিতে অস্থিরতা বেড়েছে। এটা দলের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। কোন্দল না মেটালে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে।
এ ব্যাপারে আমিন উর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেকোনো জেলার তুলনায় কুমিল্লায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কমিটি অত্যন্ত শক্তিশালী। কেন্দ্রীয় সব কর্মসূচি কুমিল্লায় ভালোভাবেই পালিত হচ্ছে। বিএনপি অনেক বড় দল। এখানে দল ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে কিছু ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে, এটা বড় কোনো সমস্যা নয়।’ তিনি দাবি করেন, ‘মেয়রের সঙ্গে কোনো ভুল-বোঝাবুঝি নেই। কারও সঙ্গে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব নেই, আছে প্রতিযোগিতা। দলের সব কমিটিই তৃণমূল থেকে সক্রিয়।’ এ ব্যাপারে মনিরুল হক বলেন, ‘ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মামলা দিয়ে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। একতরফাভাবে যুবদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএনপির কমিটিও এক পক্ষ থেকে হয়েছে। এতে করে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা বাদ পড়েছেন। তাই দলে দ্বিধাবিভক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। এটার জন্য কারা দায়ী, আপনারাই খুঁজে বের করুন।’
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরী বলেন, ‘দলে কোনো ধরনের কোন্দল নেই। সবাই বিএনপির পক্ষে কাজ করে। আশা করি জাতীয় নির্বাচনের আগেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’

No comments

Powered by Blogger.