পলিথিন আর পলিথিন, বুড়িগঙ্গায় মিলছে কেবল পলিথিন- খননের দ্বিতীয় দিন

বৃহস্পতিবার সারাদিন চলেছে বুড়িগঙ্গার বর্জ্য অপসারণের কাজ। অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখা যাচ্ছে এ কাজের সময়। নদীর যত গভীরে কাটার মেশিন নামানো হচ্ছে, মিলছে পলিথিনসহ আবর্জনা। মাটির নিচে শুধুই পলিথিনের আসত্মরণ। এদিকে প্রথম দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পুরোদমে শুরম্ন হয়েছে বুড়িগঙ্গা থেকে বর্জর্্য অপসারণের কাজ।


একযোগে চারটি কাটার মেশিন ব্যবহার করে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু, পূর্ব আগানগর ও বাদামতলীর ঘাটের আশপাশে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যনত্ম চলছে বর্জ্য অপসারণের কাজ। দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু থেকে শ্যামবাজার পর্যনত্ম এক কিলোমিটার এলাকা থেকে ১৯ লাখ টনের বেশি বর্জ্য নদী থেকে অপসারণের করা হবে।
নদী থেকে বর্জ্য অপসারণে জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ কাটার মেশিন। ৪টি ক্রেন জাহাজে করে এসব কাটার মেশিন দিয়ে বর্জ্য অপসারণের কাজ চলছে। এছাড়া বর্জ্য ডাম্পিংয়ের জন্য আলাদা বর্জ্যবাহী জাহাজ ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব জাহাজের বর্জ্য ধারণৰমতা ৪শ' থেকে ৫শ' টনের মধ্যে। বর্জ্য অপসারণকারীদের হিসাবমতে বৃহস্পতিবার ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এসব বর্জ্যের মধ্যে পলিথিন পস্নাস্টিক দ্রব্য ছাড়াও রয়েছে বিষাক্ত পচামাটি। এ আবর্জনা সরাসরি ফেলা হচ্ছে কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নে বছিলার লুটেরচর এলাকায়।
পরিবেশ আইনবিদ সমিতির নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজয়ানা হাসান বলেন, সরকার নদীদূষণমুক্ত করার জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি একটি ভাল দিক। তবে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করতে পারলে সরকারের এ অভিযান কতটা সফল হবে তা বলা মুশকিল। দীর্ঘ উদাসীনতার কারণে বাজারে আবার পলিথিনে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, এর পাশাপাশি সরকার ভাল বর্জ্য ব্যবস্থপনা গড়ে না তুলতে পারলে শুধু বর্জ্য অপসারণ করে কোন লাভ হবে না। পরিবেশবিদ আবু নাসের খান বলেন, সরকার যে কাজ শুরম্ন করেছে তা পরিবেশবিদদের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি ভাল উদ্যোগ। পরিবেশবিদরা দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। সরকার এখন এ বিষয়টি গুরম্নত্ব দিয়ে ভাবছে। কিন্তু অসুবিধা রয়ে গেছে যে বর্জ্য অপসারণ করা হবে তা কোথায় রাখা হবে। শুধু এক কিলোমিটার এলাকা থেকে অপসারণ করা হবে ১৯ লাখ টন বর্জ্য। এ বিশাল বর্জ্য কোথায় রাখা হবে সে বিষয়ে সরকারের কোন ব্যবস্থাপনা নেই। ভাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে না পারলে সরকারের এ উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। এছাড়া নদীর তীর থেকে কারখানার বর্জ্য উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, সরকার যে জরিপ কাজ করেছে তার ঠিকমতো করা হয়নি। এছাড়া বুড়িগঙ্গায় উচ্ছেদ চালানো হলেও বিআইডবিস্নউটিএ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নদী দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ট্র্নানজিট শেড। এগুলো রোধ করা না গেলে সরকারের এ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।
এদিকে সরেজমিনে বর্জ্য অপসারণকালে দেখা যায় মাঝ নদীসহ বুড়িগঙ্গার সব স্থান থেকেই পলিথিনের বর্জ্য মিলছে। বর্জ্য অপসারণকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীর তলদেশে স্থানভেদে ৩ ফুট থেকে ৫ ফুট পর্যনত্ম পলিথিনসহ অন্যান্য বর্জ্য মিলছে। তবে তীর এলাকায় এ বর্জ্যের পরিমাণ অনেক বেশি। বিশেষ করে নদীর উত্তর পাড়ে বাদামতলী ওয়াইজঘাট, বাকল্যান্ড বাঁধ, বিআইডবিস্নউটিএ'র পন্টুনের নিচে থেকে শ্যামবাজার পর্যনত্ম আবর্জনার ভাগাড় গড়ে উঠেছে। নদীর তীরের এসব এলাকা ঘিরেই বেশি ব্যবসা বাণিজ্য চলছে। আহসান মঞ্জিলের পূর্বপাশে বুড়িগঙ্গা ভবনের নিচে রয়েছে ফলের আড়ত। এ আড়ত ঘিরে প্রতিদিন কয়েক শ' কোট টাকার ব্যবসাবাণিজ্য চলে। এ আড়তের আশপাশেই নদীর ভেতরে গড়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। কোন নিয়মনীতি ছাড়াই এখান কলার কাদি, বিভিন্ন ফলের কার্টন, নারকেলের ছোবড়া ও অন্যান্য আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এগুলো সরাসরি নদীতে গিয়ে মিশছে। নদীর দৰিণ পারে গিয়ে দেখা যায় দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু থেকে পূর্ব আগানগরের বিভিন্ন এলকায় নদীর ভেতরে একাধিক আবর্জনার সত্মূপ গড়ে উঠেছে। পলিথিন, বাসাবাড়ির আবর্জনা প্রতিদিন নদীর মধ্যে ফেলার কারণে এসব এলাকা ময়লার সত্মূপে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে পূর্ব আগানগরে নদীর ধার আবাসিক প্রকল্পের পাশে নদী কয়েক শ' ফুট নিচ পর্যনত্ম পলিথিন ও অন্যান্য আবর্জনার কারণে নদী একেবারে ভরাট হয়ে গেছে। বুধবার এখান থেকেই পলিথিন অপসারণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান। বৃহস্পতিবার এখানে সারাদিন চলে ময়লা অপসারণের কাজ। অপসারণকালে দেখা যায়, নদীর যত গভীরে কাটার মেশিন নামানো হচ্ছে পলিথিনসহ অন্যান্য আবর্জনা মিলছে। সহজে এখানে মাটির তলদেশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জায়গাটি দেখে প্রথমে মনে হয়েছিল কেউ মাটি ফেলে নদী ভরাট করে জায়গা দখল করেছে। কিনুত্ম কয়েক একজন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, পুরো এলাকায় শুধু বর্জ্য ফেলার কারণে ভরাট হয়ে গেছে। মাটির নিচে শুধু পলিথিনের আসত্মরণ। এই আসত্মরণের ভেতর দিয়ে একটি পয়োনালীর দূষিত পানি সরাসরি নদীতে এসে পড়ছে। সব মিলিয়ে অযত্ন-অবহেলায় বুড়িগঙ্গা পরিণত হয়েছে একটি আবর্জনার ভাগাড়ে।
বর্জ্য অপসারণের সঙ্গে নিয়োজিত কয়েকজন জানায়, দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা থেকে শ্যামবাজার পর্যনত্ম এক কিলোমিটার এলাকায় নদীর তলদেশ বর্জ্য অপসারণ করতে এক মাস সময় লাগবে। এরপর কামরাঙ্গীর চর হয়ে তুরাগ নদীর দিকে অপসারণ কাজ চলবে। ক্রেন অপারেটর মোঃ কামরম্নল হোসেন জানান, বর্জ্য অপসারণে যে জাহাজ ব্যবহার করা হচ্ছে তার প্রতিটির ধারণৰমতা ৪শ' থেকে ৫শ' টনের মধ্যে। তবে আকারভেদে কম-বেশি রয়েছে। প্রতিটির কাটার মেশিনের অধীনে একাধিক বর্জ্যবাহী জাহাজ ডাম্পিংয়ের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। ৪টি কাটার মেশিনের মাধ্যমে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টন পর্যনত্ম বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি জানান, মাঝনদীসহ প্রায় সব খানেই স্থানভেদে ৩ ফুট থেকে ৫ ফুট পর্যনত্ম পলিথিনের আসত্মরণ পাওয়া যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.