প্রগতির পথে এগিয়ে যাবার আহ্বান উদীচী ও খেলাঘরের উৎসবে- সংস্কৃতি সংবাদ

দীর্ঘ ৯ বছর আগে যশোরে সাংস্কৃতিক সম্মেলন আয়োজন করেছিল উদীচী। এরপর থেকে দুই বছর অনত্মর অনত্মর এ সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও সেটি তারা করতে পারেনি। তবে আশার কথা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরম্ন হয়েছে বহু কাঙ্ৰিত এ সম্মেলন।


বিকেলে এর উদ্বোধন করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান। গোষ্ঠীর সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ইদুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন এর সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল আলম। আলোচনা করেন শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক কামাল লোহানী, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক কাজী আবু জাফর সিদ্দিকী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, বাংলাদেশ গ্রম্নপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল ঝুনা চৌধুরী এবং বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা।
তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করে বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেন, এটা পরিবর্তনের যুগ। কিছুদিন আগেও কৃষক একটি ফসলের চাষ করত। হাতে থাকা বাকি সময়টা তারা কাটিয়ে দিত বিনোদনমূলক কর্মকা-ে। কিন্তু এখন সে অবস্থা নেই। কৃষক চার থেকে পাঁচটা ফসল করতে ব্যসত্ম থাকে। নগরের ব্যসত্মতা আরও বেশি। এসব কারণে সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য খর্ব হচ্ছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, সকলকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। উদীচীর দীর্ঘ পথচলার প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাধা আসবেই। এতে আমাদের মতো প্রবীণরা ভরকে যেতে পারেন কিন্তু এ সংগঠনের তরম্নণ কমর্ীদের এতে পিছু হটার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশিস্নষ্টতা শুভকর নয় মনত্মব্য করে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে স্বনির্ভর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সংগঠনের বিভিন্ন কাজের উলেস্নখ করে এর সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ইদু বলেন, উদীচী একটি সাংস্কৃতিক দল। এর কমর্ীরা নাচ, গান, আবৃত্তি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে মূলত মেহনতি মানুষের কথা বলে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে সম্মেলনে ঘোষণা দেন তিনি। আলোচনা শেষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত কমর্ীদের নিয়ে একটি আনন্দ শুভাযাত্রা বের করা হয়। এ সময় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের লোকজ সুরের সঙ্গে নেচে-গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করে তারা।
সন্ধ্যায় শুরম্ন হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিন ঢেঁকি ও নৌকাবাইচের গান পরিবেশন করে জামালপুরের একটি দল। গাজীপুর থেকে আগতরা পরিবেশন করে পুঁথিপাঠ। গম্ভীরা পরিবেশন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিল্পীরা। টাঙ্গাইল শাখার পরিবেশনায় ছিল গণসঙ্গীত। এছাড়াও রাজবাড়ী, কালিয়াকৈর, ঝিনাইদহ, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, মাদারীপুর, বরগুনা ও ঢাকার শিল্পীরা বিভিন্ন আয়োজনে মাতিয়ে রাখেন শহীদ মিনার চত্বর।
চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার থেকে শুরম্ন হয়েছে চতুর্থ আনত্মর্জাতিক প্রামাণ্যচিত্র উৎসব। আলোকচিত্রী নাইবউদ্দিন আহমেদ ও নওয়াজেশ আহমেদের পরিবারের সদস্যরা প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে সন্ধ্যায় এর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, উৎসব পরিচালক মানজারে হাসিন ও নাফিজ আহমেদ আলভী।
আলোচনা শেষে ভারতের প্রামাণ্যচিত্র 'ওয়াগা', বাংলাদেশের 'ইন ফ্রেম এ্যান্ড আউট অব ফ্রেম', যুক্তরাজ্যের 'সেপ্টেম্বর-১১' ও মালয়েশিয়ার 'টেন ইয়ার বিফোর ইন্ডিপেন্ডেন্টস' প্রদর্শন করা হয়। আজ শুক্রবার থেকে সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে প্রদর্শনী। প্রতিদিন বিকেল ৩টা, ৫টা ও ৭টায় এসব প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবে দেশী-বিদেশী পরিচালকদের নির্মিত মোট ২৮টি প্রামাণ্যচিত্র দেখানোর কথা রয়েছে। ছবিগুলোতে বিভিন্ন দেশের মুক্তিসংগ্রাম, মানবাধিকার, যুদ্ধাপরাধ ইত্যাদি ইসু্যকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। উৎসবে বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ১৩টি দেশের প্রামাণ্যচিত্র দেখার সুযোগ পাবেন দর্শকরা। আনত্মর্জাতিক বিভাগে দেখানো হবে ১৫টি প্রামাণ্যচিত্র। ৯টি দেখানো হবে বাংলাদেশ প্যানোরমা বিভাগে। এ ছাড়াও থাকবে রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ। এ বিভাগে দেখানো হবে ৪টি প্রামাণ্যচিত্র। বাংলাদেশের নবীন-প্রবীণ নির্মাতাদের প্রামাণ্যচিত্র ছাড়াও উৎসবে আমেরিকার নির্মাতা অলিভার স্টোন, ভারতের নির্মাতা সুপ্রিয় সেন, যুক্তরাজ্যের নির্মাতা কেন লোয়েচ, জার্মানির নির্মাতা নিকোলাস গ্যেইহটেনসহ বেশ কয়েক খ্যাতিমান নির্মাতার ছবি প্রদর্শিত হবে। প্রামাণ্যচিত্র ধারার অন্যতম জনক শিল্পী ইয়োরিস ইভেন্সের একটি নির্বাচিত প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা থাকবে উৎসবে।
খেলাঘরের উৎসব শুরম্ন
কেন্দ্রীয় খেলাঘরের আসরের তিন দিনব্যাপী উৎসব বৃহস্পতিবার থেকে শিশু একাডেমীতে শুরম্ন হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। সংগঠনের সভাপতিম-লীর চেয়ারম্যান পান্না কায়সারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, কলামিস্ট আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, কবি আসাদ চৌধুরী, সাংবাদিক আমিনুল হক বাদশা, সর্বভারতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন 'সব পেয়েছির আসর'র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রকাশ চ্যাটার্জী, নদীয়ার সংগঠক সুবিনয় রায়, খেলাঘরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগরের সভাপতি শ্যামল দত্ত, কেন্দ্রীয় সভাপতিম-লীর সদস্য কামাল চৌধুরী এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভঁূইয়া।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সাজেদা চৌধুরী বলেন, পাকিসত্মানীতে নীতিতে বিশ্বাসী খালেদা জিয়া ৩০ লাখ শহীদের রক্তেভেজা পতাকা নিজামী-মুজাহিদদের গাড়ি-বাড়িতে তুলে দিয়ে শহীদদের রক্তের অসম্মান করেছিলেন। নতুন প্রজন্ম অবশ্যই এর বিচার করবে। দেশ রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ দেশে মুক্তিযোদ্ধার। বাঙালির। এ দেশে রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের কোন স্থান নেই। দেশের পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত ও সংবিধানকে রক্ষা করতে খেলাঘরের শিশুদের সঠিক ভাবে গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।
প্রখ্যাত সাংবাদিক কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, খেলাঘরের মতো আরও অনেক শিশু-কিশোর সংগঠন গড়ে তুলে সাম্প্রদায়িক চক্রগুলোর বিরম্নদ্ধে রম্নখে দাঁড়াতে হবে এবং দেশকে প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, মৌলবাদী চক্র সেকু্যলার বাংলাদেশের অসত্মিত্ব ধ্বংস করতে চেয়েও সফল হয়নি। তারা নারী স্বাধীনতা রম্নখতে এবং শিশু-কিশোরদের ভুল পথে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। স্বাধীনতার বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরে নতুন প্রজন্মকে সাময়িকভাবে বিভ্রানত্ম করতে পারলেও এটা স্থায়ীভাবে সম্ভব হবে না বলেও মনত্মব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শেষপর্বে খেলাঘরের ভাই-বোনদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এর আগে শিশু একাডেমী প্রাঙ্গণে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি জাতীয় পতাকা এবং অধ্যাপিকা পান্না কায়সার সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলন করেন।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ শুক্র ও কাল শনিবার শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১৮টি ইভেন্টে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শনিবার শেষ হবে উৎসব।
শিল্পকলায় মঞ্চস্থ হলো রাঢ়াঙ ও সী মোরগ
শিল্পকলা একাডেমীতে বৃহস্পতিবার মঞ্চস্থ' হয় দু'টি নাটক। আরণ্যকের জনপ্রিয় নাটক 'সী মোরগ' মঞ্চস্থ' হয় এঙ্পেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। এর নির্দেশনা দিয়েছেন মামুনুর রশীদ। একই দিন জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ' হয় বাংলাদেশ থিয়েটারের নাটক 'রাঢ়াঙ'। এটি ছিল নাটকের ২শ' ৬তম প্রদর্শনী। আসাদুলস্নাহ ফারাজি রচিত নাটকের নির্দেশক হুমায়ূন কবির হিমু।

No comments

Powered by Blogger.