পাহাড়ে কোমরতাঁত শিল্পের কদর

পার্বত্য জনপদে ব্যাপকভাবে কোমরতাঁত শিল্পের কদর বৃদ্ধি পেয়েছে। কোমরতাঁতের কাপড়ের চাহিদা এতদিন শুধু আদিবাসীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে কোমরতাঁত কাপড়ের চাহিদা বাঙালীদের মধ্যেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে এই কাপড়ের চাহিদা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।


এক দশক আগেও রাঙ্গামাটি শহরে হাতেগোনা কয়েকটি তাঁত কাপড়ের দোকান ছিল।বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে ওই কাপড়ের রয়েছে শতাধিক দোকান।
কোমরতাঁতের চাহিদা এই অঞ্চলে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন কোমরতাঁতের পাশাপাশি এখানে তাঁত শিল্পের প্রসার ঘটেছে। বিদেশেও এই শিল্পের কদর বেড়েছে। বর্তমানে এখান থেকে মধ্যপ্রচ্যে ও ইউরোপে কোমরতাঁত শিল্পের তৈরি পোশাক রফতানি হচ্ছে। রাঙ্গামাটির প্রতিটা উপজাতীয় তাঁতশিল্পের দোকানে তাঁতের কাপড়ের পাশাপাশি কোমরতাঁতের কাপড়ও রয়েছে। একসময় এই অঞ্চলের আদিবাসী মহিলারা শুধু কোমরতাঁতের কাপড় পরিধান করত। এখন পাহাড়ী বাঙালী সববয়সী নারী-পুরম্নষ এই কাপড় পরিধান করে। এই চাহিদার অন্যতম কারণ হলো এধরনের কাপড়ের ডিজাইন অত্যনত্ম সুন্দর এবং টেকসই। যার ফলে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে এই অঞ্চলের আদিবাসী নারীরা ঐতিহ্য অনুসারে কোমরতাঁতের মাধ্যমে তাদের সারা বছরের কাপড়ের চাহিদা পূরণ করত। এখন সব ধরনের আধুনিক ডিজাইনের টেকসই কাপড় তৈরি হচ্ছে বিধায় এই শিল্পের কদর আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। একসময় এই এলাকায় বসবাসকারী তংচঙ্গ্যা ও চাকমা আদিবাসী নারী জনগোষ্ঠী এই শিল্পে কাজ করত। এখন বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে সকল আদিবাসী মহিলা কোমরতাঁতের কাজ করে। এই শিল্পের বিকাশের জন্য ইতোমধ্যে বিসিক ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা আদিবাসী নারীদের এ বিষয়ে প্রশিণ দিয়ে যাচ্ছে। এধরনের একটি প্রশিণ রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে এনজিও সংস্থা আইপ্যাক গত ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যনত্ম ছয় দিনব্যাপী কোমরতাঁত বুনন প্রশিণ সম্পন্ন করেছে। এতে ১২ আদিবাসী মহিলা অংশগ্রহণ করে। এই প্রশিণটি পরিচালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার তেনজিং চাকমা। এই কোমরতাঁত বুনন প্রশিণের মাধ্যমে ওই এলাকার নারীরা তাদের প্রচলিত পোশাক তৈরির লোকায়ত জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করতে সম হয়েছে। নানা প্রশিণের পর তৈরি পোশাকগুলো চলতি ফ্যাশন উপযোগী করায় এই পোশাকের কদর আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সব পোশাকে আদিবাসীদের সংস্কৃতিক ছাপ থাকায় এগুলোর চাহিদাও বেশি। এই সম্ভাবনাময় কোমরতাঁত শিল্পকে রা করার জন্য সরকারীভাবে কোমরতাঁতিদের প্রশিণের আওতায় এনে ঋণ সহায়তা দিলে এই অঞ্চলের নারীরা একদিকে যেমন স্বাবলম্বী হবে। অপরদিকে এই খাতে প্রচুর বৈদিক মুদ্রাও অর্জন হবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
_মোহাম্মদ আলী, রাঙ্গামাটি

No comments

Powered by Blogger.