পুলিশের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

দলীয় পরিচয় ও বিবেচনার উর্ধে উঠে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ৫ ডিসেম্বর পুলিশ সপ্তাহ-২০১০-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়।


এ জন্য পুলিশ সদস্যদের দতা, স্বচ্ছতা, নিরপেতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি। পুলিশ জনগণের সেবক। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর ওপর ন্যস্ত। কিন্তু বিভিন্ন সময় পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ কোন নতুন ঘটনা নয়। মানুষ পুলিশকে বন্ধু মনে না করে ত্রেবিশেষে শুত্রু ও ভাবে। কতিপয় পুলিশের কারণে পুরো বাহিনীর নাম কলঙ্কিত হচ্ছে। রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের কারণে পুলিশের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতার মানসিকতা গড়ে ওঠেনি। জনগণের করের টাকায় পুলিশের বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়। অথচ সেই জনগণই ত্রে বিশেষে পুলিশের কাছ থেকে কাঙ্তি সেবা পায় না। পুলিশ জনগণের সেবা না করে সরকারের ব্যক্তি বিশেষের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করে। অথচ তা কোন সুশীল সমাজে কাম্য নয়। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্য পুলিশের আদলে আধা-সামরিক বাহিনী আছে। এই বাহিনীর মূল কাজ হচ্ছে জনগণের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও সেবা প্রদান করা।
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, মতার অপব্যবহার, হীন ব্যক্তিস্বার্থ ইত্যাদি সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড আমাদের দেশে নতুন কোন ঘটনা নয়। বিভিন্ন সময় কতিপয় রাজনীতিক , আমলা , প্রশাসন থেকে শুরু করে ছাত্রদের পর্যন্ত এসব সমাজবিরোধী অপতৎপরতায় জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। প্রশাসনকে রাজনৈতিক ও দলীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করার নজিরও এখানে নতুন নয়। ফলে সরকারী, বেসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার উচ্চ পর্যায় থেকে নিচু স্তর পর্যন্ত দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। বর্তমান সরকার দিনবদলের সরকার। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের সীমাহীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও দুর্নীতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জনগণ মহাজোট সরকারকে ব্যাপকভাবে বিজয়ী করে। জনগণের সেই আশা-আকাঙ্ার বাস্তব প্রতিফলন ঘটানো সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। বর্তমান সরকার সমাজকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত করতে যে বদ্ধপরিকর সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সরকার গঠনের প্রথম থেকেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলীয় মন্ত্রী-এমপি ও নেতা-কর্মীদের সন্ত্রাসী ও দুর্নীতি কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সতর্ক করে আসছেন। মঙ্গলবার রাজারবাগে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের একই আহ্বান জানান তিনি। সরকার যে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তা স্পষ্ট প্রতীয়মান।
সরকারের নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদ, আইন প্রায়োগকারী সংস্থা ও জনসাধারণের প্রত্য সহযোগিতায় দেশকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব। সমাজ থেকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দূর করার জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে। শুধু মুখে বললে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দূর হবে না। এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ ও কার্যকর পদপে গ্রহণ। পুলিশ প্রশাসনের কাজে অনেক েেত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির যে অভাব বিদ্যমান তা দূর করতে হবে। সব বিষয়ে মনিটরিং ব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে। পুলিশের কোন অভাব-অভিযোগ থাকলে তাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। সর্বোপরি পুলিশের মনোভঙ্গিতে পরিবর্তন ছাড়া সন্ত্রাস পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়। ২৫ মার্চ ১৯৭১ হানাদার বাহিনী সর্বপ্রথম যে সব স্থান বা যাদের ওপর হামলা চালায় তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। দেশমাতৃকা রার্থে সেদিন হানাদারদের বিরুদ্ধে বুকের রক্ত দিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও। সেই গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক পুলিশ বাহিনীর কাছে স্বাধীন দেশের জনগণ সেবাপরায়ণ ও আত্মত্যাগী মনোভাব সব সময় কামনা করে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় উজ্জীবিত হয়ে পুলিশ বাহিনী দল-মতের উর্ধে উঠে সমাজকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত করবে_ এই প্রত্যাশা সকলের।

No comments

Powered by Blogger.