পরাজিত হলেও নিমর্ূল হয়নি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী, ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে- জাসদের জাতীয় সম্মেলন শুরম্ন

সমাজতন্ত্র ও সামাজিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা, জঙ্গী ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে শুরম্ন হয়েছে জাসদের দুই দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন। রাজধানীর পল্টন ময়দানে বৃহস্পতিবার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াত সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে পরাজিত করা


হলেও নিমর্ূল করা সম্ভব হয়নি। তারা এখনও তৎপর। দেশের উন্নয়নের পথে অনত্মরায় হিসেবে কাজ করছে পরাজিত শক্তি। তাই বিপর্যয়ের আগে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। বক্তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গুবন্ধু হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। মোকাবেলা করতে হবে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারলে আগামীতে আবারও বিজয় সুনিশ্চিত। তাঁরা '৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়া ও চার মূলনীতি প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। বক্তারা বলেন, বিরোধী দল থেকে পাকিসত্মানপন্থীদের সরিয়ে ফেলতে হবে। সন্ত্রাস- সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে মোকাবেলা করতে দৰিণ এশিয়ার সব দেশের মানুষের ঐক্য জরম্নরী। জাসদের কর্মসূচী দৰিণ এশিয়ার মানুষের মুক্তির পথ দেখাবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতাদের পৰ থেকে সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে পাঠানো হয় শুভেচ্ছা বার্তা।
অনুষ্ঠানে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটকে পরাজিত করলেও তারা ঘাপটি মেরে বসে আছে। পুরোপুরি বিজয় অর্জন করতে হলে বিরোধী দল বিএনপি থেকে পাকিসত্মানপন্থীদের সরিয়ে ফেলতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে নিতে হবে বিএনপি। সাম্প্রদায়িকতা, লুটপাটতন্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদ_ এই তিন শত্রম্নর বিরম্নদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় দ্রম্নত কার্যকর করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যে কোন মূলে '৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। এজন্য ঐক্য জরম্নরী।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর পৰে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠ করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সন্ত্রাসের রাজনীতি চালু করেছিল। টেনে ধরেছিল প্রগতির চাকা। গণতন্ত্র থেমে গিয়েছিল মাঝপথে। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অত্যচার, ধর্ষণসহ নানা অপকর্মে অতিষ্ঠ ছিল দেশের মানুষ। সংগ্রাম করে আমাদের বিজয় অর্জন করতে হয়েছে। ওরা চেয়েছিল দেশকে পাকিসত্মান ও মৌলবাদী রাষ্ট্র বানাতে। গণতন্ত্রের উত্থান সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। বর্তমান সরকার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, নানা বাধা অতিক্রম করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তবে পথ পাড়ি দেয়া এত সহজ নয়। কারণ, পরাজিত শক্তি বসে নেই।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, জনগণের সংগ্রামে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পরাজিত হলেও মৌলবাদ নির্মূল হয়নি। সবাই মিলে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে হবে। দরিদ্র, শোষণ ও বঞ্চনা দূরে ঠেলে দিতে হবে। এগিয়ে নিতে হবে সমাজতন্ত্র। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রী ড. মর্তুজা হোসেন বলেন, ন্যায়, নীতি, সাম্য ও ভালবাসা না থাকলে সমাজতন্ত্র আসতে পারে না। সাম্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদী শক্তি পৃথিবীজুড়েই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাদের বিরম্নদ্ধে লড়াই করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সর্বভারতীয় ফরওয়ার্ড বস্নকের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, জাসদের কর্মসূচী এশিয়ার মানুষের মুক্তির পথ দেখাবে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যতদিন থাকবে ততদিন গণতন্ত্র কোথাও নিরাপদ নয়। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত সিং হো চাল, আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মৃনাল কানত্মি দাশ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, গণফোরাম নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য, গণআজাদী লীগের সভাপতি আবদুস সামাদ, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি আফজাল হোসেন, সাম্যবাদী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু আহমেদ সাহাবুদ্দিন, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন, জাসদ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাফর সাজ্জাদ, কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দিন খান বাদল, শিরিন আখতার, শরীফ নুরম্নল আম্বিয়া এবং ইন্দুনন্দন দত্ত ।
সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধি, দলের আনত্মর্জাতিক বিভাগের চেয়ারম্যান ড. করণ সিং এমপি, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি, পাকিসত্মান পিপলস পার্টি, নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গিরিজা প্রসাদ কৈরালাসহ বিভিন্ন দেশ ও রাজনৈতিক দলের আনত্মর্জাতিক পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। আজ সকাল থেকে মহানগর নাট্যমঞ্চে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ঘোষণা করা হবে নতুন কমিটি। সন্ধ্যায় দুই দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.