বিআইডব্লিউটিএর কাজ কী?- বন্ধ নেই নদী দখল

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাজ কি নদী দখলমুক্ত করা, না দখলদারদের উৎসাহিত করা, সেটা সত্যিই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষে কাঁচপুর থেকে যে সোয়া চার কিলোমিটার দীর্ঘ ওয়াকওয়ে যেভাবে তৈরি হচ্ছে, তাতে এ ধরনের প্রশ্ন খুবই সংগত।


প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী নদীর যে ঢাল তা থেকে প্রায় ৬০ ফুট ভেতরে এই ওয়াকওয়ে তৈরি হচ্ছে। ফলে ঢাল থেকে ওয়াকওয়ের মাঝখানের জায়গাটি যে আসলে দখলদারদের খপ্পরে চলে যাবে, সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারণ, একই ধরনের অভিজ্ঞতা অতীতে রয়েছে। এর পরও জেনেশুনে বিআইডব্লিউটিএ যখন এই কাজ করছে, তখন তাদের অবস্থান দখলদারদের পক্ষে বলেই মেনে নিতে হচ্ছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ এ ধরনের একটি অপকর্ম বা আত্মঘাতী কাজ করলে সেটা ঠেকানো বা দেখার কি কেউ নেই!
নদীর জায়গা বাইরে রেখে এর আগেও পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ধরনের ওয়াকওয়ে তৈরি করেছিল বুড়িগঙ্গার দক্ষিণ পাড়ে। তখন এ নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর তরফ থেকে আপত্তি করা হলেও কাজ অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ায় তা বাতিল করা সম্ভব হয়নি। নদীর তীর থেকে বাঁধ পর্যন্ত সে জায়গা এখন দখলদারদের কবলে চলে গেছে। তখন বিআইডব্লিউটিএ যে আপত্তি জানিয়েছিল সেই একই কাজ এখন নিজেরাই করছে। শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গা দখল করে বালু ব্যবসার সঙ্গে যাঁরা জড়িত রয়েছেন, তাঁরা চান ওয়াকওয়েটি নদীর ঢাল থেকে অন্তত ৬০ ফুট দূরে তৈরি হোক। বিআইডব্লিউটিএ তাদের কথা মেনে নিয়েই নির্মাণকাজ শুরু করে দিয়েছে। এতে প্রায় ৪৩ বিঘা জায়গা দখলদারদের কবলে যাওয়ার পথ তৈরি হলো। কর্তৃপক্ষ থেকে যতই বলা হোক এই জায়গায় গাছ লাগানো হবে, দখলমুক্ত রাখতে নিয়মিত তদারকি করা হবে—অতীত অভিজ্ঞতার কারণে এটা বিশ্বাস করা কঠিন।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যেহেতু নদীর ঢাল থেকে ১৫০ ফুট পর্যন্ত কোনো কোনো স্থাপনা বা ওয়াকওয়ে তৈরির সুযোগ নেই এবং এতে যেহেতু নদীর জায়গা দখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই এই ওয়াকওয়ে তৈরি পরিকল্পনায় সংশোধনী আনতে হবে। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএকে যারা নিয়ন্ত্রণ করে, সেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

No comments

Powered by Blogger.