দরপতন দিয়েই শেষ হলো আরেক সপ্তাহ

দেশের শেয়ারবাজারে গতকাল বৃহস্পতিবারও দরপতন ঘটেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক এদিন প্রায় ১ শতাংশ বা ৪৭ পয়েন্ট কমেছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে প্রায় ১০৯ পয়েন্ট।


লেনদেনের শেষ ৩০ মিনিটের উত্থান শেষ পর্যন্ত দুই বাজারে সূচকের বড় ধরনের পতন থামিয়েছে। এ নিয়ে টানা দুদিন বাজারে দরপতন ঘটল। সূচকের পাশাপাশি দুই স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবশ্য এই দরপতনের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বলতে পারেননি।
যোগাযোগ করা হলে সিএসইর সাবেক সভাপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত থাকার অভিজ্ঞতা থেকে দেখছি ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের বাজার-পরিস্থিতি ও বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালে কোম্পানিভিত্তিক শেয়ারের দামের উত্থান-পতন ঘটত। তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নানা মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের ভিত্তিতে দামের হেরফের হতো। যেসব বিনিয়োগকারীর যোগাযোগ সক্ষমতা অনেক বেশি তারাই মূলত কোম্পানির অভ্যন্তরীণ খবরাখবরের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতেন, তার সুফলও পেতেন। এখনো তেমনটাই ঘটছে।’
ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাজারে দরপতন ঘটার পর এখন হাই নেটওয়ার্ক বিনিয়োগকারীদের অনেকেই আবার বাজারে সক্রিয় হয়েছেন। কারণ তাঁরা হয়তো মনে করছেন টানা পতনের ফলে বাজার এখন বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায় চলে এসেছে। এসব বিনিয়োগকারীর কেউ কেউ কোনো কোনো শেয়ার থেকে মুনাফাও পাচ্ছেন। এভাবে বিনিয়োগকারীরা যখন দেখবে বিনিয়োগ থেকে মুনাফা আসতে শুরু করেছে তখন বাজারে তাঁদের অংশগ্রহণ বাড়বে। এভাবেই আসলে শেয়ারবাজার নিজস্ব গতিতে ফিরবে। সারা বিশ্বের শেয়ারবাজারে এমনটাই ঘটে।’
সিএসইর সাবেক সভাপতির মতে, এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের উচিত সূচক দেখে নয়, শেয়ারের দাম দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া। কারণ দরপতনের মধ্যেও কিছু কিছু শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পায়। তাই সূচকের পতন দেখে ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
মূল্যসূচকের ঊর্ধ্বগতি দিয়ে এদিন ঢাকার বাজারে লেনদেন শুরু হয়। প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই সাধারণ সূচক প্রায় ৪০ পয়েন্ট বেড়ে চার হাজার ৪১১ পয়েন্টে ওঠে। এর পরই শুরু হয় পতন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সূচকের পতনের হারও বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ডিএসইর সাধারণ সূচক আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৮৬ পয়েন্ট কমে যায়। তখন লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বাড়ার তালিকায় ছিল মাত্র ২০-২৫টি কোম্পানি। শেষ ৩০ মিনিটে গিয়ে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়। এই সময়ে দর বৃদ্ধির তালিকাটি দীর্ঘ হওয়ায় সূচকেরও কিছুটা উন্নতি ঘটে।
ঢাকার বাজারে এদিন ২৬৩টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১৭৭টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে ৬৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির দাম। এদিন ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫২৭ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা কম। দিন শেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় চার হাজার ৩২৫ পয়েন্টে।
চট্টগ্রামের বাজারে ১৮৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১৩৬টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র ৩৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৫টির দাম। দিনশেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৯ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে চার কোটি টাকা কম। এদিন সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৬ পয়েন্টে।

No comments

Powered by Blogger.