চরম সঙ্কটে জ্যোতি বসু, মনমোহন দেখে গেলেন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বৃহস্পতিবার কলকাতার হাসপাতালে জীবন-মৃতু্যর সঙ্গে লড়ে যাওয়া অসুস্থ জ্যোতি বসুকে দেখে গেছেন। ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনে বসুর চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাঠিয়ে সাহায্য করারও প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন তিনি। প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।


কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। নিউমোনিয়ায় আক্রানত্ম হলে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক এ মুখ্যমন্ত্রীকে গত শুক্রবার হাসপাতালে নেয়া হয়।
ভারতের বেসরকারী টেলিভিশন এনডিটিডি জানায়, অসুস্থ কমিউনিস্ট নেতাকে দেখতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বৃহস্পতিবার কলকাতা যান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আছেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিও।
লোকসভার সাবেক স্পীকার সোমনাথ চ্যাটার্জি মনমোহনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা প্রক্রিয়া নিয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বসুর চিকিৎসার জন্য অন্য কোন ডাক্তারের সঙ্গে শলাপরামর্শের দরকার পড়লে তাঁকে জানানো মাত্রই তিনি ভারতের যে কোন জায়গা থেকেই ডাক্তার পাঠানোর সব বন্দোবসত্ম করবেন বলে আশ্বাস দেন। বসুকে দেখতে হাসপাতালে ২০ মিনিট কাটিয়ে মনমোহন দিলস্নীতে ফিরে যান।
জ্যোতি বসুর দল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত ও পলিটবু্যরোর সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি কলকাতা আসছেন। এর আগে আরেক পলিটবু্যরো সদস্য বৃন্দা কারাত জ্যোতি বসুকে হাসপাতালে দেখতে যান। অসুস্থ কমিউনিস্ট নেতার ব্যক্তিগত সহকারী জয়কেষ্ট ঘোষ বার্তা সংস্থা পিটিআইকে জানান, বুধবার জ্যোতি বসুর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়া হয়। বৃহস্পতিবারও তাঁর অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। ৯৫ বছর বয়সী জ্যোতি বসু সল্টলেকের এএমআরআই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একটি মেডিক্যাল বোর্ডের অধীনে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
টানা ২৩ বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানোর পর অসুস্থতার কারণে ২০০০ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেন জ্যোতি বসু। এরপর থেকে শারীরিক অবস্থা নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যদিয়েই তাঁকে চলতে হচ্ছে। গত বছর লোকসভা নির্বাচনের সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে ভোট দিতে পারেননি তিনি।
১৯১৪ সালের ৮ জুলাই জন্ম নেয়া জ্যোতি বসুর পৈত্রিক নিবাস বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। অবিভক্ত ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হিসেবে বাংলাদেশে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার ৰেত্রেও ভূমিকা রাখেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশেও বেশ কয়েকবার আসেন। ১০ বছর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এসেছিল জ্যোতি বসুর সামনে। কিন্তু দলীয় সিদ্ধানত্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব নেননি।
এদিকে সল্টলেকে যে বেসরকারী হাসপাতালে ১ জানুয়ারি থেকে জ্যোতি বসুর চিকিৎসা চলছে, দলে দলে মানুষ সেখানে ভিড় জমান। ভিড়ে হাসপাতালের সামনের রাসত্মায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ গার্ডরেল দিয়ে হাসপাতালে ঢোকার রাসত্মা ঘিরে দেয়।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বলেন, সংবাদমাধ্যম গুজব ছড়াচ্ছে। গুজবে কান দেবেন না। জ্যোতি বসু আগের থেকে ভাল আছেন। তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। সন্ধ্যায় জ্যোতি বসুর ছেলে চন্দনও জানান, বাবার অবস্থা আগের থেকে ভাল। গুজব ছড়াচ্ছে শুনে বিকেল ৩টা নাগাদ জ্যোতি বসুর আপ্ত সহায়ক জয়কৃষ্ণ ঘোষ হাসপাতালের গেটে এসে বলেন, জ্যোতি বসুর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বিমান বসু যান দলের রাজ্য দফতরে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যসহ সম্পাদকম-লীর কয়েকজন সদস্য দলের প্রবীণ নেতার চিকিৎসা নিয়ে আলোচনায় বসেন।
মেডিক্যাল টিমের প্রধান ডা. অজিত মাইতি বুধবার সন্ধ্যার দিকে জানান, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ব্রঙ্কোস্কপি করা হয়েছে। রিপোর্ট ভাল। সকালে রক্তচাপ একেবারে নিচে নেমে গিয়েছিল। বিকেলের দিকে রক্তচাপের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তাঁর প্রস্রাব হয়েছে। শ্বাসকষ্টও সামান্য কমেছে।
এর আগে মেডিক্যাল বুলেটিনে বলা হয়েছিল, জ্যোতি বসুর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। কিন্তু ভোর থেকে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। হাসপাতাল থেকে ডা. মাইতিকে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভেন্টিলেটরে রাখার পরামর্শ দেন। খুব সকালেই মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে যান। বেলা বাড়তেই হাসপাতালে হাজির হন একাধিক মন্ত্রী। দুপুরে ক্রীড়ামন্ত্রী কানত্মি গঙ্গোপাধ্যায় প্রবীণ নেতাকে দেখে বেরিয়ে এসে ধরা গলায় বলেন, অবস্থা ভাল নয়।
বিকেলে দমদমে রেলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার আগে রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জ্যোতি বসুকে দেখে যান। রেলমন্ত্রী বলেন, জ্যোতি বসু চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। মমতা গত শনিবারও দেখতে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় যান বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সকালেই গিয়েছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য, তৃণমূলের এমপি সোমেন মিত্র, লোকসভার প্রাক্তন স্পীকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন ফুটবলার চুনী গোস্বামী, অভিনেতা মিঠুন চক্রবতর্ী, মুখ্যসচিব অশোকমোহন চক্রবতর্ী, শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া। যান অন্য মন্ত্রী এবং বামফ্রন্টের শরিক দলের নেতারাও। হাসপাতালের সামনে ভিড় করেছিলেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সিপিএম নেতাকমর্ী-সমর্থকরা। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন একদা জ্যোতি বসুর নির্বাচনী এজেন্ট, দৰিণ ২৪ পরগনার সাতগাছিয়ার গোকুল বৈরাগী। সকলেই জানতে আগ্রহী, জ্যোতি বসু কেমন আছেন। সূত্র_ বিডিনিউজ ২৪ডটকম/বর্তমান পত্রিকা।

No comments

Powered by Blogger.