উপাচার্যকে রেখে বুয়েটে স্থিতি আসবে না- তাঁকেও সরে যেতে হবে

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সাপেক্ষে শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। গত বুধবার শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, বুয়েটে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে


এবং কোনো শিক্ষার্থীকে প্রশাসনিক, শিক্ষাগত কিংবা শারীরিকভাবে হয়রানি করা হবে না। এর আগে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি সহ-উপাচার্য হাবিবুর রহমানকে সরানো এবং মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলেননি। তাঁরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে গতকাল শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের এই গণতান্ত্রিক ও উদার মানসিকতা প্রশংসার দাবি রাখে। এখন মন্ত্রীরই দায়িত্ব, বুয়েট শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতিগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন করা এবং সেখানে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা।
লক্ষণীয়, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাওয়ার কথা বললেও উপাচার্য এস এম নজরুল ইসলামের পদত্যাগের দাবি থেকে তাঁরা সরে আসেননি। এ ক্ষেত্রে তাঁরা হয়তো শিক্ষামন্ত্রীকে যৌক্তিক সময় দিতেও রাজি আছেন। কিন্তু সেই যৌক্তিক সময় অনির্ধারিত হতে পারে না।
আমরা মনে করি, এই মুহূর্তে সহ-উপাচার্য হাবিবুর রহমানকে সরালে সমস্যার আপাতত সমাধান মিলতে পারে। কিন্তু স্থায়ী সমাধানের জন্য উপাচার্যের পদত্যাগের বিকল্প নেই। যেখানে প্রায় সব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী উপাচার্যের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন, সেখানে তাঁর থাকার যৌক্তিকতা দেখি না। সরকারই বা কেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করে তাঁকে বহাল রাখতে চাইছে? বিষয়টি নিয়ে সরকার যত জেদাজেদি করবে, ততই ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। ইতিমধ্যে কয়েক মাস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বেশ পিছিয়ে পড়েছেন। দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনকে এভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া যায় না। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-প্রক্রিয়া শুরু হলেও বুয়েটে হতে পারেনি অচলাবস্থার কারণে।
এই অবস্থায় উপাচার্য যত দ্রুত পদত্যাগ করেন ততই মঙ্গল। আজ হোক কাল হোক, তাঁকে সরে যেতেই হবে। স্বৈরশাসকেরা গায়ের জোরে দেশ চালাতে পারলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করার পর কোনো উপাচার্যের পক্ষে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক দিনও থাকা উচিত নয়। বুয়েটের উপাচার্যকে বলব, দেয়ালের ভাষা পড়ুন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আগেই মানসম্মান নিয়ে বিদায় হোন।
আর শেষ পর্যন্ত যদি উপাচার্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করেন, সরকারের কর্তব্য হবে তাঁকে অবিলম্বে অপসারণ করা। একজন ব্যক্তির জন্য দেশের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।

No comments

Powered by Blogger.