পিছিয়ে পড়ার দায় সরকারেরই- ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা

ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় ১০ ধাপ নিচে নেমে যাওয়া আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি অশুভ সংকেত। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে অধিকাংশ দেশ যখন জোরকদমে সামনে এগিয়ে চলেছে, তখন বাংলাদেশের এই পিছিয়ে পড়ার প্রবণতা আমাদের উদ্বিগ্ন ও বিচলিত না করে পারে না।


গত বুধবার একযোগে বিশ্বের ১৪৪টি দেশে বিশ্ব প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদন-২০১২ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৮। গত বছর ছিল ১০৮। এতে ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর সূচক আরও নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতায় ১১২তম স্থান থেকে ১২৭তম স্থানে নেমে গেছে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আগে যেখানে ছিল ৭৫, বর্তমানে তা ১০০-তে এসে দাঁড়িয়েছে। এর পাশাপাশি পণ্য ও শ্রমবাজার যথাক্রমে ১৪ ও ১৭ ধাপ কমে আসা নাজুক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনারই প্রতিফলন; যদিও এ সময়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও বাজার সৃষ্টিতে উন্নতি লক্ষ করা গেছে। কিন্তু অর্থনীতির বিশাল পরিধিতে দু-একটি ইতিবাচক সূচক পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক হবে না।
দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা চিহ্নিত করেছে সেগুলো হলো: দুর্বল অবকাঠামো, বিনিয়োগের জন্য অর্থ না পাওয়া, নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা, মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, টাকার অবমূল্যায়ন, করহার, শিক্ষিত কর্মীর অভাব, শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা ও দুর্বল জনস্বাস্থ্যসেবা। এই সমস্যাগুলো বহু পুরোনো হলেও প্রতিকারে কোনো সরকারই দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা লক্ষ করা গেছে। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও ২০১০-১১ অর্থবছরে সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচিগুলো অর্থনীতিকে চাঙা রেখেছিল। কিন্তু মূল্যস্ফীতি ও অবকাঠামোগত সমস্যা, বিশেষ করে গ্যাস-বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করা যায়নি। এর দায় সরকার এড়াতে পারে না।
প্রতিবেদনে ২০১১ সালে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দার জন্য অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকেও দায়ী করা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে সেই অস্থিতিশীলতা আরও বাড়বে, যদি না জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার ও বিরোধী দল দ্রুত একটি মতৈক্যে পৌঁছাতে পারে। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও প্রকাশ করেছে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই।
ব্যবসা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার বড় কারণ দুর্নীতি। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি যে কতটা সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে, সাম্প্রতিক সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেঙ্কারিই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে মহাজোট ক্ষমতায় এলেও সরকারের কার্যক্রমে তার প্রতিফলন নেই।
অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও আর্থিক খাতের সক্ষমতা বাড়ানো, সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই ব্যবসায় প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ নিজের অবস্থান সংহত করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.