নোংরা রাজনীতির কাছে জিম্মি পদ্মা সেতু- ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

দেশীয় নোংরা রাজনীতির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পদ্মা সেতু। বিদেশী দাতা গোষ্ঠীর সহায়তার প্রতিশ্রুত দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এটি অবকাঠামোগত সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ‘বাংলাদেশ ট্রাবল্ড ওয়াটারস’ শিরোনামে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ম্যাগাজিন ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ পত্রিকার ৮ সেপ্টম্বরের সংখ্যায় এমনই মন্তব্য করা হয়েছে।


বিদেশী দাতা গোষ্ঠীর সহায়তার ৩শ’ কোটি ডলারের এই সেতুটি গঙ্গার শাখা নদী হিসেবে পরিচিত পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত হওয়ার কথা। দাতাদের স্বপ্নের এই সেতুটি এখন মৃতপ্রায়। বাংলাদেশের দারিদ্র্যপীড়িত দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রায় তিন কোটি জনগোষ্ঠীকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করাই ছিল এই সেতুর প্রধান উদ্দেশ্য। প্রস্তাবিত ৩.৮ মাইলের এই সেতুটি ভারতে ঢোকার প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের এই বিরাট অংশকে এই সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বড় ধরনের অবদান রাখত। সরকারী বিভিন্ন পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেতুটি বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধিতে ১.২ ভাগ অবদান রাখতে সক্ষম হতো। রাজধানীর ৪০ কিলোমিটার দূরে প্রস্তাবিত এই সেতুর ডিজাইনে চার লেনের সঙ্গে ট্রেন লাইনসহ গ্যাস পাইপ লাইনের বিধান ছিল। তবে বাংলাদেশের সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিশ্রুত ১.২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি বাতিল করে। দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমানের বিরুদ্ধেও। তবে তিনি কোন দুর্নীতি করেননি বলে জানিয়েছেন। তিনি পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বললেই কেবল তিনি পদত্যাগ করবেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মসিউর রহমানকে বাদ দিলেও সাধারণত বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে অভিযোগ থেকে ছাড় পাওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে।
‘বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতির কাছে জিম্মি বিদেশী অর্থায়নের সেতুটি’-এই উপ-শিরোনামে প্রকাশিত ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ ম্যাগাজিনের এ রিপোর্টে বলা হয়েছে, তবে এ সেতুতে অর্থায়নের বেলায় বিশ্বব্যাংকের চেয়ে এখন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংককে (এডিবি) বেশি আগ্রহী দেখা যাচ্ছে। এডিবি সেতুটি নির্মাণের ক্ষেত্রে এখন নতুন জীবন দিতে সরব রয়েছে। এই সেতুর আরেক অর্থ যোগানদাতা জাপান ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সিও (জাইকা) তাদের দরজা খোলা রেখেছে। তবে সেতুতে অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক ফের সম্মত হলে বাংলাদেশ সরকার এখন আরও কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করাতে প্রস্তুত। তবে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল করার পেছনে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ইউনূসকে দায়ী করছেন। শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের কাছে ভিক্ষা চাইবেন না বলেও জানিয়েছেন।
আগামী ২০১৩ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা যে আর সম্ভব হচ্ছে না সেটা ভেবে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এখন আরও বেশি হতাশ হয়ে পড়েছে। তবে আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যদি শেখ হাসিনার চির প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার বিএনপি ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে তাহলে সেটা শেখ হাসিনার জন্য আরও আতঙ্কজনক হবে (বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের কোন দল দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হয় না)। পরিশেষে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থ ছাড়ে বিশ্বব্যাংককে সম্মত করানো ছাড়া এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার সামনে আর কোন বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.