গেমসকম মেলা by ইব্রাহিম নোমান

জার্মানির কোলন শহরে শুরু হয়েছে বিশ্বের কম্পিউটার গেমের সবচেয়ে বড় মেলা ‘গেমসকম’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামজাদা গেম নির্মাতা এবং গেমাররা অংশ নিচ্ছে এই মেলায়।সত্তরের দশকে প্রকাশিত ‘পিং’ নামক গেমটি হয়ত এই প্রজন্মের অনেকেই খেলেননি।


কিন্তু ‘প্যাক-ম্যান’? আশির দশকের এই ক্লাসিক গেমটি এখনও অনেকের মুঠোফোনে ঘুরে বেড়ায়। কম্পিউটারের পর্দায় অবশ্য এই গেমটি এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না। কেননা, এখনকার কম্পিউটার গেমাররা আর শুধু গুটিকয়েক বাটন টিপে যান্ত্রিক চরিত্রগুলোকে পরিচালনার মধ্যে আটকে নেই। এখনকার গেমগুলো বরং অনেক বেশি জীবন্ত। বলতে গেলে বাস্তবতার ছোঁয়া এখন পুরোটাই পাওয়া যায় কম্পিউটার গেমে। ফিফার সর্বশেষ সিরিজের গেমগুলো দেখলে কোনটা যে আসল আর কোনটা কম্পিউটার শিল্পীর হাতে গড়াÑতা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। কম্পিউটার গেমের বাজার দ্রুত পরিবর্তনশীল। সত্তরের দেশকের ‘পিং’ আর বর্তমানের ‘এনএফএস’-এর মধ্যকার ফারাক আকাশপাতাল। গেম বাজারের সর্বশেষ হালহকিকতের জানান দিতে জার্মানির কোলন শহরে অনুষ্ঠিত হয় ‘গেমসকম’। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক এই আয়োজনে গত বছর প্রায় তিন লাখ দর্শনার্থী হাজির ছিলেন। বিশ্বের বড় বড় গেম নির্মাতাদের অনেকেই এই মেলায় তাদের সর্বশেষ পণ্য প্রদর্শন করেন।
গেমসকমের আয়োজক টিম আন্দ্রেস এই বিষয়ে বলেন, ‘এটা অত্যন্ত উদ্ভাবনী শিল্প। প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন উন্নয়ন হচ্ছে এই শিল্পে। বিশ্বের গেম বাজারের বৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে হচ্ছে এবং একইসঙ্গে এটি দ্রুত পরিবর্তনশীল একটি বাজার। অল্পবয়স্ক থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ পর্যন্ত সবারই এই শিল্পের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। এবং তারাই গেম শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
কোলনের গেমসকমের ভেন্যুটি বিশাল বড়। সহজ কথায় বলতে গেলে, ১৪টি ফুটবল মাঠ এক করলে এত বড় জায়গা তৈরি হতে পারে। এই ভেন্যুর প্রতিই এখন নজর সবার। জার্মানিতে প্রতি তিনজনের একজন নিয়মিত কম্পিউটার গেম চর্চা করেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এখানেও কম্পিউটার গেমের নতুন নতুন ভক্ত তৈরি হচ্ছে। অবশ্য কনসোল বা পিসি গেমের চাহিদা জার্মানিতে এখন পড়তির দিকে। গেমাররা এখন ইন্টারনেট এবং মুঠোফোনেই বেশি গেম খেলছেন। গেম নির্মাতারাও তাই মুঠোফোনের উপযোগী গেম তৈরির দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন। সারা বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল এই মেলায়। সে সব দেশের প্রায় ৪২০টি সংস্থা উপস্থিত ছিল তাদের পণ্য নিয়ে। নতুন ধরনের ভিডিও এবং কম্পিউটার গেমস বের করেছে অসংখ্য কোম্পানিÑসেসবই ছিল মেলার মূল আকর্ষণ। মেলাটি দুই ভাগ করা ছিল। একটি অংশে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। আরেকটি অংশের নাম ছিল এন্টারটেইনমেন্ট এরিয়া। সেখানেই আসল ভিড়, ছিল খেলার সুযোগ, দেখার মতো অনেক কিছু, দেখানোর মতো নতুন খেলা। মেলায় সবচেয়ে বেশি এসেছিল অল্প বয়স্ক ছেলেমেয়েরা। ৮ থেকে ২২ বছরের ছেলে মেয়েদের চোখে পড়েছে সবচেয়ে বেশি।
১৪ বছর বয়সী য়োহানেস মেলায় এসেছে তার বন্ধুদের সঙ্গে। সে বলল, আমি কম্পিউটার গেমস ভীষণ পছন্দ করি। বেশ ভালো খেলি। রোলিংয়ের খেলাগুলো আমার সবচেয়ে প্রিয়। এতে আমি বস। এখানে কোন খেলা কেনা যাচ্ছে না, তবে পরে কেনা যাবে এবং আমি ইতোমধ্যেই কয়েকটি দেখে রেখেছি। পিরানহা বাইট্স নতুন খেলা। এটা আমাকে কিনতেই হবে।
ফুটবল এবং সকার ছিল কম্পিউটার গেমসের নতুন সংযোজন। দুই দলে ভাগ করে খেলার আয়োজন করা হয়েছিল মেলাতেই। প্রতিটি দলে থাকবে মাত্র পাঁচজন। সত্যিকার মাঠের সঙ্গে এই ফুটবল খেলার পার্থক্য হলো এই খেলার মেয়াদ মাত্র দশ মিনিট। খেলোয়াড়রা খেলেছে বড় স্ক্রিনে সামনে বসে খেলা উপভোগ করেছে অন্তত ৪০০ দর্শক। এবং সেই ভিড়ে শুধু ছেলে নয় মেয়েরাও ছিল। চিৎকার চেঁচামেচিতে তারাই এগিয়ে ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল কম্পিউটারে নয় খেলা হচ্ছে মাঠে ! দু’দলের পরনে আবার রঙিন জার্সিও ছিল। সঙ্গে ছিল দলের টীম ম্যানেজার এবং কোচ। এরা ছিল বুন্দেসলীগা অর্থাৎ জার্মান ফুটবল লীগের পেশাদার খেলোয়াড়।
১১ বছরের মেয়ে ট্রিয়ানার জানাল, কি এই গেমসকম, কেন সে এখানে। সে জানাল, গেমসকমে এসেছে অনেক ধরনের নতুন খেলা যেগুলো এখনও বাজারে আসেনি। এখানে এসব খেলা যে-কেউ খেলে দেখতে পারে। আমার প্রিয় খেলা ওয়াটার ওয়ারক্র্যাফ্ট। এটি ব্লিজার্ডের একটি খেলা। পুতুল খেলা এখন পুরনো হয়ে গেছে। সেগুলো আমার জন্য নয়। কোন খেলা কিনব কিনা তা নির্ভর করছে আমার মায়ের ওপর। তবে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেই আমি সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়ি আমার গেমসগুলো নিয়ে। আমাদের একটি বদ্ধমূল ধারণা, এসব কম্পিউটার গেমস ছেলেমেয়েদের হিংস্র করে তোলে। তারা আদবকায়দা ভুলে যায়। হয় রুক্ষ স্বভাবের। তবে এই মেলায় দেখা গেছে বেশ কিছু খেলা খেলতে হলে সঙ্গীর প্রয়োজন। তখন পরিচিত হওয়া যায় অনেকের সঙ্গে। ২৩ বছর বয়সের নাভিদ এ পর্যন্ত একবার ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভিডিও গেমস খেলায়। চার বার হয়েছে জার্মান চ্যাম্পিয়ন। শুরুতে বাবা-মা প্রচ- বিরক্ত হতেন, কিন্তু এখন তারা সত্যিই গর্বিত। নাভিদ বলল, আমি অনেক ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার গেমসের ভক্ত। সুপার নিনটেন্ডো দিয়েই আমার এ খেলা শুরু। এরপর এগিয়ে যাই কাউন্টার স্ট্রাইকের মতো খেলাগুলোর দিকে। তবে ২০০০ সাল থেকে আমি মনোযোগ দিয়ে খেলতে থাকি। তখনই জার্মানির হয়ে খেলার সুযোগ পাই। আমি সপ্তাহে অন্তত ২০ ঘণ্টা খেলি। আমার কোচ এবং ম্যানেজারও রয়েছেন। ২০০৬ সালে দুবাইতে আমরা দারুণভাবে জিতেছিলাম। পুরস্কার হিসেবে আমরা পেয়েছিলাম ৫০ হাজার ইউরো, সবাই একটি করে কম্পিউটার এবং একটি রোলেক্স ঘড়ি।
এসব খেলার দাম কিন্তু অনেক। কয়েক শ’ ইউরো পর্যন্ত একেকটি গেমের দাম গড়াতে পারে। বড় দিন বা ঈদ এগিয়ে আসছে। সবাই এখনই বেছে নিচ্ছে, দেখে নিচ্ছে বড় দিনের উপহার হিসেবে বাবা-মায়ের কাছ থেকে কি আদায় করা যেতে পারে।

সফরনৎধযরসহড়সধহ@ুধযড়ড়.পড়স

No comments

Powered by Blogger.