সরকার ফুটন্ত কড়াই থেকে পালাতে ব্যস্ত ॥ ফখরুল- ‘অর্থমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার পর মন্ত্রিসভার পদত্যাগ করা উচিত ছিল’

দেশে নানামুখী জট পাকিয়ে বর্তমান সরকার এখন ফুটন্ত কড়াইয়ে অবস্থান করছে এবং সেখান থেকে পালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ক্ষমা চাওয়ার পর নৈতিক কারণে ওই মুহূর্তেই সরকারের পদত্যাগ করা উচিত ছিল।


শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বুয়েটে অস্থিরতার পেছনে বিএনপির ইন্ধন রয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের এমন অভিযোগ নাকচ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাঁদের কাছে এমন তথ্যও ছিল যে, আমরা সচিবালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বোমা মেরেছি। অথচ সংসদ ভবনের সামনে বিরোধীদলীয় চীফ হুইপকে পেটানো হলো তার কোন খবর সরকার রাখে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার দেশকে পরনির্ভরশীল, অকার্যকর করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ আওয়ামী লীগ জনরোষে পড়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করতে জানে। তাই এ সরকারকে হটিয়ে জনগণ একদিন তাদের বিজয় ছিনিয়ে আনবে। তাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে ক্ষমা চাওয়ায় আমরা মর্মাহত হয়েছি। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমি সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি। অথচ আমাদের দেশে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সম্মানের। অর্থমন্ত্রী হিসেবে সাইফুর রহমান কিংবদন্তি ছিলেন। তাঁর সময়ে দেশে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের উচ্চ মহলের দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতু থেকে বঞ্চিত হলো দেশবাসী। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম বছরে দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন মুখ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করে এবং সাবেক আমলাদের দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে চমক দেয়। কিন্তু তাদের সাড়ে তিন বছরের দুর্নীতির কারণে দেশের মানুষের এখন মোহ ভেঙ্গে গেছে। এ সরকার বুয়েটসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং পুঁজিহীন মানুষের পুঁজি তৈরির ব্যবস্থা করেছে গ্র গ্রামীণ ব্যাংক। কিন্তু এই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে সরকার সহ্য করতে পারে না। অথচ এ সরকার ভারতের নোবেল বিজয়ীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সম্মানিত করছে।
এনপিপি সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নিলুর সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনম এহছানুল হক মিলন, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ইসলামিক পার্টির সভাপতি আব্দুল মবিন, লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আব্দুল লতিফ নেজামী, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সভাপতি খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ প্রমুখ।
চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি নেতাদের ওপর হামলার নিন্দা ॥ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের মনে ভীতি সঞ্চারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার চিরাচরিত ফ্যাসিবাদী কায়দায় নানামুখী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরই ধরাবাহিকতায় শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতির বাসা থেকে মিটিং করে ফেরার পথে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান বুলা এবং আলমডাঙ্গা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। তিনি অবিলম্বে চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি নেতাদের ওপর হামলাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
শুক্রবার প্রদত্ত এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার দেশকে বিরাজনীতিকরণ এবং কেবলমাত্র নিজেদের একদলীয় রাজনীতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার নীলনকশার অংশ হিসেবে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে বাধা প্রদান, পুলিশ এবং সরকারের লালিত সন্ত্রাসী যুবলীগ-ছাত্রলীগের গু-াদের লেলিয়ে দিয়ে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, খুন, জখম, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাটের মতো বীভৎস অপকর্মের মাধ্যমে দেশে এক অরাজক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারকে লাঠি ও বন্দুকের নলের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করছে কেবলমাত্র নিজেদের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে দেয়া যায় না। তিনি বলেন, শত বাধা ও জুলুম-নির্যাতন করেও বর্তমান সরকার জনবিস্ফোরণের হাত থেকে বাঁচতে পারবে না।

No comments

Powered by Blogger.