ক্রেডিট কার্ডের পাওনা আদায়ে বেপরোয়া কিছু শীর্ষ ব্যাংক- হিজড়া ও ভদ্র পোশাকধারী সন্ত্রাসী বাহিনী লালন ॥ অর্থমন্ত্রীর কাছে ভুক্তভোগীদের চিঠি by শাহ্ আলম খান

গ্রাহকের কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ডের পাওনা আদায়ে কিছু ব্যাংক আন্ডারগ্রাউন্ড সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে। সেবা প্রদানের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বেপরোয়া আচরণ করা হচ্ছে গ্রাহকের সঙ্গে। একদিকে অতিরিক্ত সুদ ও নিয়মবহির্ভূত চার্জ আরোপ তো হচ্ছেই অপরদিকে রুলস অব বিজনেস ভঙ্গ করে শীর্ষ কয়েকটি ব্যাংক কনজ্যুমার লোন কিংবা ক্রেডিট কার্ডের টাকা রিকোভারি টিমে তথাকথিত ভদ্র পোশাকধারী সন্ত্রাসী গ্রুপকে লালন করা হচ্ছে।
এরা সবাই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর আইডিকার্ডধারী ও মাসিক ভিত্তিতে কমিশন পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে একাধিক শীর্ষ ব্যাংক এই কাজে মাসিক ভাতাভুক্ত হিজড়া বাহিনী নিয়োগ করেছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহক কর্তৃক প্রতিকার চেয়ে অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর, ডেপুটি গবর্নর, মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান, সকল গণমাধ্যম সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি বরাবর পাঠানো এক অভিযোগ বার্তায়- এ ধরনের অনৈতিক কর্মকা-ের সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ব্র্যাক ব্যাংক, ইউসিবিএল, ইবিএল ও সিটি ব্যাংকের মতো নামী-দামী ব্যাংকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে প্রকাশ, ব্যাংকগুলোর রিকোভারি টিমের সদস্যদের টাকা আদায়ে নৈতিক স্খলন এখানেই এসে থেমে থাকেনি। তারা নারী ঋণ গ্রহীতার সম্ভ্রমেও হাত দিচ্ছে। নারী-পুরুষও এক্ষেত্রে কোন ভেদাভেদ করা হচ্ছে না। মহিলা গ্রাহকেরা কিস্তি বা সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে ওইসব ব্যাংকের রিকোভারি টিমের পুরুষ সদস্যদের কেউ কেউ মহিলাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার বা একান্ত ঘনিষ্ঠভাবে সঙ্গ পাবার শর্ত সাপেক্ষে টাকা পরিশোধ সহজ করে দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে আসছে। সম্প্রতি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) এই রিকোভারি টিমের সদস্যদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নোংরা এসএমএস দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে।
ভুক্তভোগী এক গ্রাহক জানান, অনেকে লজ্জায় মান-সম্মানের ভয়ে এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হন না। তাদের দাবি, কিস্তি কিংবা পাওনা টাকা আদায়ে ব্যাংকগুলোর এই নোংরা আচরণ বন্ধ করা না হলে হয়ত রিকোভারি টিমের সদস্যদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে সম্ভ্রম রক্ষায় আত্মহননের পথ বেছে নিতে পারেন কোন নারী কিংবা অসহায় কোন গ্রাহক।
এদিকে ব্যাংকগুলোর লোভনীয় প্রচারে ক্রেডিট কার্ড ড্রাগ্সে আসক্ত হওয়ার গ্রাহক সংখ্যা দিনদিনই ভারি হচ্ছে। যদিও এর জন্য গ্রাহকদের ব্যক্তিগতভাবে ধর্না দেয়ার নজির খুবই কম। বরং ব্যাংক সংশ্লিষ্ট শাখার প্রতিনিধিরাই গ্রাহককে অবাস্তব ও লোভনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানের কথা বলে আগ্রহী করে তুলছে এবং তাতেও কাজ না হলে দয়া-দক্ষিণা চেয়ে এই কার্ড হস্তগত করতে বাধ্য করছে। অথচ উল্টোচিত্র ক্রেডিট কার্ড প্রদানের পর। কার্ডটির লিমিট শেষ হওয়া মাত্রই শুরু হয় ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ড ডিভিশনের রিকভারি টিমের সদস্যদের মোবাইল টেলিফোনে তাগিদ। শেষে তাগিদ থেকে রীতিমতো উৎপাত।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীর দেয়া তথ্যমতে, এমনও নজির রয়েছে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ গ্রাহককে দিনে ২০-২৫ বার অযথা কল করে মানুসিক অত্যাচার করা হয়। এক্ষেত্রে রিকভারি টিমের পুরুষ সদস্যের সঙ্গে মহিলা সদস্যরাও পিছিয়ে নেই। এরা বিভিন্ন টেলিফোন নম্বর থেকে কল করে তাগিদের পর তাগিদ দিতে থাকেন। কখনও অকথ্য ভাষায় গালাগাল কিংবা এমন সব উক্তি করে থাকেন যা সম্পূর্ণ নীতি-নৈতিকতার বিরুদ্ধ।
এখানেই শেষ নয়, এরপর শুরু হয় দরজায় কড়ানাড়ার পালা। চাহিদা অনুযায়ী কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর পরই গ্রাহকের মান-সম্মানহানির অসভ্যতা চলতে থাকে রিকভারি টিমের সদস্য কর্তৃক । কলিং বেল টিপতে টিপতে বেল নষ্ট করে ফেলা, চিৎকার চেঁচামেচি, অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে আশপাশের লোকজন জড়ো করাই তাদের প্রধান কাজ। ভুক্তভোগীর মতে, এমন ভাষায় তারা শাসিয়ে যান যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে টেনেহেঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে কাপড় খুলে ফেলা হবে। এতে থানা-পুলিশ করেও লাভ হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। জানানো হয়, তারা থানা, র‌্যাব-পলিশ ম্যানেজ করেই টাকা আদায়ের জন্য এসেছেন। শুধু তাই নয়, ব্যাংকের এমডি তাদের এতটাই ক্ষমতা প্রদান করেছেন যে কেউ তাদের টিকিটি ছুঁতে পারবে না।
এ অবস্থা থেকে বাঁচতে গ্রাহক শেষ পর্যন্ত বাড়ির টিভি, ফ্রিজ, ফার্নিচার, হাড়ি-পাতিল বিক্রি করে তাদের ক্রেডিট কার্ডের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ক্রেডিট কার্ড প্রদানের ক্ষেত্রে যেহেতু যাচাই-বাছাই করেই প্রদান করা হয় এবং এর থেকে আনুপাতিকহারে সুদও আদায় করা হয় তাই খরচকৃত টাকা ১২-২৪ মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করার বিধান রাখা যেতে পারে। এতে করে ক্রেডিট কার্ড গ্রহীতা সহজেই ওই টাকা বা কিস্তি পরিশোধ করতে সক্ষম হবেন।
এর থেকে পরিত্রাণের আরও একটি উপায় উল্লেখ করে শীর্ষ এক ব্যাংকার জানান, ব্যাংকের/অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক ঋণ খেলাপী হলে তার টাকা আদায়ের জন্য বিশেষ আইনে অর্থঋণ আদালত রয়েছে। তেমনিভাবে ব্যাংকের/অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি বা শর্ত পূরণ না করার বা তাদের দ্বারা কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত/রুগ্ন হলে তার জন্য পৃথক বিশেষ আদালত থাকাও এখন সময়ের দাবি হয়ে দেখা দিয়েছে। যেখানে ভুক্তভোগী গ্রাহকও দ্রুত বিচার পেতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে ব্যাংক, অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান এবং গ্রাহকের মামলা একই আদালতে বিচার করার বিধানও চালু করা যেতে পারে বলে তিনি জানান। এটি করা না হলে গ্রাহক ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। যা গ্রাহককে অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যে ফেলবে। তবে এসব কিছুই নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ব্যাংক ও অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের খেয়াল খুশিমত যা মন চাইছে তাই করে যাচ্ছে। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ ঋণ গ্রহীতাকে। এ ধরনের ঘটনা অর্থ মন্ত্রণালয়, দুদক তদন্ত করলেই এর সত্যতা বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে তারা জরুরীভিত্তিতে অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.