বনানীতে গৃহবধূ হত্যার অভিযোগে স্বামী আটক- রাজধানীতে কলেজ ছাত্রীসহ দুই নারীর আত্মহত্যা

রাজধানীর বনানীতে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পুলিশ নিহতের স্বামী সোহাগকে গ্রেফতার করেছে। বনানী ও কাফরুলে কলেজছাত্রীসহ দুই নারী আত্মহত্যা করেছে। এদিকে বাড্ডায় বাসের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত হয়েছে। শুক্রবার পুলিশ ও মেডিক্যাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় বনানী থানাধীন গুলশান নিকেতন ৫ নং গেট এলাকার তোবারক হোসেনের বাড়ি ভাড়াটিয়ার কক্ষ থেকে এলিন জাহান ইমু ওরফে সাথী (২০) নামে এক গৃহবধূকে অচেতন অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে আনে তার স্বামী সোহাগ। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় ঢামেক হাসপাতালের ক্যাম্প পুলিশ সন্দেহজনক কথাবার্তা বলায় নিহতের স্বামী সোহাগকে আটক করে। পরে ভোরে বনানী থানার পুলিশ হাসপাতাল থেকে সাথীর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। জানা গেছে, নিহতের স্বামী সোহাগ মিয়া পার্টটাইম ঠিকাদারির কাজ করত। আটক সোহাগ পুলিশকে জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় বাসা থেকে নিচে দোকানে আসেন। দোকান থেকে বাসায় গিয়ে দেখেন বাসার দরজা ভেতর থেকে আটকানো। পরে ডাকাডাকি করলে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে দেখি, স্ত্রী সাথী ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলে আছে। পরে প্রতিবেশীদের সহায়তা স্ত্রী সাথীকে নামিয়ে তড়িঘড়ি করে প্রথমে স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে যাই। সেখানে থেকে ঢামেক হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক স্ত্রী সাথীকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের মামা মোঃ রফিক ইসলাম পুলিশকে জানায়, দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে সোহাগের সঙ্গে ভাগ্নি সাথীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে ভাগ্নির স্বামী সোহাগ প্রায় সময় বাসায় থাকত। কোন কাজকর্ম করত না। এ নিয়ে ভাগ্নি সাথী তার স্বামী সোহাগকে কাজে যেতে বলত। এতে সোহাগ তার ভাগ্নিকে সাথীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত। তিনি ধারণা করছেন, সোহাগকে কাজের কথা বলায় ভাগ্নি সাথীকে শ্বাসরোধ হত্যা করে থাকতে পারে। এর কারণে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের খালু মুসা তার বাসায় দাওয়াত খাওয়ার কথা। এ জন্য বাসায় পোলাও করা হয়েছে। কাউকে দাওয়াত দিয়ে তো তার ভাগ্নি আত্মহত্যা করতে পারেন না। এদিকে হাসপাতালে রাত সোয়া ১২টায় নিহতের মামা মোঃ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার স্বামী সোহাগের কাথাকাটি হয়। একপর্যায়ে নিহতের আত্মীয় স্বজন সোহাগকে চড় থাপ্পড় মেরে বলে-‘তুই সাথীর হত্যাকারী। পরে ক্যাম্প পুলিশ পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশ সোহাগকে আটক করে। এদিকে শুক্রবার রাত সাড়ে ৪টায় পুলিশ ক্যান্টমেন্ট সিএমএই থেকে মাহফুজা আনাম রিতা (১৮) নামে এক তরুণীর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠায়। পুলিশ জানায়, রিতা বিএফ শাহীন স্কুল এ্যান্ড কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার পিতা মোঃ মেহেদী হাসান বিমান বাহিনীতে কর্মরত। সে কাফরুল থানাধীন বিমান বাহিনীর নিহারীকা আবাসিক এলাকার ১৫৭/ছ নম্বর ফ্ল্যাটে পিতা মাতার সঙ্গে থাকতেন। সেখান থেকে রিতাকে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় উদ্ধার করে সিএমএইচে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কাফরুল থানার এসআই জাকির হোসেন নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, রিতা কলেজের প্রিটেস্ট পরীক্ষায় রসায়ন ও গণিতের ফল আশানুরূপ না হওয়ায় তাকে বকাঝকা করে তার মা। এতে অভিমান করে রিতা রাতের যে কোন সময় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অপরদিকে এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় পুলিশ বনানী থানাধীন মহাখালী টিবি গেটের জিপি চ-২০১ নম্বর তৃতীয় তলা ভবনের নিচতলার ভাড়াটিয়া তন্দ্রা রানী দে (২৫) নামে এক গৃহবধূর লাশ ঢামেক মর্গে পাঠায়। পুলিশ জানায়, নিহত তন্দ্রা বারডেম হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার স্বামী জুয়েল হাওলাদার বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল বৈশাখীর নিউজরুম এডিটর। বানানী থানা সাংবাদিক জুয়েল হালদারের বরাত দিয়ে বনানী থানার এসআই মনিরুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১টায় জুয়েল হাওলাদার তার কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরেন। এ সময় তার স্ত্রী তন্দ্রা সঙ্গে রান্নাকে কেন্দ্র করে বাগ্বিত-া হয়। এক পর্যায়ে দু’জনই ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর ৬টায় দিকে জুয়েল হালদার ঘুম থেকে উঠে দেখেন, তন্দ্রা ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে রয়েছেন। তিনি নিজেই ঝুলন্ত লাশ নামিয়ে বনানী থানায় খবর দেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে তন্দ্রা আত্মহত্যা করেছে। নিহতের পিতার নাম তপন কুমার দে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তন্দ্রা ছিলেন দ্বিতীয়। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকু-ে, স্বামীর বাড়ি খুলনা জেলার রূপসা থানার তালতলা গ্রামে। এ ব্যাপারে বনানী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এ ছাড়া শুক্রবার ভোরে বাড্ডা থানাধীন মেরুল বাড্ডা মাছ বাজারের সামনে তুরাগ পরিবহন নামে একটি বাসের ধাক্কায় শাহীন (২০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার সময় পুলিশ বাসটি আটক করেছে। চালক পালিয়েছে। বাড্ডা থানার ওসি মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, নিহত শাহীন ওই বাজারের এক কুলি ছিলেন। পরে শাহিনের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.