আলোকিত মানুষ হওয়ার প্রত্যাশা by গোলাম মুস্তাফা মুন্না

শুরুতেই শ্রদ্ধেয় আলী যাকেরকে ধন্যবাদ জানাই গত ৩১ আগস্ট তারিখে সমকালের সম্পাদকীয় পাতায় লিখিত তার 'ঈদ এলো ঈদ গেল' শিরোনামের কলামের জন্য। তিনি সে কলামে জাতি হিসেবে আমাদের প্রাচুর্য ও জ্ঞানের মধ্যে যে বিপরীতক্রম সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে সে কথা উলেল্গখ করে নিজের শঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন।


এই বিষয়ে তার এবং আরও অনেকের মতো আমার মাঝেও শঙ্কা কাজ করে। আমাদের বর্তমান সমাজ কাঠামোয় প্রাচুর্য ও জ্ঞানচর্চার মধ্যে যে এক ধরনের বিপরীতমুখী সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে অর্থাৎ প্রাচুর্য বাড়লেও আমরা যে জ্ঞানচর্চায় দিন দিন পিছিয়ে পড়ছি বা বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছি না, বোধকরি সচেতন যে কেউই সে বিষয়ে দ্বিমত হবেন না।
এখন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ প্রায় প্রতিটি শহরেই বিশালাকৃতির শপিংমল গড়ে উঠছে। পোশাক, গহনার পাশাপাশি এই মলগুলোর প্রায় প্রতিটিতেই আলাদা করে কম্পিউটার, মোবাইল তথা ইলেকট্রনিকস পণ্যের জন্য ফ্লোর বরাদ্দ থাকলেও অধিকাংশ শপিংমল ঘুরে সৃজনশীল বইয়ের একটি দোকান আবিষ্কার করা প্রায়ই কঠিন হয়ে যায়। বইয়ের দোকান পাওয়া গেলেও তাও আবার স্কুল, কলেজ, রান্নাবান্নাসহ শিশু পরিচর্যার বইয়ে ভর্তি। অর্থাৎ আমরা আমাদের বিলাসব্যসনের দিকে যে হারে মনোযোগ দিচ্ছি, সেভাবে জ্ঞানচর্চাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। বুকশপ বলতেই যে কোনো সচেতন পাঠকের সামনে স্কুল, কলেজের বইয়ে ভরা একটি গুদামঘর সদৃশ দোকান, যেখানে সৃজনশীল বইয়ের কোনো স্থান নেই। যদিও রাজধানী ঢাকার অবস্থা এ ক্ষেত্রে অনেকটা ভালো। কিন্তু অন্য শহরগুলোর করুণ অবস্থা বর্ণনাতীত। ফলে দুটি জিনিস হচ্ছে : এক. একশ্রেণীর মানুষ বাহ্যিক অন্য সব দিকে উন্নত হয়ে উঠলেও জ্ঞানচর্চায় মাকাল ফলে পরিণত হচ্ছেন। দুই. যারা জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী তারাও তাদের প্রয়োজনীয় রসদ পাচ্ছেন না। ফলে এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ধস নামছে। যাকে শ্রদ্ধেয় আলী যাকের ঈড়ষষধঃবৎধষ উধসধমব হিসেবে ধরে নেওয়ার পক্ষপাতী। আমিও তার সঙ্গে একমত। আমরা এক ধরনের সামগ্রিক অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছি, যার ফলে হয়তো কেউই বুঝতে পারছি না আলোর পরশ কেমন সুখময়। তাই আমি মনে করি, এখনই উপযুক্ত সময়। জাতি হিসেবে জ্ঞানচর্চাহীনতার এই দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের সত্যিকারের জ্ঞানচর্চার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। শুধু পরীক্ষায় পাস বা ডিগ্রি অর্জনের জন্য না পড়ে, সত্যিকারের সৃষ্টিশীল মানুষ হওয়ার জন্যও পড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা সবচেয়ে অগ্রগামী ভূমিকা রাখতে পারে।
পরিশেষে একজন মানুষ চাইলেই সৃজনশীল জ্ঞানচর্চার পথকে কতটুকু প্রসারিত করতে পারেন, শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার তার সবচেয়ে উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত। এ রকম আরও অসংখ্য সায়ীদ স্যারের জন্ম হোক। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হোক আমার স্বদেশ। আসুন জ্ঞানের সঙ্গে থাকি। সৃজনশীল জ্ঞানচর্চা করি। চলুন, আলোকিত মানুষ হই।
য় শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.