সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য সংগঠিত হচ্ছে জঙ্গীরা- বাংলাদেশের কিছু অংশ ও আরাকান রাজ্য নিয়ে স্বতন্ত্র ইসলামী রাষ্ট্র গঠনই লক্ষ্য

সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য দেশে সংগঠিত হচ্ছে জঙ্গীরা। বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের কিছু অংশ এবং মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য নিয়ে একটি স্বতন্ত্র ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করতে চায়।
এই লক্ষ্যে দেশীয় নিষিদ্ধ কিছু জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হিযবুত তাহ্্রীর, হিযবুত তাওহিদ এবং পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গী


সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা, হরকত-উল-জিহাদ, জয়েশই মোহাম্মদ এককাট্টা হয়েছে। তবে এই সংগঠনগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়দা জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কক্সবাজারে জেএমবির আদলে গড়ে ওঠা জঙ্গী সংগঠন জামায়াতে আরাকানের ৯ সদস্য আটকের পর এমন ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে সশস্ত্র বিপ্লবের তথ্য পাওয়া গেছে।’
সংগঠনটির সঙ্গে আল কায়েদার আদর্শিক মিল রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এদের কানেকশনের ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
কক্সবাজারে জঙ্গীদের এই তৎপরতার খবরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ, র‌্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সারাদেশের জঙ্গীদের সাংগঠনিক অবস্থা জানতে মাঠে নেমেছে। পুলিশ সদর দফতরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘সম্প্রতি আরাকান রাজ্যে জাতিগত সহিংস ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় অনেক রোহিঙ্গা দেশে প্রবেশ করেছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন জয়েশই মোহাম্মাদের বাংলাদেশী প্রধান মাওলানা ইউনুসকে আটক করে। তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ হেডকোয়র্টার থেকে নির্দেশনা আসে। এর পর পরই আমরা নজরদারি বাড়াই।’
তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যে আমরা জানতে পারি, কক্সবাজার এলাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জঙ্গী সদস্যরা প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য আসছেন। তারা কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। এর পরই আমরা গোপন বৈঠক করার সময় প্রথমে ৫ জন জঙ্গীকে আটক করি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও ৯ জনকে আটক করা হয়। এদের বর্তমানে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা বাংলানিউজকে আরও বলেন, ‘দেশী-বিদেশী জঙ্গী গ্রুপগুলো এই এলাকায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে এদের ট্রেনিং হয়। এরা সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে।’
তিনি বলেন, ‘এরা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য ও বাংলাদেশের কিছু এলাকা নিয়ে স্বতন্ত্র ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশের জেএমবি, হিযবুত তাহ্্রীর, হিযবুত তাওহিদের সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিকে জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা, হরকত-উল-জিহাদ এবং জয়েশ-ই মোহাম্মদ এক হয়ে এই কাজ করছে। আদর্শিক মিল থাকলেও এদের সঙ্গে আল কায়েদার কানেকশন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
তিনি জানান, সারাদেশে এক সময়ের জেএমবি জঙ্গীরা জামায়াতে আরাকানে প্রধান সমন্বয়ের কাজ করছে।
পুলিশ সুপার সেলিম বলেন, ‘আমরা জঙ্গীদের প্রতিরোধে সব ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শুধু কক্সবাজার নয়, চট্টগ্রাম, বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকা এখন পুরোটাই গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রয়েছে।’
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নওশের আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘কক্সবাজারে জঙ্গী আটকের ঘটনায় রেঞ্জের সব জেলা ও থানা পুলিশকে এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আটককৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে বিদেশী জঙ্গীদের যে যোগাযোগ রয়েছে এটার প্রমাণ পুলিশ পেয়েছে। তবে আল কায়েদার সঙ্গে এদের কানেকশনের বিষয়টি পুলিশ এখনও প্রমাণ পায়নি। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। দেশে জঙ্গীরা যখনই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে, তখনই পুলিশ এদের দমন করেছে।’
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে জঙ্গীদের বিষয়ে পুলিশ হেড কোয়ার্টারের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘কক্সবাজারের ঘটনায় সারাদেশে জঙ্গীদের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম কি তা জানাতে গোয়েন্দা সংস্থাকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান এলাকার ডিআইজি, এসপি এবং সব থানার ওসিকে এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ ৪ জঙ্গীকে আটক করে। এরা হলেন কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুরগিভাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মোঃ আব্দুল্লাহ (২৬), দিনাজপুরের পুরনো বাজার এলাকার মৃত ইব্রাহিমের ছেলে ওমর ফারুক (৩৩) ওরফে কাজী ফারুক ও ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া কোশমাইল গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে আব্দুল মতিন (৩৭)।
এদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই, মোবাইল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও নগদ সাড়ে ১৮ হাজার টাকা। এদের জিজ্ঞাসাবাদের পর পরই রাতে আরও ৯ সদস্যকে আটক করা হয়। আটককৃত সবাইকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.