আওয়ামী লীগ : রাজবাড়ী-২ আসন-এমপিই সব, আর কেউ কিছু না by জাহাঙ্গীর হোসেন

ত প্রায় সাড়ে তিন বছরে চোখে পড়ার মতো রাজবাড়ী-২ আসনের আওতাধীন এলাকায় আওয়ামী লীগের তেমন কোনো কর্যক্রম দেখা যায়নি। এমপি জিল্লুল হাকিম যেসব কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন, তারই নীরব সমর্থন দিতে হয়েছে আমাদের। ভালো হোক আর মন্দ হোক এমপি সাহেব যেভাবে দল চালাচ্ছেন, সেভাবেই চলছে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। বর্তমানে দলের ত্যাগী নেতাদের নেই কোনো মূল্যায়ন। নতুনরা ভিড় জমিয়েছেন তাঁর পাশে। তাঁরাই পাচ্ছেন


সব সুযোগ-সুবিধা। বিষয়টি বলার সাহস পর্যন্ত আমাদের নেই।' রাজবাড়ীর পাংশা, বালিয়াকান্দি ও নবগঠিত কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে এভাবেই দলের বর্তমান অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে তাঁরা আরো বলেন, বর্তমানে নিয়ম রক্ষার মিটিং-সিটিং চলছে। সংগঠনের নেই কোনো কার্যক্রম। এমপির চেয়ে দলে অনেক সিনিয়র নেতা রয়েছেন। তাঁদের কোনো মূল্যায়ন করা তো দূরের কথা, খবর পর্যন্ত নেওয়া হয় না। তা ছাড়া দলের সাংগঠনিক কাজে যাঁরা দক্ষ তাঁদের কাজ করার কোনো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ২০০৪ সালের ২২ এপ্রিল জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়। কিছু জটিলতার কারণে প্রায় ১৮ মাস পর কেন্দ্র জেলা কমিটির অনুমোদন দেয়। সে সময় ৭১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন রাজবাড়ী-২ আসনের এমপি মো. জিল্লুল হাকিম এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী। এরপর আর কোনো কাউন্সিল হয়নি। অন্যদিকে, রাজবাড়ী জেলার পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলার ২৪টি ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড কমিটিগুলোর মধ্যে বেশ কিছু কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে।
দলের একাধিক প্রবীণ নেতা বলেন, টেন্ডার ও চাকরির ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলেও দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা তা পাচ্ছেন না। তা ছাড়া দলীয় কোনো কর্মকাণ্ড না থাকায় বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ঝিমিয়ে পড়েছেন। এ অবস্থার উত্তোরণ না ঘটলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর বিরুপ প্রভাব পড়বে।
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান আলী বিশ্বাস বলেন, ২০০৩ সালের ২৩ অক্টোবর পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে সময় গঠিত ৬৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে ওই কমিটির বেশ কয়েক জন সদস্য মারা গেছেন, কেউ কেউ দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। আবার কেউবা পুরোদমে করছেন ব্যবসা। সারা দেশের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানরা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করলেও তাঁরা এখনো পুরোদমে স্বপদের কাজ করছেন। অথচ অজ্ঞাত কারণে আমাকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে দূরে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, একটি কমিটির মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের টেন্ডার-কাজ ভাগাভাগি করা হয়। তা ছাড়া পাংশা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। একই সঙ্গে কালুখালী উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাংশার মৃগী শহীদ দিয়ান ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, মাঠ পর্যায়ে সংগঠনের অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। তবে যা আছে অন্য যেকোনো উপজেলার চেয়ে ভালো। ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা হতাশার মধ্যে জীবনযাপন করছেন। যে কারণে শিগগিরই ইউনিয়ন কমিটিগুলোর কাউন্সিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রাজবাড়ী-২ আসনের এমপি জিল্লুল হাকিমের নির্দেশেই বর্তমানে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল আমিন বিশ্বাস বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে এ উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয় না। আগামী বছরের মার্চ মাসে উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিল করার কথা রয়েছে। তা ছাড়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের কমিটিগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। যে কারণে দলের মাঠ পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। তিনিও অন্য নেতাদের সুরে সুর মিলিয়ে বলেন, পুরনো এবং ত্যাগী নেতাদের এখন কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। জাসদ, বিএনপিসহ অন্যান্য দল থেকে যোগদান করা নেতারা আছেন এখন মহা সুখে। দলের জেলা পর্যায়ের নেতারা এখন তাঁদের কথায় চলেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। তাই দলের কাছে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। তবে দলের ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন দেখে মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারছি না।'

No comments

Powered by Blogger.