পশ্চিমা বাজারে মন্দা-তৈরি পোশাকের বিকল্প বাজারের দিকে ঝুঁকছেন উদ্যোক্তারা by আবু হেনা মুহিব

তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনৈতিক সংকটের মুখে সেখান থেকে রফতানি আদেশ কমছে। এ কারণে গত কয়েক মাস ধরে রফতানি লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না এ খাত। বাধ্য হয়ে উদ্যোক্তারা বিকল্প রফতানি বাজারের দিকে ঝুঁকছেন। এসব বাজার থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তারা। সরকারের পক্ষ থেকেও নতুন বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও


বিকেএমইএ সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এখন কমবেশি বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রফতানি হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত ২৫টি দেশে নতুন বাজার তৈরি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর যৌথ তৎপরতায় এসব দেশের নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এসব বাজার সুবিধা কাজে লাগাতে পারলে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারনির্ভরতা কিছুটা কমবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর। দীর্ঘ দিন ধরে প্রধান ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয় জার্মানি, তৃতীয় যুক্তরাজ্য এবং পরের অবস্থানে রয়েছে ফ্রান্স। নতুন বাজার সম্প্রসারণে সরকারের প্রণোদনা সহায়তার ঘোষণায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্প্রসারিত হয়েছে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের নতুন বাজার। এর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া. মেক্সিকো, রাশিয়া, আফ্রিকা, ব্রাজিল, মধ্যপ্রাচ্য, জাপান, চীন, থাইল্যান্ড, সিংগাপুর, আর্জেন্টিনা, চিলি, উরুগুয়ে, পর্তুগাল, লাতিন আমেরিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরও কয়েকটি নতুন বাজার।
বাজার সম্প্রসারণে সরকারি উদ্যোগ : রফতানিমুখী পোশাক খাতের জন্য চলতি বাজারের পাশাপাশি নতুন বাজার সম্প্রসারণে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে চলতি মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোয় (এমটিবিএফ) ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন নতুন দেশকে সম্ভাব্য রফতানি বাজার হিসেবে লক্ষ্যভুক্ত করা, এসব বাজারের চাহিদা নিরূপণ এবং বাজারে প্রবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সমীক্ষা পরিচালনা করা। একই উদ্দেশ্যে চলতি অর্থবছরের ১৭৭টি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় বাংলাদেশ অংশ নেবে। নতুন বাজার সম্প্রসারণে রফতানি প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
বাজার সম্প্রসারণে বাধা : নতুন বাজারের বেশিরভাগ দেশেই বাংলাদেশি দূতাবাস না থাকায় রফতানি কার্যক্রম বিঘি্নত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন উদ্যোক্তারা। বর্তমানে জাতিসংঘ সদ্যভুক্ত ১৯৩টি দেশের মধ্যে মাত্র ৩৯টি দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস অথবা কাউন্সিলিং সেন্টার রয়েছে। বাকি ১৫৪ দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস কিংবা কাউন্সিল সেন্টার নেই। বিদেশে কর্মরত মিশনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা এবং আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। অর্ধেকেরও বেশি মিশন তাদের রফতানি লক্ষ্য অর্জনে প্রতি মাসেই ব্যর্থ হচ্ছে। অনেক দেশে দূতাবাস থাকলেও বাণিজ্যিক পরামর্শক না থাকার কারণে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারছেন না অনেক ব্যবসায়ী।
বিজিএমইএ বিকেএমইএর উদ্যোগ : পোশাকশিল্পের নতুন বাজার খুঁজতে প্রতি বছর বিজিএমইএর বিকেএমই প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দেশে মিশন পাঠিয়ে থাকে। রাশিয়া, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারকে টার্গেট করে বিকেএমইএর একটি প্রতিনিধি দল গত দুই মাস ধরে এসব দেশ সফর করেছে। সফরে সরকারি ও বেসকারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে তারা। এসব বাজারে আগামী কয়েক মাসে রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে দাবি করেছে তারা।
বিজিএমইএ সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন সমকালকে জানান, তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার পশ্চিমা বিশ্বের বাজার পরিস্থিতির প্রতি আমরা সার্বক্ষণিক লক্ষ্য রাখছি। পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আামাদের উৎপাদিত পণ্যের মান ও স্টাইলে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া এসব প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি বিকল্প বাজার সন্ধানে কাজ করছি আমরা। যেমন রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকোসহ লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকার বেশকিছু দেশে নতুন বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছি আমরা। ইতিমধ্যে এ কাজে কিছু সফলতাও পেয়েছি। ভারতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধায় রফতানি পুরোদমে এগিয়ে চললে বড় একটা সুবিধা পাওয়া যাবে।
রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইএবি সভাপতি সালাম মুর্শেদী এ প্রসঙ্গে সমকালকে জানান, রফতানি বাজারের জন্য আগে শুধু ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। এখন নতুন নতুন দেশ ও বাজার থেকে অচেনা ক্রেতারাও ছুটে আসছেন। এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল সমকালকে জানান, ১৯৯৭ সাল থেকে রাশিয়ায় জিএসপি সুবিধা বন্ধ রয়েছে। আমরা সফর করে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি, রাশিয়া থেকে জিএসপি সুবিধা চালুর ঘোষণা আসবে। জাপানেও জিএসপি সুবিধা তিন স্তর থেকে ২ স্তরে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ফলে গত বছরের ১৮৫ মিলিয়ন ডলার থেকে এ বছর রফতানি ৫০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.