'তাঁকে সন্তুষ্ট করেই চলতে হয়'

রাজবাড়ী জেলার পাংশা, বালিয়াকান্দি ও নবগঠিত কালুখালী উপজেলার ২৪টি ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে জাতীয় সংসদের রাজবাড়ী-২ আসন গঠিত। আসনটি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য উর্বর ভূমি। তবে এ আসনের চিত্র অনেকটাই ব্যতিক্রমী। ওই এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও সাধারণ শ্রমজীবীরা জানিয়েছেন, এ আসন থেকে যে দলের এমপিই নির্বাচিত হন, তিনি থাকেন ক্ষমতার পাঁচ বছর সময়ে সবার ঊধর্ে্ব। সরাসরি এমপির ছত্রছায়ায়
চলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার নানা ষড়যন্ত্র। যে কারণে যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে সে দলের নেতা-কর্মীরাই তখন থাকেন প্রভাবশালী। মাঠ পর্যায়ে পরাজিত দলের তেমন কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হয় না। অনেক নামিদামি জননেতাও তখন থাকেন পর্দার অন্তরালে। কারো কারো দেখা মেলে কালেভদ্রে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিও খুব বেশি পালিত হতে দেখা যায় না।
তাঁরা আরো বলেন, একক আধিপত্য থাকে ক্ষমতাসীনদের হাতে। এখানে ছোটখাটো মারামারি থেকে শুরু করে বড় রকমের যে কোনো ঘটনাই ঘটুক না কেন এর পেছনে এমপি মহোদয়ের হাত থাকে। টেন্ডার থেকে শুরু করে খালে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করতেও লাগে এমপির পারমিশন। আর থানা পুলিশ যদি জানতে পারে এই ব্যক্তি ক্ষমতাসীন দলের নেতা অথবা এমপির লোক, তা হলে কিছুই করার থাকে না তাদের। এমপি যদি বলেন, বিরোধী দলের অমুক নেতা অথবা অমুক সাংবাদিক আমার কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে তাহলে পুরো থানাই যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই ব্যক্তির বারোটা বাজাতে। হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হোক অথবা একাধিকবার অভিযান চালিয়ে হোক, মাঠছাড়া করতে একটুও অলসতা করে না থানা পুলিশ।
বালিয়াকান্দি ও পাংশা থানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এমপির বাইরে তাঁদের কিছু করার ক্ষমতা নেই। ন্যায় থেকে অন্যায় হোক তাঁর নির্দেশই চূড়ান্ত। কথা না শুনলে থানায় কাজ করা তো দূরের কথা পরদিনই বেডিংপত্র নিয়ে ফিরে যেতে হয় পুলিশ লাইনে। যে কারণে এমপির কথামতো কাজ করাসহ তাঁকে সন্তুষ্ট করেই চলতে হয়। তাঁরা উদাহরণ দিয়ে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে খোদ পাংশা থানাতেই একাধিক ওসিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করা হয়েছে। রাজবাড়ী জেলাতে একাধিক ওসি পদমর্যাদার অফিসার থাকা সত্ত্বেও ওসি তদন্তকে দিয়ে দীর্ঘদিন চালানো হয়েছে এ থানা।
এলাকাবাসী জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলা সদরের কানাইগাড়া এলাকায় যুবলীগের একাধিক নেতার দাপটে দুটি হিন্দু পরিবার হয়েছে ঘরছাড়া। পরে পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ওই যুবলীগ নেতারা দলের কেউ নয় বলেও দাবি করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। একই অবস্থা বিরাজ করছে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে। যাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত নন তাঁরা নামতে পারছেন না মাঠে। দলীয় ক্যাডারসহ পুলিশি নির্যাতনের ভয়ে অনেকেই রয়েছেন নিষ্ক্রিয়।

No comments

Powered by Blogger.