ক্লার্কেই ত্রাতা খুঁজছে অস্ট্রেলিয়া

সাবেকদের কণ্ঠে ধারালো সব কথাবার্তা। হুল ফুটিয়ে চলেছে সংবাদমাধ্যমও। একদমই স্বস্তিতে নেই ভারতীয় ক্রিকেটাররা। স্বাভাবিকভাবেই উল্টো ছবি অস্ট্রেলিয়ায়। সাবেক ক্রিকেটার-সংবাদমাধ্যম সবাই কোরাসে স্তুতি গাইছে দলের। ধন্য ধন্য হচ্ছে মাইকেল ক্লার্ককে নিয়ে। দলের জয়োত্সব বাদ দিয়ে প্রেমিকাকে সঙ্গ দিতে গিয়েছিলেন বলে যে ক্লার্ককে নিয়ে একসময় অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যমেই নিন্দার ঝড় উঠেছে, যে ক্লার্ককে পন্টিংয়ের উত্তরসূরি মানতে আপত্তি


ছিল অনেক সাবেকের; সেই ক্লার্কের মধ্যেই এখন অস্ট্রেলিয়া খুঁজে পাচ্ছে তাদের সত্যিকারের ত্রাতাকে। সিডনির ডেইলি টেলিগ্রাফ টেন্ডুলকারের উইকেট নেওয়ার পর উল্লসিত ক্লার্কের বিশাল ছবি ছাপিয়ে লিখেছে, ‘তিনি করতে পারেন না এমন কিছু কি আছে?’
সর্বশেষ ছয়টি টেস্ট সিরিজের মাত্র একটিতে জয়; টানা দুই অ্যাশেজে হার, সর্বশেষ অ্যাশেজে এক রকম লাঞ্ছিত হওয়া; পরাজয় বিশ্বকাপেও—অস্ট্রেলিয়ার হলুদ সাম্রাজ্যের পতন দেখছিল সবাই। বিশাল রোমান সাম্রাজ্যেরও তো পতন হয়েছিল একদিন। কিন্তু আবারও ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে অস্ট্রেলিয়া। আর তাদের সেই আশাবরি গান শোনাচ্ছেন মাইকেল ক্লার্ক নামের আপাত ছটফটে এক তরুণ, দলের জন্য যিনি ‘নিশ্চিত’ ৪০০ রানের ইনিংসটা জলাঞ্জলি দিতে জানেন।
ক্লার্ক নিজে জানালেন, তিনি প্রস্তুত আরও বড় আত্মোত্সর্গের জন্যও। টেস্টে আরও বেশি মনোযোগ দেবেন বলে টি-টোয়েন্টির মচ্ছবে সাড়া দেননি। অনেক টাকার হাতছানিও টলাতে পারেনি তাঁকে। টি-টোয়েন্টি ছেড়ে অধিনায়ক হওয়ার পর টেস্টে ৮৬.২৫ গড়ে ৮১৯ রান করেছেন। এর মধ্যে আছে চারটি সেঞ্চুরিও।
এবারের বিগ ব্যাশেও না-খেলা ক্লার্কের জন্য টি-টোয়েন্টি না-খেলা একটা ব্রত, ‘আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ানো ছিল আমার সঠিক সিদ্ধান্ত। এতে আমি ওয়ানডে আর টেস্ট ক্রিকেটে বেশি মনোযোগ দিতে পারছি। মনে হয়েছিল, আমার খেলায় আরও উন্নতি করা দরকার, চেষ্টা করা উচিত সে রকম খেলোয়াড় হয়ে ওঠার, যেমনটি আমি চেয়েছি, উচিত নিজেকে যতটুকু সম্ভব ভালো খেলোয়াড় হিসেবে তৈরি করা। জানি না ফল কী বলছে কিংবা গত ১২ মাসে আমার পরিসংখ্যানই বা কী। কিন্তু আমি অনুভব করতে পারি, আমার খেলা ১২ মাস আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। এটা নিশ্চিত।’
ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশে অভিষেক। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক শ্রীলঙ্কা সফরে। দুটো সিরিজেই জয় দিয়ে শুরু করেছেন। অধিনায়কত্ব তাঁকে যেন বাড়তি অনুপ্রাণিত করছে। তবে ক্লার্ক নিজে বলছেন, দুই ক্ষেত্রে পার্থক্য তিনি করতে পারেন না, ‘অধিনায়কত্ব হয়তো আমার ওপর বাড়তি কিছু দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে। তবে আমার খেলায় পরিবর্তন এসেছে, এমনটা মনে হয় না। আসলে গত ১২ মাসে আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি খেলায় উন্নতি করার জন্য। নেটে নতুন বলে আমাদের বোলারদের মুখোমুখি হয়েছি, যাতে টেকনিকটা আরও ভালো হয়। যখন উপমহাদেশ সফরে গেলাম, এর আগে অপ্রস্তুত উইকেটে স্পিনারদের বিপক্ষে অনেক অনুশীলন করেছি, স্পিনের বিপক্ষে যাতে ভালো করতে পারি।’
প্রতিভা যতই থাক, পরিশ্রমের বিকল্প নেই—ক্লার্ক এই বার্তাও ছড়িয়ে দিলেন তাঁর দলের মধ্যে! পার্থে তৃতীয় টেস্ট শুরু ১৩ জানুয়ারি। ভারতও সুযোগ পাচ্ছে বাড়তি পরিশ্রম করে ভুল শুধরে নেওয়ার। তৃতীয় টেস্টে দুই দলেই পরিবর্তন আসছে। রায়ান হ্যারিস ঢুকে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া দলে। সিডনিতে হবে-হচ্ছে করেও না-হওয়া রোহিত শর্মার অভিষেকটা পার্থে নিশ্চিত বলেই জানাচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। এএফপি, ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.