অধিকারের আলোচনা সভা-আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে গুপ্তহত্যার বিচার হওয়া উচিত

০১১ সালে দেশের মানবাধিকার-পরিস্থিতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে গুপ্তহত্যা বা গুম বেড়ে যাওয়া। ২০০৯ সালে দেশে মোট দুটি গুমের ঘটনা ঘটেছিল। ২০১০ সালে তা ১৮ এবং ২০১১ সালে ৩০-এ পৌঁছেছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০১১ তে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিকারের পক্ষ থেকে ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনের ওপর বক্তব্য দিতে


গিয়ে বিশেষজ্ঞরা গুপ্তহত্যার তদন্ত ও বিচার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে করার দাবি জানান। ২০১১ সালে দেশে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনির মাধ্যমে মানুষ মারার ঘটনাও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা গণপিটুনির মুখে অনেককে ঠেলে দিচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দাবির মুখে রাষ্ট্র এ কৌশল (গুপ্তহত্যা) বেছে নিয়েছে।
অধিকারের পক্ষে আদিলুর রহমান প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে জানান, বর্তমান সরকারের আমলে ২০১১ সালে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ঘটেছে। ২০০৯ সালে ১৪৫, ২০১০-এ ১৭৮ ও ২০১১ সালে ২০৬ জন সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালে নারীর প্রতি যৌতুক ও ধর্ষণের মতো সহিংসতা বেড়েছে। ২০০৯ সালে ৩১৯, ২০১০-এ ৩৭৮ ও ২০১১ সালে ৫১৬ জন নারীর ওপর যৌতুক-সহিংসতা ঘটেছে। ২০০৯ সালে ৪৫৬, ২০১০-এ ৫৫৯ ও ২০১১ সালে ৭১১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অধিকারের চেয়ারম্যান সি আর আবরার বলেন, দেশে একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চলছে, এমনটা বলা হলেও কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার দেশে গুপ্তহত্যা বাড়ছে।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হায়দার আকবর খান রনো বলেন, যে কাউকে ধরে নিয়ে গিয়ে র‌্যাব-পুলিশ এখন বলতে পারে, সে সন্ত্রাসী। বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘ক্রসফায়ার কমে গিয়ে যদি দেশে গুম বাড়ে, তাহলে আমাদের উদ্বিগ্ন হতে হয়।’ তথ্যকে তথ্য দিয়ে মোকাবিলা করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক মিজানুর রহমান খান বলেন, এ পর্যন্ত দেশে যে কটি গুপ্তহত্যা হয়েছে, তার বিচারও আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে হওয়া উচিত। বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গত ৪০ বছরে ৪০ হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে।
বার কাউন্সিলের সদস্য জেড আই খান পান্না বলেন, আগে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে নেতানেত্রীরা সারি ধরে দাঁড়াতেন। এখন নবনির্বাচিত সভাপতি ফুলের তোড়া নিয়ে নেতানেত্রীদের সঙ্গে দেখা করতে যান। প্রেসক্লাব, বার অ্যাসোসিয়েশন—এগুলো এখন রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা। সাংবাদিকেরা যত দিন সত্য কথা বলবেন, তত দিন তাঁদের ওপর আক্রমণ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অধিকারের প্রতিবেদন বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল নন। আজ রোববার বিষয়টি তাঁর নজরে আসার পর তিনি এ নিয়ে মন্তব্য করবেন।

No comments

Powered by Blogger.