পণ্য পরিবহনে নতুন রেকর্ড-চট্টগ্রাম বন্দর by সারোয়ার সুমন

ণ্য পরিবহনে নতুন রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। কনটেইনার ও কার্গো উভয় ক্ষেত্রে ২০১১ সালে সর্বাধিক পণ্য ওঠানামা করেছে দেশের প্রধান এ সমুদ্র বন্দরে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ৪৯ হাজার টিইইউএস কনটেইনার বেশি হ্যান্ডেল করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এ বছর কার্গো পণ্যও বেশি এসেছে প্রায় ৯ লাখ টন। টেন্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন টার্মিনালে কাজ দেওয়া, অটোমেশন বাস্তবায়ন হওয়া এবং শ্রম অসন্তোষে বন্দরের কাজ গত বছর বন্ধ না হওয়ার ইতিবাচক প্রভাবে


আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এদিকে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে চূড়ান্ত অপারেটর নিয়োগের কাজ এ বছরে শুরু করা হবে চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন চ্যালেঞ্জ। টার্মিনাল নির্মাণের পরও গত তিন বছরে এখানে চূড়ান্ত অপারেটর নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারেনি নৌ মন্ত্রণালয়। অথচ এ টার্মিনাল পুরোদমে চালু হলে বাড়তি আরও অন্তত ১০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেল করতে পারত চট্টগ্রাম বন্দর। বছরে সরকারের রাজস্বও বাড়ত আরও ২০০ কোটি টাকা।
বেড়েছে বন্দরের সক্ষমতা :বন্দরে ২০০৯ সালে ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১৩টি ইকুইপমেন্ট সংগৃহীত হয়েছে। ২০১০ সালে এসেছে ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ২১টি ইকুইপমেন্ট। ২০১১ সালে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১১টি ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রক্রিয়াধীন আছে আরও ১৭টি ইকুইপমেন্ট আমদানি। ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের হার ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের গতিশীলতা। তাই তো ২০০০-০১ অর্থবছরে কনটেইনার জাহাজের গড় অবস্থান সময় ৬ দশমিক ৩২ দিন থাকলেও ২০০৫-০৬ অর্থবছরে তা কমে এসেছে ৪ দশমিক ৮২ দিনে। আর ২০১০-১১ অর্থবছরে তা আরও কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৬৭ দিনে। চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের ভাতা বাড়িয়ে অসন্তোষ নিরসন করতে পেরেছে মহাজোট সরকার। কর্মচারীদের পোর্ট ডিউটি, পাইলটিং, শিফটিং ও টিফিন ভাতা আগের চেয়ে ২০০ শতাংশ থেকে এক হাজার ১১১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। বেসরকারি ২৮টি শ্রমিক সংগঠনকে এখনও শ্রম আইনে আনতে না পারলেও বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশোধিত নতুন শ্রম আইনে আনা সম্ভব হয়েছে।
এসব কারণে ২০১০ সালে ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪৮ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডেল করা চট্টগ্রাম বন্দর ২০১১ সালে হ্যান্ডেল করেছে ১৩ লাখ ৯২ হাজার ১০৪ টিইইউএস কনটেইনার। আবার ২০১০ সালে চার কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার টন কার্গো পণ্য ওঠানামা করলে ২০১১ সালে করেছে চার কোটি ২০ লাখ ১০ হাজার টন পণ্য।
সাফল্যের নেপথ্যে অটোমেশন ও টেন্ডার :প্রতিষ্ঠার ১২৪ বছর পর অটোমেশনের আওতায় এসেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এ জন্য কনটেইনার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিটিএমএস) নামক ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় চলতি বছর। আবার তেজস্ক্রিয় কিংবা পারমাণবিক পদার্থ যাতে পাচার হতে না পারে সে জন্য ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে 'মেগা পোর্ট ইনিশিয়েটিভ' নামক বিশেষ আরেকটি প্রকল্প। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর সুরক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি গতিশীল হবে। স্বয়ংক্রিয় সিটিএমএস পদ্ধতি চালু হওয়ায় খালাস প্রক্রিয়ার ধাপ কমে গেছে ২৪টি। পোহাতে হচ্ছে না ১৬টি স্বাক্ষর নেওয়ার ঝক্কিও। বন্দরে কনটেইনার রাখার স্থানও বেড়েছে ৫০ শতাংশ। আবার বন্দর ব্যবহারকারীদের খরচও কমবে এখনকার চেয়ে প্রায় অর্ধেক। এদিকে মাসে প্রায় ৩০ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডেল হওয়া সিসিটি ইয়ার্ডে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ দেওয়ায় ১২০০ টাকার কাজ নেমে এসেছে ৩০০ টাকার নিচে।
সংশ্লিষ্টরা যা বলেন :নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, 'চট্টগ্রাম বন্দরে গত তিন বছরে যত উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, তা বিগত ৪০ বছরেও হয়নি। বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর আনওয়ারুল ইসলাম বলেন, 'দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। এখন প্রতি বছর শতকরা গড়ে ১২ থেকে ১৪ ভাগ কনটেইনার বাড়তি হ্যান্ডলিং করছি আমরা।

No comments

Powered by Blogger.