বাল্যবিয়ে মুক্ত এলাকা ঘোষণা by শাহজাহান সোহেল

কাজলী আক্তার, লাইলি খাতুন, অনামিকা আক্তার, সাবানা আক্তার, শারমিন খাতুন ও আমিনা আক্তারের বয়স ৯ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে। ওরা সবাই গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে কাজলী আক্তার ও লাইলি খাতুন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। সাবানা আক্তার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। আর অনামিকা আক্তার, শারমিন খাতুন ও আমিনা আক্তার এবার অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। এই শিশুরা এতদিনে স্বামীর সংসার করত। ওরা হাতে মেহেদি


রাঙিয়ে লাল বেনারসি জড়িয়ে বধূ সেজেছিল। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওদের বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন। সেই সঙ্গে রক্ষা করেছেন ওদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ থেকে। বর্তমানে ওরা আবার বিদ্যালয়ে যাচ্ছে, স্বপ্ন দেখছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর।
জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আমিনা আক্তার ক্ষোর্দ্দকোমপুর বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। ১৩ নভেম্বর আমিনা আক্তারের বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন ইউএনও। একইভাবে ১৮ নভেম্বর আরেক জেএসসি পরীক্ষার্থী মন্দুয়ার মতিয়ননেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী শারমিন আক্তার বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পায়। ২৫ নভেম্বর আমবাগান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী সাবানা আক্তারের বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়। এরপর ৯ ডিসেম্বর ছান্দিয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী লাইলি খাতুনের বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। একই দিন বন্ধ করা হয় মহিষবান্দি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী জেএসসি পরীক্ষার্থী অনামিকা আক্তারের বাল্যবিয়ে। সর্বশেষ ১২ ডিসেম্বর নূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী কাজলী আক্তারের বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মওলা বলেন, সাদুল্যাপুর উপজেলাকে বাল্যবিয়েমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তাই কোনোভাবেই বাল্যবিয়ে হতে দেওয়া হবে না। কারণ একটি পরিবার বিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয়ে যায়। কিন্তু এই বাল্যবিয়ের কারণে রাষ্ট্রের অনেক ধরনের ক্ষতিসাধিত হয়। রাষ্ট্রের আইন সম্পর্কে মানুষ সচেতন না হওয়ায় বাল্যবিয়েসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়াচ্ছে। এ জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। বাল্যবিয়ে বন্ধে কাজ করা উপজেলার সেভ দ্য জেনেসিস সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, সচেতনতার অভাবেই বাল্যবিবাহ রোধ করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এর পরও আমরা বাল্যবিয়ে রোধে ব্যাপকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পাওয়া শিশুরা সবাই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। শুধু সংসারের দুরবস্থা আর সচেতনতার অভাবেই ওদের বাল্যবিবাহ দেওয়া হচ্ছিল। মেয়ে একটু বড় হলেই পরিবার ওদের বোঝা মনে করে যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শাহানাজ আক্তার বলেন, বাল্যবিয়ের কারণে নবজাতক ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো যাচ্ছে না। তাই যেভাবেই হোক বাল্যবিবাহ রোধ করা হবে। সরকার মেয়েদের জন্য স্নাতক পর্যন্ত বিনামূল্যে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছে। সে জন্য কোনো মেয়েকেই এইচএসসি পাস করার আগে বিয়ে দেওয়া উচিত নয়।

No comments

Powered by Blogger.