ফেলানির মৃত্যুর এক বছর অথচ... by গোলাম মওলা সিরাজ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় গত বছরের ৬ জানুয়ারি। ফেলানী হত্যা মিডিয়ায় বলা যায় একটা মৃদু কম্পনও তোলে। দেশের ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এ নৃশংস হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ ওঠে। বাংলাদেশ সরকারের চাপে নিহত ফেলানীর লাশ ৩০ ঘণ্টা পর ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তের ৯৪৭ নং আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৩-এস-এর ভারতীয় বিএসএফ চৌধুরীরহাট ১৮১ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি
কমান্ডার ও বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম ২৭ ব্যাটালিয়নের পক্ষে বিজিবি কাশিপুর কোম্পানির উপস্থিতিতে ফেলানীর লাশ ফেরত দেয় ভারতীয় বিএসএফ। ফেলানী নিহতের ৩০ দিন পর তার বাড়িতে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। পরিবারের শোকের সঙ্গে নিজেও শোকাভিভূত হয়ে ফেলানীর বাবা নুরু মিয়ার হাতে নগদ ৩ লাখ টাকা তুলে দেন তিনি। তারপর ফেলানীর কবর জিয়ারত করেন। জিয়ারত শেষে তিনি বলেন, ফেলানীর মতো আর কাউকে যেন সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে মরতে না হয়_ এ ব্যাপারে উচ্চ মহলে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার, বর্ডার গার্ডের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলাম। ওই দিন বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফেলানীর বাড়ির কাঁচা রাস্তাটিও পাকা করে ফেলানীর নামে নামকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতির এক বছর পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ফেলানীর বাবা নুরু মিয়াকে নাখারগঞ্জ বাজারে ফেলানী স্টোর নামে একটি মুদি দোকান করে দিয়েছিলেন কিছুদিন পর। কয়েক মাস দোকানটি খোলা থাকলেও পরে অভাবের তাড়নায় বন্ধ করে দেন নুরু মিয়া। আজ পর্যন্ত তা বন্ধ। বর্তমান অবস্থা নিয়ে নুরু মিয়া বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া টাকায় কিছু জমি বন্ধক নিয়ে তাতে কৃষি কাজ করে কোনো রকমে চলছি। ভালো কোনো ব্যবসা করার ইচ্ছা থাকলেও তা করতে পারছি না টাকার অভাবে।
সাত-আট বছর আগে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় পাচারকারীরা নিহতের বাবা নুরু মিয়াসহ তার পরিবারকে ভারতের ভূখণ্ডে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তিনি অনেকটা বেগতিক অবস্থায় পড়ে দিলি্লতে দীর্ঘদিন ইটভাটায় কাজ করেন। ইতিমধ্যে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয়। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি শুক্রবার চৌধুরীহাট খেতাবের কুটি সীমান্তের ৯৪৭-এর ৩-এস পিলারের কাছে এসে বর্ডার পার হতে না পারায় পার্শ্ববর্তী বাড়িতে যায়। ভারতীয় স্থানীয় চোরাকারবারিরা জানতে পেরে অর্থের বিনিময়ে কাঁটাতারের বেড়া টপকাতে সহযোগিতা করতে চায়। নিরুপায় নুরু মিয়া রাজি হলে চোরাকারবারিরা বাবা ও মেয়েকে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সারারাত সেখানে তারা থাকে। ভোর সোয়া ৬টায় নুরু মিয়া পার হয়ে এলেও বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় ফেলানী।

No comments

Powered by Blogger.