স্কুলের মাঠে আ.লীগ নেতা কর্মীদের আট দোকান by মুক্তার হোসেন

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মাকুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে পাকা দোকানঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিলে দোকানঘর নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দোকান নির্মাণের ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। তবে দেখেছি, আটটি দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা


কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা এর সঙ্গে আছেন। তাই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাইনি।’ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুনছুর রহমান দাবি করেন, তাঁর নেতৃত্বে দোকান করা হচ্ছে, এটা ঠিক নয়। তিনি কারও কাছ থেকে টাকাপয়সা নেননি। সভাপতি হিসেবে ঘর নির্মাণে বাধা দেওয়া উচিত ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দোকানিরা নিজেরাই খরচ করে ঘর করছেন। তাঁরা সবাই স্থানীয় লোক। তাই বাধা দিইনি।’
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পাকা ইউনিয়নের মাকুপাড়া গ্রামে এটি অবস্থিত। ১৯৮৬ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি সরকারি হওয়ার পর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এর মাঠের সামনের রাস্তাসংলগ্ন জমি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি পাকা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির সরকার ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুনছুর রহমান সেখানে পাকা দোকানঘর নির্মাণ শুরু করেন। সাড়ে সাত ফুট দৈর্ঘ্য ও নয় ফুট প্রস্থের আটটি দোকানঘর বর্তমানে নির্মাণাধীন। এসব দোকান স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী মোহাম্মদ আজিত, আবদুর রাজ্জাক, বিপ্লব আলী, মো. ইদ্রিস, সহিদুল ইসলাম, ইউনুস আলী ও আক্কাছ আলীর নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দোকানিরা দোকানপ্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। তবে এই টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি।
ঘর বরাদ্দ পাওয়া দোকানি মোহাম্মদ আজিত প্রথম আলোকে বলেন, ‘সভাপতি ও নাসির সরকারের নেতৃত্বে দোকানঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা সবাই টাকাপয়সা তাঁদের কাছে জমা দিয়েছি। তাঁদের কাছে খরচের হিসাব-নিকাশ রয়েছে।’
বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘যাঁরা দোকান নির্মাণ করছেন, তাঁরা আমার দলীয় লোক। তবে তাঁরা বেআইনিভাবে নির্মাণ করছেন কি না, তা বলতে পারব না।’
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জমসেদ আলী জানান, দোকানঘর করায় খেলার মাঠ ছোট হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের চলাফেরা ও বিনোদনে সমস্যা হবে। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বুধবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ইয়ামিন খান বলেন, ‘দোকানঘর নির্মাণের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।’ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এ কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার অফিসে এ ধরনের অভিযোগ এসেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখব।’

No comments

Powered by Blogger.