পাবনায় চিরনিদ্রায় শায়িত স্যামসন চৌধুরী by এবিএম ফজলুর রহমান

পাবনায় নিজের খামারবাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন প্রথিতযশা শিল্পপতি, সফল ব্যবসায়ী ও স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী। শনিবার দুপুর ২টায় পাবনা শহরের বৈকুণ্ঠপুর খামারবাড়ি অ্যাস্ট্রাসের পারিবারিক সমাধিস্থলে তাকে সমাহিত করা হয়। এর আগে হাজারো ভক্ত-অনুরাগী তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাংসদ, বিভিন্ন দলীয় নেতৃবৃন্দ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। আয়োজন করা হয় বিশেষ


প্রার্থনারও। সকাল থেকেই পাবনা এবং আতাইকুলায় হাজারো মানুষ ভিড় জমান। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সড়কপথে স্কয়ার হাসপাতালের বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে তার মরদেহ স্মৃতিবিজড়িত আতাইকুলায় আনা হয়। এ সময় তার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রয়াতের স্ত্রী অনীতা চৌধুরী, ছেলে স্যামুয়েল স্বপন চৌধুরী, তপন চৌধুরী, অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু ও মেয়ে রত্না পাত্র মরদেহের সঙ্গে আসেন।
মরদেহ সরাসরি নেওয়া হয় গ্রামের বাড়ি আতাইকুলার সড়াডাঙ্গী ক্যাথলিক চার্চে। সেখানে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রার্থনা শেষে আত্মীয়স্বজন এবং এলাকাবাসীর দেখার জন্য মরদেহ কিছুক্ষণ রাখা হয়।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মরদেহ আনা হয় পাবনায় তার নিজ হাতে গড়া স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসে। পাবনায় আনার পথে মহাসড়কের দু'পাশে হাজারো শোকার্ত মানুষ স্যামসনকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়ে থাকেন। দুপুর ১২টা থেকে মরদেহ রাখা হয় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের আঙিনায়। এখানে স্কয়ার পরিবারের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্যামসন চৌধুরীর মরদেহ পাবনা স্কয়ার প্রাঙ্গণে আনা হলে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। হাজারো মানুষ তাকে একনজর দেখতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলে শ্রদ্ধা নিবেদন। এখানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাংসদ শামসুর রহমান শরিফ ডিলু, পাবনা-৩ আসনের সাংসদ মকবুল হোসেন, পাবনা সদর আসনের সাংসদ গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার শাহাবুদ্দিন চুপ্পু, জেলা পরিষদের প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নু, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট আলহাজ মাহবুবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান, পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু, চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট আলহাজ আবদুল লতিফ বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল রহিম লাল, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তোতা, প্রেস ক্লাব সভাপতি অধ্যাপক শিবজিত নাগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের হাজারো মানুষ ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিরোধীদলীয় নেতার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা শিমূল বিশ্বাসের পক্ষে প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এ সময় হাজারো শোকার্ত মানুষ স্কয়ার ফার্মার বাইরে ভিড় জমান তাদের প্রিয় মানুষটিকে একনজর দেখার জন্য। এ অবস্থায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেশ বেগ পেতে হয়। পরে দুপুর সোয়া ২টার দিকে পাবনা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে কাশিপুর চৌধুরী বাড়ির (অ্যাস্ট্রাস) পারিবারিক সমাধিস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
৫ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপ ও মাছরাঙা টেলিভিশনের চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীর মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
পেশাগত জীবনে ব্যবসার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সভাপতি, এফবিসিসিআইর পরিচালক, মাইডাসের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্র্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বাংলাদেশ পাবলিক লিস্টেড কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন, চেয়ারম্যান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড, ঢাকা ক্লাবের আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ-ফ্রান্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী সদস্য, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (আইসিসিআই) ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি, হারবাল প্রোডাক্টস প্রস্তুতকারক সমিতির প্রেসিডেন্ট, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান, টিআইবির চেয়ারম্যান ও ট্রাস্টিসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যবসায়িক জীবনে স্যামসন চৌধুরী আমেরিকান চেম্বার কর্তৃক বিজনেস এক্সিকিউটিভ অব দ্য ইয়ার, ডেইলি স্টার এবং ডিএইচএল বেস্ট এন্টারপ্রেনার অব দ্য কান্ট্রি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক অ্যাওয়ার্ড, ব্যাংকার্স ফোরাম অ্যাওয়ার্ড, আইসিএবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডসহ ২০০৭ ও ২০০৮ সালে পরপর দু'বছর দেশের সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৫ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক সেরা করদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পান। ২০০৯ এবং ২০১০ সালে সিআইপি মনোনীত হন।

No comments

Powered by Blogger.