বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান-তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যাদের জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যাওয়ার সাধ্য না থাকলেও খায়েশ আছে তারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য বেশি সোচ্চার, যাতে কোনোমতে একবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনতে পারলে ফাঁকফোকড় দিয়ে ক্ষমতাকে আবারও কুক্ষিগত


করা যায়। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে খাল কেটে কুমির আনার দরকার কী? প্রধানমন্ত্রী শনিবার গণভবনে ছাত্রলীগের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও সংগঠনের নিজস্ব ওয়েবসাইটের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ওই সময় যারা ষড়যন্ত্র করেও সফল হতে পারেননি, জনগণের চাপে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তারাই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছেন। 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার', 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার' বলে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছেন_ যাতে নতুনভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা যায়। বিরোধীদলীয় নেতা তাদের সঙ্গেই সুর মেলাচ্ছেন।
মানুষের সেবা ও বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের আদর্শে নিজেদের গড়ে তুলতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতির হারানো ঐতিহ্য, গৌরব ও সম্মান ফিরিয়ে আনতে তাদেরই সচেষ্ট হতে হবে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আগামী দিনে দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দিতে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলেই যে তাকে আবারও ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে_ এর গ্যারান্টি কোথায়? বরং তাকে যে আবারও গ্রেফতার করে জেলে পাঠাবে না তার নিশ্চয়তা কী? বরং তারা আবারও ফাঁকফোকড় দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইবে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চিন্তা বাদ দিয়ে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন আরও শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করুন। তিনি বলেন, এক সময় যারা বলেছিল, পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়, তারাই এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দরদি হয়ে উঠেছেন। বিরোধী দল তো অস্থির হয়ে পড়েছে। বিরোধীদলীয় নেতার মনে রাখা উচিত, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার ছেলেদের কীভাবে উত্তম-মধ্যম দিয়ে দেশছাড়া করা হয়েছে। তাকেও দেশত্যাগে বাধ্য করার ষড়যন্ত্র চলেছে। সে সময় আমি জোর করে দেশে ফিরে না এলে তো তাকে দেশ ছেড়ে চলেই যেতে হতো!
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তার সবই শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে। পঁচাত্তরের পর এক শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আর কোনো সরকারের আমলেই হয়নি। নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে বলেই ওনার (খালেদা জিয়া) মেয়ররা জিতেছেন। সেখানে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকারটা কী?
কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো ভালো কাজ, এমনকি কোনো কিছুই এদের ভালো লাগে না। সরকার কুইক রেন্টাল প্লান্টের মাধ্যমে দ্রুত বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করেছে। অথচ কেউ কেউ এখন সেই বিদ্যুৎ দিয়ে এসি রুমে বসে কত তত্ত্বকথা বের করছেন! এত জ্বালানি তেল ও অর্থ ব্যয় করে কুইক রেন্টালের দরকার কী ছিল বলে নানা তাত্তি্বকতা শোনাচ্ছেন। আমরা যেখানে আলো দিতে চাই, সেখানে তারা অন্ধকারে ফিরে যেতে চায়। এখন যদি আমরা সব কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ করে দিয়ে তাদের অন্ধকারে ফেলে দিই, তখন কী হবে!
ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংগঠনের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের নিজস্ব ওয়েবসাইট িি.িনংষ.ড়ৎম.নফ-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর হাতে সংগঠনের ইনডেক্স ও টেলিফোন নির্দেশিকাও তুলে দেওয়া হয়।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মেহেদী হাসান, ওমর শরীফ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম রবিউল ইসলাম সোহেল, সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক রানা, দক্ষিণের সভাপতি আনিসুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আনিস-উজ-জামান রানাসহ বিভিন্ন ইউনিটের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধসহ সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এক সময় দেশের ছাত্র রাজনীতির সম্মান ও গৌরব ছিল। এর প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসও ছিল। দুর্ভাগ্য, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ছাত্রদের হাতে অবৈধ অস্ত্র ও অর্থ তুলে দিয়ে ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করেছেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগকেই ছাত্র রাজনীতির সেই মর্যাদা, সম্মান, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।
শেখ হাসিনা মহাজোট সরকারের তিন বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরের দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও দুঃশাসনের বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। শিক্ষানীতি ও শিক্ষার উন্নয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপ ছাড়াও শিক্ষা শেষে ছেলেমেয়েরা যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়, সে ব্যবস্থাও করেছি।
তিনি বলেন, আমরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই। যেখানে কোনো সন্ত্রাস ও সেশনজট থাকবে না। ছেলেমেয়েরা সুশিক্ষিত হয়ে ও ভালো ফল করে দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসবে_ সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।

No comments

Powered by Blogger.