ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বোরোর খরচ বাড়ছে ৩০ ভাগ

ক বছরে ডিজেলের দাম ৪ দফায় বেড়েছে লিটার প্রতি ১৭ টাকা, সার, ওষুধ, মজুরির খরচও বেড়েছে আনুপাতিক হারে। চলতি বোরো মৌসুমে তাই কৃষকের উৎপাদন  খরচ বাড়বে শতকরা ৩০ ভাগ। বাড়তি অর্থ ব্যয়ের পরেও বাজারে ধানের দাম কম। অথচ চালের দাম বেশি থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে এ সব তথ্য জানা গেছে। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কানাইডাঙ্গা বিলে কোমলপুর গ্রামের কৃষক সাহাবুদ্দিন সরদার এবার ৩ একর জমিতে বোরা আবাদ করছেন। ইতোমধ্যে, বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬ হাজার টাকা। চারা রোপনে ৯ জন মজুর কাজ করেছেন ৬ দিন। তাদের প্রতিদিন পরিশোধ করতে হয়েছে- ২ হাজার ৭শ টাকা ( প্রতিজন ৩শ টকা হারে প্রতিদিন) সব মিলিয়ে মজুরি বাবদ খরচ হয়েছে তার ১৪ হাজার ২শ টাকা। এ চাড়া সার, ওষুধ ও জমি চাষ বাবদ খরচ হয়েছে আরও ১৫ হাজার টাকা।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ধান ওঠা পর্যন্ত খরচ হবে এখনও  প্রায় ২৫ হাজার টাকা। সব মিলে খরচ দাঁড়াবে ৫৫ হাজার টাকা। গত বছর আমার খরচ হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা।’ জিজেলের মূল্য, কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি সর্বোপরি মজুরের দাম বাড়ায় অতিরিক্ত এ খরচ হবে বলে জানান তিনি।

ভেলকামারী বিলে ১ একর জমিতে বোরো আবাদ করছেন আবুল হোসেন। ডিজেলের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধিতে বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কিত তিনি। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সংসারের অন্যান্য খরচ বেড়েছে।

আবার ডিজেল কীটনাশক, মজুরের দামসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়েছে। কিন্তু ধানের দাম কমেছে। কিন্তু, চালের দাম বাড়তি।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, গত বোরো মৌসুমে তিনি ২ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেন। চাষাবাদের মজুরি, বীজ, সার, কীটনাশক, পরিচর্যাসহ অন্যান্য খাতে তার ব্যয় হয়- ১৯ হাজার ৫শ টাকা। 

বোরো চাষী আবুল হোসেন জানান, এর আগে ২ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদে বীজতলা তৈরি ও চারা উৎপাদনে খরচ ৩ হাজার ৫শ টাকা। চারা রোপনে খরচ ৭ হাজার টাকা। ক্ষেতের পরিচর্যায় খরচ হয়েছে ৬ হাজার ৫শ টাকা। আর ধানকাটা ও মাড়াইয়ে খরচ হয়েছে ৬ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১৯ হাজার ৫শ টাকা। কিন্তু এবার এবার এ খরচ বাড়বে।  এবার ১ একর জমিতে খরচের তালিকা পড়বে বীজতলা তৈরি ও বীজবপন বাবদ সাড়ে ৪ হাজার টাকা, চারা রোপনে    ৮ হাজার টাকা, ক্ষেতের পরিচর্যায় সাড়ে ৮ হাজার টাকা, ধানকাটা ও মাড়াইয়ে ৮ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে খরচ হবে ২৯ হাজার টাকা।
   
এ দিকে ডুমুরিয়া বাজারের কৃষি ভাণ্ডারের মালিক মো. আজাহার উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে সব কীটনাশকে ২০ থেকে ৩০ ভাগ দাম বেড়েছে। ডিজেলের দাম বেড়েছে, দাম বেড়েছে মজুরের। তাই, এবার বোরো আবাদে কৃষকের খরচ অনেক বেশি হবে।

ধানব্যবসায়ী শেখ লতিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘গতবারে বোরো ধান ওঠার সময় মৌসুমে (মে মাস ২০১১) প্রতিমণ ধানের দাম ছিল ১ হাজার ৫০ টাকা। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় এর দাম কমতে শুরু করে। বর্তমানে ১ মণ বোরো ধানের বাজার মূল্য সর্বোচ্চ ৬শ টাকা।’

তিনি বলেন, ‘এবার সবকিছুর দাম বেড়েছে। এতে কৃষকের খরচ বাড়বে। কিন্তু সে তুলনায় কৃষক দাম পাবে না। তাই, কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।’

ডিজেলের খুচরা ব্যবসায়ী ডুমুরিয়া বাজারের মোল্লা আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে জানান, গত বছর জানুয়ারি মাসে এক লিটার ডিজেলের দাম ছিল ৪৪ টাকা, ৫ মে দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ টাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর আরেক দফা বেড়ে এর মূল্য দাড়ায় ৫১ টাকা, একই বছরের ১০ নভেম্বর মূল্য হয় ৫৬ টাকা। এক বছরের মধ্যে ৪র্থ দফায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ টাকা।

তিনি জানান, এক বছরে প্রতি লিটার ডিজেলে দাম বেড়েছে ১৭ টাকা।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এবার বোরো উৎপাদনে কৃষকের সার্বিক খরচ বাড়বে শতকরা ৩০ ভাগ। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, সে তুলনায় বাজারে ধানের মূল্য কম থাকায় কৃষকেরা এবার বোরো আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন। গতবারের চেয়ে এবার সার ডিজেল ও কীটনাশকের খরচ বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ডুমুরিয়া উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমি ( ১ হেক্টর= ২.৪৭ একর)। ইতোমধ্যে, মাত্র ২শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল কাইয়ুম বাংলানিউজকে জানান, জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ হাজার হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে, আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৪শ হেক্টর জমি।

তিনি জানান, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হয়তো টার্গেট পূরণ হবে।

No comments

Powered by Blogger.