ভারতীয় বুড়োদের দিন শেষ!

স্ট্রেলিয়ায় ত্রয়ীর শেষ মোহনা। এই ত্রয়ী ভারতের তিন ব্যাটিং আইকন শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড় আর ভিভিএস লক্ষ্মণ। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম দু'জন আবার সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় শীর্ষ দুটি স্থান দখল করে রেখেছেন। ভারতের মাটি হোক আর অস্ট্রেলিয়ার মাটি হোক, ভিভিএস লক্ষ্মণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সবসময়ই ব্যাট হাতে দারুণ পারফরমার। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। মেলবোর্নে ১২২ রানে হারের পর সিডনিতেও ব্যাটসম্যানদের


অসহায় আত্মসমর্পণে হার ইনিংস ও ৬৮ রানের ব্যবধানে। বড় দুটি হারের পর সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠে গেছে। সত্যিই তারা কি ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের শক্তির উৎস, নাকি বোঝা? বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে টানা ছয় টেস্ট হারার পর এ প্রশ্ন এখন ভারত মহাসাগরের ওপার থেকে ঢেউয়ের তোড়ে আছড়ে পড়ছে ভারতীয় উপমহাদেশের পাড়েও। সাবেক ক্রিকেটার থেকে ক্রিকেটবোদ্ধা_ সবাই বলছেন, ভারতীয় দলে পরিবর্তনের সময় এসেছে। নতুন করে চিন্তা করতে হবে, দল সাজাতে হবে। তাহলেই হয়তো এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে।
শচীন টেন্ডুলকার আর রাহুল দ্রাবিড়_ দু'জনই ৩৯ ছুঁই ছুঁই করছেন। লক্ষ্মণের বয়সও ৩৭। এ তিনজনের কারণেই ভারতীয় ব্যাটিংকে বলা হয় বিশ্বের সেরা ব্যাটিং লাইনআপ; কিন্তু গত বছর ইংল্যান্ড সফর থেকে শুরু করে এ বছর অস্ট্রেলিয়া সফর পর্যন্ত ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কারণে টানা ছয়টি হার। এর মধ্যে আবার তিনটি ইনিংস ব্যবধানে। ইংল্যান্ড সফরে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কারণেই টেস্ট র‌্যাংিকংয়ের শীর্ষস্থান খুইয়ে এসেছে ধোনির দল। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে প্রথম দুই টেস্টের প্রথম তিন ইনিংসে ভারতের রান ২৮২, ১৬৯ ও ১৯১। এ অবস্থায় সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল হিন্দুস্থান টাইমসে লিখেছে, 'ভারতের পরিবর্তন প্রয়োজন। তাদের দলে সিনিয়র বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যান রয়েছেন ঠিক; কিন্তু বারবার একই ভুল করছেন তারা। ইংল্যান্ডে এই ভুল করেছেন। এখন অস্ট্রেলিয়ায়ও পা দিচ্ছেন একই ফাঁদে। এ থেকে তারা বেরিয়েই আসতে পারছেন না। দলকে এ অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে হলে ভিন্ন মনমানসিকতার কাউকে আনতে হবে। সিনিয়রদের এভাবে টানা খেলার সুযোগ দিয়ে নতুনদের দলে আসার সুযোগ নষ্ট করে দিচ্ছে ভারত। নতুনদের আরও অনেক বেশি পরিমাণে সুযোগ করে দিতে হবে।' শততম সেঞ্চুরি থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে শচীন। বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন তিনিও। বেশ কয়েকটি ভালো ইনিংস খেলেছেন গত কয়েক মাসে; কিন্তু সেটাকে তিন অঙ্কের ঘরে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া সফরে এ পর্যন্ত শচীনই ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ২২৬ রান করেছেন। এর মধ্যে ৮০ ও ৭৩ রানের দুটি ইনিংসও রয়েছে। তবুও বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অধিনায়ক কপিল দেব মনে করছেন, দলে থাকারই যোগ্য নন তারা। 'এমন একটি ব্যাটিং লাইনআপ থাকা দরকার যেখানে থাকবে দুর্দান্ত একটি ওপেনিং জুটি; কিন্তু গত কিছু দিন কী দেখছি, শুরুতেই দলের মধ্যে একটা ভীতি ছড়িয়ে দিয়ে এই জুটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।' কপিল দেব মনে করেন, 'সিনিয়রদের এখনই অবসর নেওয়ার সময় হয়ে গেছে। যদি কোনো খেলোয়াড় পারফর্ম করতে না পারে এবং দল যদি জয়ের ধারায় না থাকে তাহলে অতীত ভালো থাকা সত্ত্বেও সিনিয়রদের অবসরে গিয়ে জুনিয়রদের সুযোগ করে দেওয়া উচিত।' সাবেক অধিনায়ক দিলীপ ভেংসরকার টাইমস অব ইন্ডিয়ায় লিখেছেন, 'যেভাবে চলছে, তাতে কেউ জানে না কবে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটবে। সবচেয়ে ভয়ের কথা, আমাদের দলে এমন কেউ নেই যে, এই অবস্থা থেকে তিনি দলকে উদ্ধার করবেন। ভালো সময়টা অতিক্রম করে গেছি মনে হয়। বড় বড় ব্যাটসম্যান বলতে যারা আছেন, তারও এখন বয়সের ভারে নূ্যজ। দু'দশক ধরে শচীনের ওপর নির্ভরতা এক প্রকার দারিদ্রেরই স্বাক্ষর বহন করে।' সাবেক ব্যাটিং আইকন সুনীল গাভাস্কার বলেন, 'ক্রিসমাসের পরই বোঝা গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া নিজেদের ফিরিয়ে আনতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কিন্তু আমাদের ক্রিকেটাররা কী করছে? কেন তারা অনুশীলন না করে বসেছিল?'

No comments

Powered by Blogger.