বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে বিপাকে সরকার by নাজমুল ইমাম

বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যে সরকার ৫ লাখ সংযোগ দিয়েছে। এখনও ৩৫ হাজার আবেদন জমা রয়েছে। প্রতিদিন আরও জমা পড়ছে। সরকারি সূত্র মতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা আছে। বিতরণ লাইনে সীমাবদ্ধতার কারণে খুব দ্রুত এ ৩৫ হাজার সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। ২০১০ সালের নভেম্বর মাস থেকে বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেওয়া শুরু হয়। এ সময়ের মধ্যে সরকার ৫ লাখ আবেদনকারীকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। বাকি ৩৫


হাজার সংযোগ শিগগির দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, দেশের বহু স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ উপকেন্দ্র ওভার লোডেড হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইনও বহু স্থানে জরাজীর্ণ। এগুলো সংস্কার না করা পর্যন্ত ওই সংযোগ দেওয়া যাবে না বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। যেখানে বিতরণ লাইনে এ সমস্যা নেই সেখানে সংযোগ দেওয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সূত্র মতে, বর্তমানে সোলার প্যানেল বসালে নির্দিষ্ট ক্ষমতার
(লোড) বেশি বিদ্যুতের জন্যও নতুন সংযোগ নেওয়া যাচ্ছে। শুধু জরাজীর্ণ বিতরণ ব্যবস্থার কারণে কোনো কোনো এলাকায় গ্রাহকরা মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছেন না। পাঁচটি বিতরণ সংস্থায় এ জাতীয় আবেদনকারীর সংখ্যা ৩৫ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে শিল্পে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ১৮ হাজার ৮৮৭টি আবেদন জমা রয়েছে। বাকি আবেদন আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকের।
শিল্প সংযোগের জন্য জমা থাকা আবেদনগুলোর মধ্যে পিডিবিতে ৮২২টি, আরইবির সমিতিগুলোতে ১৭ হাজার ৪০১টি, ডিপিডিসিতে ২৩২টি, ডেসকোতে ১৭৪টি এবং ওজোপাডিকোয় রয়েছে ২৫৮টি। শুধু নতুন এ শিল্প সংযোগের জন্য বিতরণ সংস্থাগুলোর বাড়তি এক হাজার ৩৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগবে। এরমধ্যে পিডিবির ৩০৬ মেগাওয়াট, আরইবির ৯৪৮ মেগাওয়াট, ডিপিডিসির ১০৫ মেগাওয়াট, ডেসকোর ১২ মেগাওয়াট এবং ওজোপাডিকোর ২৪ মেগাওয়াট অতিরিক্ত লোড লাগবে। সংস্থাগুলোকে বাড়তি বিদ্যুৎ বরাদ্দ করা হলেও শিল্প-কারখানাগুলোয় নতুন সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।
একাধিক ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিক অভিযোগ করেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে সরকারের যতটা দৃষ্টি; বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ততটা নেই। এ কারণে শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া বিতরণ সংস্থাগুলোর মাঠ পর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের গাফিলতি এবং উদ্যোক্তাদের হয়রানি করার মানসিকতার কারণে নতুন সংযোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সোলার প্যানেল বসানো নিয়েও সৃষ্ট জটিলতার কারণে কোনো কোনো শিল্পে সংযোগ আটকে আছে। আবাসিক গ্রাহকরাও এ শর্তের মারপ্যাঁচে অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে বিলম্ব হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন সব শ্রেণীর বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকার পর ২০১০ সালের নভেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট ক্ষমতার বেশি লোডের জন্য শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। গত বছরের মাঝামাঝিতে শর্তসাপেক্ষেই সবার জন্য নতুন সংযোগ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
দেশে মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার ৪৬০ কিলোমিটার বিতরণ লাইনের সাহায্যে গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এ লাইনের কমপক্ষে ৩০ শতাংশই জরাজীর্ণ বলে দাবি করে থাকে বিতরণ সংস্থাগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিপিডিসির কমপক্ষে ৮০০ কিলোমিটার লাইন চরম নাজুক অবস্থায় রয়েছে। খুঁটিসহ এ লাইন বদলাতে খরচ হবে ৪০০ কোটি টাকা। অন্যথায় বছর দুয়েকের মধ্যে এসব লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়বে। অর্থের অভাবে কোম্পানিটি বৃহত্তর সিদ্ধিরগঞ্জ, মাদারটেক, দক্ষিণ মাণ্ডা ও কামরাঙ্গীরচরের অনেক এলাকায় এখন বাঁশ ও কাঠের খুঁটি দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। উপকেন্দ্র নিয়েও কোম্পানিটি সমস্যার মধ্যে রয়েছে। ১০টি এলাকায় উপকেন্দ্র বসানো জরুরি হলেও জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, ডেসকো জায়গা না পাওয়ায় গুলশান ও বনানী এলাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী উপকেন্দ্র স্থাপন করতে পারছে না। অতিরিক্ত লোডের কারণে বিতরণ উপকেন্দ্রগুলো ঝুঁকির মুখেই চলছে। এতে মাঝে মধ্যেই উপকেন্দ্রে যান্ত্রিক সমস্যা ও ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে।
সূত্র মতে, পিডিবির লাইনের প্রায় ৩০ শতাংশই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আরইবির অনেক এলাকার লাইন চরম নাজুক অবস্থায় রয়েছে। জরাজীর্ণ বিতরণ ব্যবস্থা এবং অপর্যাপ্ত ট্রান্সফরমারের কারণে অনেক সমিতিতে নতুন সংযোগ প্রদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ওজোপাডিকোর কমপক্ষে ৪০ শতাংশ লাইন পুরনো ও জরাজীর্ণ। এ কারণে বাড়তি লোড পেলেও অনেক শিল্প কারখানায় নতুন সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.