শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সমাহিত স্যামসন এইচ চৌধুরী by সরোয়ার উল্লাস

‘শৈশবে বাবা শিক্ষা দিয়েছিলেন, যদি বড় হতে চাও অহংকারকে কবর দাও। আমি নিজে এটা মেনেছি, সন্তানদেরও এ শিক্ষাই দিয়েছি।’ ২০০৯ সালের আগস্টে পাবনা প্রেসক্লাবের সম্মানসূচক আজীবন সদস্যপদ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিল্পপতি ও স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী এ কথা বলেন। দেশের অন্যতম এই শিল্পপতি নিজের জীবনের প্রতিটি স্তরে এই কথার স্বাক্ষর রেখেছেন। সাফল্যের শিখরে পৌঁছার পরও অহংকার তাঁকে ছুঁতে পারেনি।


এ কারণে দেশে-বিদেশে তৈরি হয়েছে তাঁর অসংখ্য বন্ধু-গুণগ্রাহী। চিরবিদায়ের সময় আবারও যেন সে কথার প্রমাণ দিয়ে গেলেন তিনি। গতকাল শনিবার বেলা দুইটায় হাজারো মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় পাবনা সদর উপজেলার বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে পারিবারিক সমাধিস্থলে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
গতকাল সকাল থেকেই স্যামসন এইচ চৌধুরীর পাবনার আতাইকুলা গ্রামের পৈতৃক বাড়ি অভিমুখে হাজারো মানুষের ঢল নামে। সকাল সোয়া ১০টায় মরদেহ আতাইকুলার বাড়িতে পৌঁছে। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। পরে মরদেহ বাড়িসংলগ্ন আতাইকুলা চার্চে নেওয়া হয়। সেখানে স্যামসন এইচ চৌধুরীর স্বজনেরা স্মৃতিচারণা করেন।
মেজ ভাই সত্যেন চৌধুরী বলেন, ‘বড় ভাই শুধু ব্যবসায়ী ছিলেন না, তিনি ছিলেন আমাদের বাবার মতো। সব সময় দরিদ্রদের সাহায্য করতেন, ভালোবাসতেন।’ ছোট ভাই সমর চৌধুরী বলেন, ‘বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর বড় ভাই আমাদের অভিভাবকের মতো আগলে রেখেছিলেন।’
স্যামসন এইচ চৌধুরীর ছেলে ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তপন চৌধুরী তাঁর বাবার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চার্চ থেকে মরদেহ নেওয়া হয় স্যামসন এইচ চৌধুরীর প্রথম প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কমপ্লেক্সে। সেখানে পাবনার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে হাজারো মানুষ তাঁর কফিনে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
বেলা পৌনে দুইটার দিকে স্যামসন এইচ চৌধুরীর মরদেহ পাবনা শহরসংলগ্ন সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের খামারবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রার্থনা শেষে দুইটায় স্যামসন এইচ চৌধুরীর মরদেহ সমাহিত করা হয়।
এ সময় তাঁর তিন ছেলে, স্ত্রী, নাতি-নাতনি ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুসহ স্কয়ার গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
শোক: স্যামসন এইচ চৌধুরীর মৃত্যুতে পাবনা প্রেসক্লাব তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে। শহরের অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরিও তিন দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
বিশিষ্ট এই শিল্পপতি গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের র‌্যাফলস হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

No comments

Powered by Blogger.