চট্টগ্রামে মেনন-দেশ ঠিক পথে চলছে না

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘দেশ ঠিক পথে চলছে না। তিন বছরের মাথায় যখন উৎসব করার কথা, তখন জনগণের কাছ থেকে অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। এতে ক্ষোভে, রাগে, দুঃখে, লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়।’ গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গণঐক্য কমিটির সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং


মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশ পরিচালনার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে মেনন বলেন, ‘ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে আমরাই সবচেয়ে বেশি কথা বলেছি। আর এখন লিমনকে ক্রসফায়ারে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এখন ক্রসফায়ার আর গুপ্তহত্যা কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। অথচ বলা হচ্ছে, এখন নাকি আইনশৃঙ্খলা-পরিস্থিতি বিগত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো।’
মেনন বলেন, ‘আমরা অনেক কিছুই পারলাম না, অনেক কিছুই করলাম না। সিন্ডিকেট ভাঙলাম না। দুর্নীতির ও লুটপাটের অর্থনীতির বন্যায় আমরা ভেসে চলে গেলাম।’
সরকার নিয়ে দেশবাসী হতাশ বলে দাবি করে মেনন বলেন, ‘দেশ ঠিক পথে চলছে না। এটা শুধু কোনো পত্রিকার জরিপ নয়। বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে যেখানে মানুষ জড়ো হয়, সেখানেই এ ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ হচ্ছে।’
মেনন আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন করে অন্ধকার দূর করতে গিয়ে জনগণের কাঁধে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যে দায় চাপল, তার দায়িত্ব কে নেবে? অর্থমন্ত্রী বলছেন, আগামী তিন বছর বিদ্যুতের দাম বাড়বে। আর গত এক বছরে জ্বালানির দাম বাড়ল চারবার।’
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিষয়ে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে মেনন বলেন, ‘আদালত রায় দিয়েছেন সংবিধানের গণবিরোধী সংশোধনী বাদ দিতে। কিন্তু আফসোস, জিয়াউর রহমানের বিসমিল্লাহ এবং যে রাষ্ট্রধর্মের বিরুদ্ধে আমরা সবাই আন্দোলন করেছি, তা সংবিধানে রেখে দেওয়া হলো।’
মেনন বলেন, ‘টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে আমরা কথা বলতে পারি না, হাঁটু কাঁপে। যাঁরা টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সমালোচনা করেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তাঁদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। অথচ এ বাঁধ হলে সুরমা, কুশিয়ারাসহ তিনটি নদী শুকিয়ে যাবে।’
মেনন বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখব, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। দুর্নীতি আর লুটপাটের অর্থনীতির বন্যায় আমরা ভেসে গেলাম।’
সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক শাসনব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ মানুষের আশার প্রতিফলন হচ্ছে না। ৫৪টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পার্বত্য চুক্তি সই হয়েছে ১৪ বছর আগে। এখনো তা সেভাবে পড়ে আছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু রাজনৈতিক দল আদিবাসীদের তাদের ভোটব্যাংক বলে মনে করে।
গণঐক্য কমিটির নেতা আনোয়ারুল কবির চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণঐক্য কমিটির আহ্বায়ক পংকজ ভট্টাচার্য, সদস্যসচিব এস এম এ সবুর, ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মোমেন ভূঁইয়া, গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহাদাত হোসেন, পেশাজীবী নেতা সুভাষ চন্দ্র, মিজানুর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে প্রয়োজনে প্রতি জেলায় ট্রাইব্যুনাল বসানোরও দাবি জানান।
জানা যায়, তিন পার্বত্য জেলা থেকে অন্তত ১০টি বাস নিয়ে পাহাড়ি জনগণ সমাবেশে হাজির হয়।

No comments

Powered by Blogger.