নাজিমউদ্দিন একটা শিক্ষা দিয়ে গেলেন

৩৫ বছরের ইতিহাসে টেস্ট ক্রিকেটের অভিজাত আঙিনা তো আর কম জন মাড়াননি। নাজিমউদ্দিনের আগে দুই হাজার ৬৭৮ জন! তার পরও অভিষেকে সেঞ্চুরি করে সোনার হরফে নাম লেখানোর তালিকাটা কতই না ছোট্ট! মাত্র ৯১ জন। সংখ্যাটা ৯২ করার কী অপূর্ব সুযোগই না ছিল বাংলাদেশের এ ওপেনারের সামনে! পারলেন না। উইকেটটি একরকম ছুড়ে দিয়ে এসে নাজিমউদ্দিন কাল আউট হলেন ৭৮ রানে। তার চেয়েও বড় কথা, সেঞ্চুরি মিসের আফসোস


নাকি একদমই পোড়াচ্ছে না তাঁকে! 'আমার প্রথম টার্গেট ছিল ভালো ক্রিকেট খেলার। প্রথম ম্যাচ ছিল বলে আমি একটু নার্ভাস ছিলাম। চেষ্টা করছি ভালো খেলার, দলের জন্য খেলার। সেঞ্চুরি মিস নিয়ে কোনো আফসোস নেই'_কাল দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন নাজিমউদ্দিন। কিন্তু এমন সুযোগ পায়ে দলার পরও আক্ষেপ না থাকে কী করে! আবারও তাই জানতে চাওয়া, ভিন্ন প্রশ্নে নাজিমউদ্দিনের অভিন্ন উত্তর, 'সেঞ্চুরি না পাওয়ায় আফসোস নেই। ওই সময় আউট না হলে হয়তো ইনিংসটা আরো লম্বা হতো। তাতে দলের ও নিজের জন্য ভালো হতো। এই তো...।'
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের স্বপ্নের পরিধি ছোট হয়ে গেছে বলে সমর্থকরা হাহাকার করতে পারেন। তবে এ জন্য নাজিমুদ্দিনকে ঠিক কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটা বোধহয় ঠিক না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন বীরের মতো ফেরার ক্ষণে সেটি তাঁর প্রাপ্য না। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাম্প্রতিক অমানিশায় জোনাকির মতোই যে জ্বলে উঠলেন নাজিমউদ্দিন। প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ১৮৪ রানের লজ্জাজনক হারেও বড় প্রাপ্তি তাই চট্টগ্রামের এ তরুণের প্রত্যাবর্তন।
প্রত্যাবর্তন বলতে প্রত্যাবর্তন! বিদ্রোহী ক্রিকেট লিগ আইসিএলে যোগ দিয়ে সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারের গলা চেপে ধরেছিলেন তিনি বছর তিনেক আগে। নিষিদ্ধ হয়েছেন, ফিরেছেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফরমও করছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের শিকে যেন ছিঁড়ছিল না নাজিমউদ্দিনের। চলতি জাতীয় লিগে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে নির্বাচকদের গুডবুকে উঠে যান। একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ছয়টি হাফ সেঞ্চুরির ঝলমলে ফর্ম, সঙ্গে যোগ করুন জাতীয় দলের টপ অর্ডারের বিবর্ণতা আর ইমরুল কায়েসের ইনজুরি_সব মিলিয়ে সুযোগটা হঠাৎই এসে গেল নাজিমউদ্দিনের সামনে। সেটি দারুণভাবে কাজে লাগালেন প্রথম ইনিংসে ৪১ এবং দ্বিতীয়টিতে ৭৮ রান করে। বিশেষত কাল সকালে ব্যাটিং পাগলামিটুকু বাদ দিলে পুরো ব্যাটিংয়ে ছিল সহজাত টেস্ট ব্যাটসম্যানের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশ দল বিবেচনায় যা ব্যতিক্রম। সেঞ্চুরি মিস করে আফসোস না থাকলেও অমন পারফরম করায় দারুণ উচ্ছ্বসিত নাজিমউদ্দিন।
'সবার স্বপ্ন থাকে, শুরুটা যেন ভালো হয়। আমারও তেমন স্বপ্ন ছিল। আমার একটা স্বপ্ন ছিল টেস্ট খেলা। সেই সুযোগ পাওয়ার পর এখানে ভালো পারফরম করায় আমি গর্বিত'_বলেছেন তিনি। জাতীয় দলে ফেরার সুযোগটা যে অপ্রত্যাশিতভাবে সামনে চলে আসে, সেটিও স্বীকার করেছেন, ২০০৭ সালে টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫০ বলে ৮১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা নাজিমউদ্দিন। সঙ্গে বলেছেন ৮১টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা কতটা সাহায্য করেছে তাঁকে, 'টেস্টের আগেই তো ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট। যত বেশি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলে টেস্টে আসা যায়, ততই ভালো। ওই অভিজ্ঞতাটি আমার তাই কাজে লেগেছে। আর ম্যাচের মধ্যে ছিলাম বলে খেলাটিও হয়েছে সহজ।' বাজে শট খেলে উইকেট বিলিয়ে আসার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এই ওপেনার, '৫০ হয়ে যাওয়ার পর আমি রোমাঞ্চিত হয়ে পড়েছিলাম। এ কারণেই হয়তো ওভাবে শট খেলে আউট হয়ে গেছি।' দলের স্বার্থে যেকোনো জায়গায় ব্যাটিং করার কথাও জানিয়েছেন নাজিমউদ্দিন।
নাজিমউদ্দিনের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা প্রথম দিন শেষেই করেছিলেন কোচ স্টুয়ার্ট ল। কাল অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের কণ্ঠেও অভিন্ন সুর, 'টেস্ট ক্রিকেটে এসে পাকিস্তানের বোলিংয়ের বিপক্ষে নাজিম ভাই সত্যি দারুণ খেলেছেন। অনেক দিন ধরে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে ভালো খেলায় তাঁর ওপর একটা প্রত্যাশা ছিল। সেটি পূরণ করেছেন। আর আমাদের টপ অর্ডারে সমস্যা হচ্ছিল বলে নাজিম ভাইয়ের ভালো খেলাটা আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক।'
নাজিমউদ্দিনের সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার বেপথু হয়ে গিয়েছিল আইসিএলের চোরাবালিতে। চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে আবার শুরু হলো জাতীয় দলে তাঁর পথচলা। একদা যে প্রতিশ্রুতি ছিল, চট্টগ্রামে যে সম্ভাবনা উঁকি দিল_সেই প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ক্যারিয়ার গড়াই এখন নাজিমউদ্দিনের বড় চ্যালেঞ্জ।

No comments

Powered by Blogger.