তালেবানের সঙ্গে আলোচনার খবর মিথ্যা : গিলানি-ন্যাটোর রসদ সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা চলবে

তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার খবর প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান সরকার। তালেবানও সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার খবর প্রত্যাখ্যান করেছে। গত রবিবার তারা জানিয়েছে আগে দেশে ইসলামী শরিয়া আইন চালু করতে হবে। তারপর আলোচনা। এদিকে পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে নিয়োজিত ন্যাটো বাহিনীর জন্য রসদ সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরো কয়েক সপ্তাহ বলবৎ থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন গিলানি।


এরই মধ্যে গত রবিবার পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আটকে থাকা ন্যাটোর তেলের ট্যাংকারে হামলা চালিয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় অস্ত্রধারীরা। এতে একজন মারা গেছে।
আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের বাজাউর উপজাতীয় এলাকার তালেবান কমান্ডার মৌলভী ফকির মোহাম্মদ গত শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, সরকারের সঙ্গে তাঁদের শান্তি আলোচনা চলছে। আলোচনার প্রতি আন্তরিকতা দেখিয়ে সরকার ১৪৫ জন জঙ্গিকে ছেড়ে দিয়েছে। তালেবান যুদ্ধবিরতির অঙ্গীকার করেছে বলেও জানান তিনি। তবে গত রবিবার ইসলামাবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফকির মোহাম্মদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক, 'সরকারের পক্ষ থেকে আমি নিশ্চিত করছি, এ ধরনের কোনো আলোচনা হচ্ছে না।' তবে সহিংসতা ছাড়লে তালেবানের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ আছে বলে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি_'যারাই আত্মসমর্পণ করবে এবং সহিংসতা ছেড়ে দেবে, আমাদের কাছে তারা গ্রহণযোগ্য হবে।' গত রবিবার তাঁর সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করা হয়।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সরকারের উৎখাত ও শরিয়া আইন চালুর দাবিতে ২০০৭ সাল থেকে পাকিস্তানে সহিংসতা চালাচ্ছে তালেবান। গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পাকিস্তান সরকার তালেবানকে 'শান্তি আলোচনা'র সুযোগ দেওয়ার অঙ্গীকার করে।
পাকিস্তানি পত্রিকা ডন গতকাল সোমবার জানায়, রবিবার সংবাদমাধ্যমের কাছে টেলিফোনে শান্তি আলোচনার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন তালেবান মুখপাত্র এহসানউল্লাহ এহসান। শরিয়া আইন চালু না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সরকারের সঙ্গে কোনো শান্তি আলোচনায় যাবেন না বলে জানান তিনি।
এদিকে বাজাউর এলাকায় ফকির মোহাম্মদের নেতৃত্ব নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সেনা অভিযানের মুখে সাম্প্রতিক বছরগুলোর কোনো একসময় তিনি আফগানিস্তানে পালিয়ে গেছেন বলে দাবি উঠেছে। এদিকে মোল্লা দাদুল্লাহ নামের এক জঙ্গি বর্তমানে নিজেকে ওই অঞ্চলের তালেবানপ্রধান বলে দাবি করছেন। টেলিফোন আলাপে দাদুল্লাহও সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার খবর প্রত্যাখ্যান করেছেন। এহসানউল্লাহও দাদুল্লাহকে বাজাউর এলাকার প্রধান বলে নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৬ নভেম্বর পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় ন্যাটোর বিমান হামলায় ২৪ পাকিস্তানি সেনা মারা যায়। হামলাটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে পাকিস্তান তাদের এলাকা হয়ে আফগানিস্তানের ন্যাটো বাহিনীর জন্য রসদ সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ১৭ দিনের এ নিষেধাজ্ঞাকে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের অবরোধ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ নিষেধাজ্ঞা আরো কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে বলে বিবিসিকে আভাস দিয়েছেন গিলানি। ওয়াশিংটনের সঙ্গে কাজের পরিধি নির্দিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গিলানি বলেন, 'পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের পরস্পরকে বিশ্বাস করা উচিত। উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থার ঘাটতি রয়েছে। বিশ্বাস ফিরে পেতে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে হবে।'
এদিকে অবরোধের মধ্যেই ন্যাটোর রসদের বহরে দ্বিতীয়বারের মতো জঙ্গি হামলা হয়েছে। বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটার দক্ষিণ-পূর্বের দাদার শহরে এ হামলা হয়। মোটরসাইকেল আরোহী আট অস্ত্রধারী ন্যাটোর সাতটি ট্যাংকারে গুলি চালায়। এতে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়। একটি ট্যাংকারের চালক মারা যায়। গত বৃহস্পতিবার বন্দুক ও রকেট হামলায় ন্যাটোর ৩৪টি ট্রাক ধ্বংস হয়। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.